অদ্রিজা চক্রবর্তী শরতের দুপুরটা ছিল অন্যরকম, বাসটা যখন কাঁচা রাস্তা ছেড়ে গোসাইপুরের চৌমাথায় এসে থামল, তখন চারদিকের আলো এক অদ্ভুত নরম সোনালি রঙে ঢেকে গেছে, যেন সূর্য নিজেকে ধীরে ধীরে ভাঁজ করে ফেলছে; শহরের ধুলোভরা গলিপথে এতদিন কাটিয়ে আসা ইলা মাথা উঁচু করে শ্বাস নিল, মনে হলো বুকের ভেতর যেন অচেনা এক স্বচ্ছ বাতাস জমে যাচ্ছে, যার সঙ্গে মিশে আছে কাঁচা ধানের গন্ধ, মাটির ভিজে গন্ধ, আর কোথাও অদৃশ্যভাবে ভেসে আসা কাশফুলের পরাগ; হাতে ছোট্ট ব্যাগ, ভেতরে ক্যামেরা, ডায়েরি, আর কয়েকটা বই—এবারের সফরটা নাকি নিছক অবকাশ নয়, ইলা বলেছিল নিজেকে, ‘এটা কাজের জন্যও’, কিন্তু আসলে সে জানত যে শহরের চাপে…
-
-
স্মিতা সেন বিকেলটা ঘন বর্ষায় ভিজে গিয়েছিল যেন আঁধারের রঙে। দিগন্তজোড়া নীলচে মেঘে ঢেকে থাকা আকাশের তলায়, ঈশান তার হাতের ব্যাগটা টেনে তুলল ট্যাক্সি থেকে নামার সময়। সেই পুরনো বাংলো, যার ছাদে কচুরিপানার পাতার মত শ্যাওলা জমেছে, তার দালানে দাঁড়িয়েই সে প্রথম রূপসীকে দেখেছিল। সে এক অপূর্ব মুহূর্ত। যেন কেউ জলরঙে এঁকে দিয়েছে। মাটি ছোঁয়া শাড়ির প্রান্তটা কাঁধ থেকে খানিকটা পিছলে পড়েছে, ভেজা কেশরাশি কপাল ছুঁয়ে ঝুলছে, আর চোখে সেই চিরচেনা বিষণ্ণতা, যেটা শুধু একাকিত্বের গায়ে জন্মায়। ঈশান চোখ সরাতে পারছিল না। শিল্পী মাত্রেই সৌন্দর্যে হারিয়ে যায়, কিন্তু এই সৌন্দর্যটা যেন ক্যানভাসের বাইরের কিছু—নাড়ি ছোঁয়া, নিঃশ্বাসের মতো বাস্তব। “আপনি নিশ্চয়ই…
-
অন্বেষা সরকার অধ্যায় ১: মেট্রোর নীরবতা কলকাতার সকালগুলো যেন একই গানের একেকটা রেওয়াজ। ঘড়ির কাঁটা আটটা পঁচিশ বাজলেই শহরের বুকে এক অদৃশ্য কম্পন ছড়িয়ে পড়ে—ট্রামের ঘণ্টি, চায়ের দোকানের ধোঁয়া, রাস্তায় ছুটতে থাকা ট্যাক্সি, আর সব কিছুর মাঝে পাতালপুরীর সেই নীল রেললাইন, যেখানে প্রতিদিন নিয়মমাফিক নাম লেখায় লক্ষ লক্ষ যাত্রী। সেই যাত্রীদের মাঝে একজোড়া চোখ থাকে প্রায়ই একই জায়গায়—শিয়ালদহ থেকে শুরু করে মহাত্মা গাঁধী রোড পর্যন্ত, একটি নির্দিষ্ট কোচে, নির্দিষ্ট সময়ে। ঈশান বসু। বাদামি রঙের স্লিং ব্যাগে চেপে ধরা স্কেচবুক আর হেডফোনে বাজতে থাকা হেমন্তের পুরনো গান নিয়েই তার সকাল শুরু হয়। ওর চোখ দুটো সাদা আকাশের মতো, যেন প্রতিদিন কিছু…
-
ঋতুপর্ণা চৌধুরী পর্ব ১: সেই দিনের আলো নীলপাহাড়ের গায়ে রোজ সন্ধ্যে নামে অদ্ভুত এক নরম রঙে। যেন আকাশ নিজেই তার ক্লান্তি গায়ে মেখে পাহাড়ের কোলে শুয়ে পড়ে। সেই রঙের নাম কেউ জানে না, কিন্তু ঊর্মির চোখে সে রঙের ছায়া আজও লেগে থাকে, বছর পেরিয়ে গেছে তবু। শিলারি-গাঁওয়ের গায়ে ছোট্ট কাঠের হোমস্টের বারান্দায় বসে সে দিনভর বই পড়ে। কিন্তু বইয়ের পৃষ্ঠায় শব্দগুলো যেন আবছা হয়ে আসে — যেন বই পড়ছে না, বরং অতীতের পাতাগুলোতেই বারবার হারিয়ে যাচ্ছে। তিন বছর আগে ঠিক এই জায়গাতেই প্রথম দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে — অয়ন। অয়ন, পুরো নাম অয়ন সেনগুপ্ত, ছিল উত্তর কলকাতার ছেলে। পলিটেকনিক কলেজে…