অনির্বাণ সেন পর্ব ১ কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে এক বিশাল আবাসন—গ্লাসের বারান্দা, রঙিন আলো, লিফটে ওঠানামার শব্দে ভরা। সেখানকার অষ্টম তলার ফ্ল্যাটে থাকে দত্ত পরিবার। সুদীপ্ত দত্ত একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ অফিসার, মাসের শেষে তার অ্যাকাউন্টে যে বেতন জমে, তাতে অনায়াসেই চলে যায় তাদের তিন সদস্যের সংসার। তার স্ত্রী মৌসুমি, একসময় কলেজে ইংরেজি পড়াতেন, কিন্তু এখন ঘরের দেখাশোনাই তার প্রধান কাজ। মেয়ে ঐশী—নবম শ্রেণির ছাত্রী, পড়াশোনায় মেধাবী, আঁকতে ভালোবাসে, আর মাঝে মাঝে পিয়ানো বাজাতে শিখছে। ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে তাকালে দূরে দেখা যায় আকাশচুম্বী সব টাওয়ার, আর একটু নিচে তাকালেই উল্টো দৃশ্য। ঝুপড়ি ঘরগুলোর ছাউনিতে টিন, কোথাও পলিথিন, কোথাও বা ভাঙা বাঁশ…
-
-
অনিন্দ্য দাশগুপ্ত পর্ব ১: যে মানুষটি নিখোঁজ পুজোর ঠিক আগের বিকেল, আকাশে হালকা সোনালি রোদ। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার এক ফ্ল্যাটবাড়িতে চার তলায় হঠাৎ কোলাহল—”নয়নবাবু কোথায়? ফোন ধরছেন না!” ফ্ল্যাটের দারোয়ান রবীন, পাশের ফ্ল্যাটের মৌসুমীদির সঙ্গে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে আছে। নয়ন ঘোষাল, ৬৮ বছর বয়স, অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কেরানি। প্রতিদিন সকালে বারান্দায় বসে চা খেয়ে ‘আনন্দবাজার’ পড়তেন। ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হতো না, নাতির পড়াশোনা তদারকি করতে হতো না, এমনকিছুই ছিল না তাঁর জীবনজুড়ে। স্ত্রী সুপর্ণা গতবছর চলে গেছেন—স্তব্ধতা ও অভ্যাসের মাঝখানে একা দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি যেন হঠাৎ নেই। “ফোন বন্ধ, দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ নয়। মানে উনি নিজের…
-
রুমা মণ্ডল বাহাদুরপুর গ্রামের শেষ মাথায় যে পুরনো অশ্বত্থ গাছটা দাঁড়িয়ে আছে, তার নিচে প্রতিদিন বিকেলের পর থেকে একজন মেয়ে চুপচাপ বসে থাকে। নাম কেউ জানে না ঠিক, তবে গ্রামের লোকজন তাকে ‘পরী’ বলেই ডাকে। মেয়েটার চেহারায় এমন একরকম মায়া আছে, যেন অনেকগুলো বেদনার রঙে আঁকা হয়েছে তার মুখ, চোখ দুটো এত গভীর যে তাকালেই মনে হয় কিছু একটা হারিয়ে গেছে অনেক দূরে, যা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। গ্রামের ছেলেপুলেরা প্রথমদিকে ভয় পেত ওকে, এমন অচেনা এক মেয়ে, কাঁধে একটা পুরনো ঝোলানো ব্যাগ, কখনো হাসে না, কারও সঙ্গে কথা বলে না, শুধু বসে থাকে। ধীরে ধীরে সবাই ওকে গ্রহণ…