• Bangla - ভূতের গল্প

    অসীমের ঘড়ি

    ঋত্বিক দে অসীম দে শ্যামবাজারের পুরোনো গলির ভেতরে ছোট্ট কিন্তু নামী জুয়েলার্স দোকানের মালিক। বয়স পঁয়ত্রিশের কোঠায়, কিন্তু চোখেমুখে তার বয়সের চেয়ে অনেক বেশি ক্লান্তির ছাপ। ব্যবসাটা তার নিজের তৈরি, বাবার থেকে পাওয়া নয়, তাই দোকানের প্রতিটি শোকেস, প্রতিটি রুপোর গহনা, প্রতিটি কাচের তাকের পেছনে লুকোনো আছে অসীমের বহু বছরের ঘাম আর অভিজ্ঞতা। সে বিশ্বাস করে প্রতিটি রত্নের নিজস্ব ইতিহাস থাকে, প্রতিটি অলঙ্কার এক-একটি অদৃশ্য গল্প বহন করে। তাই যখনই কোথাও কোনো নিলামের কথা শোনে, তার ভেতরে এক অদ্ভুত কৌতূহল জন্ম নেয়। সেই কৌতূহলই তাকে নিয়ে গেল বৌবাজারের এক পুরোনো নিলামঘরে। ভাঙাচোরা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অসীম অনুভব করছিল,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অভিশপ্ত জমিদারবাড়ি

    অদ্বৈত মুখার্জি পর্ব ১ : ফিরে আসা রাত শান্তিপুর গ্রামের মানুষ আজও ভরসা করে না ওই অন্ধকারমাখা গলিটা পেরোতে। গলির শেষে দাঁড়িয়ে থাকা ভাঙাচোরা জমিদারবাড়িটা যেন এক অদৃশ্য ছায়ার মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দিনের বেলা দূর থেকে দেখলেও বুকের ভেতর কেমন চাপা ভয় জমে ওঠে। রাত হলে তো কথাই নেই—নিশ্চুপ নীল অন্ধকারে বাড়িটার ভাঙা চূড়ার ওপর কাক ডেকে ওঠে, কখনো ঝোপের আড়াল থেকে শেয়ালের চোখ জ্বলে ওঠে, আর হাওয়ায় ভেসে আসে এমন এক অজানা গন্ধ, যেটা মানুষে মানুষে ছড়িয়ে দেয় আতঙ্কের গল্প। এই বাড়িরই মালিক ছিল এককালে রাজেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী—শান্তিপুরের জমিদার। গাঢ় লাল রঙের ইট, ঝলমলে ঝাড়বাতি, আর অন্দরমহলে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    রক্তচোখা

    সুদীপ নাগ অধ্যায় ১ অতিথি নয়, আপনজন হিসেবেই ফিরেছিল বিনয় হালদার সুন্দরবনের সেই ঘরটিতে—যেখানে তার শৈশব কেটেছিল, বাপ-ঠাকুর্দার স্মৃতি মিশে আছে গাছের পাতায়, মাটির গন্ধে। শহুরে জীবনের ধকল, চাকরির অনিশ্চয়তা আর মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সে স্থায়ীভাবে ফিরে এসেছিল পৈত্রিক ভিটেয়, সেই নদীঘেরা গ্রামে যেখান থেকে তার পূর্বপুরুষেরা একদিন নৌকা নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে যেত, কাঁকড়া ধরত, গরান কাঠ চেনে ফিরত সন্ধ্যাবেলায়। সঙ্গে এসেছে স্ত্রী নন্দিনী ও সাত বছরের মেয়ে তিতলি। তিনটি মানুষ, তিন রকম মনোভাব নিয়ে ফিরেছে এই ঘরে। বিনয় যেন আশ্বাস খুঁজছিল, জীবনের ক্লান্ত ছন্দে ছুটি চাইছিল; নন্দিনী ফিরছিল সংশয়ে ভরা চোখে, বুকের গভীরে অজানা আতঙ্ক নিয়ে; আর…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চতুষ্পথে দাঁড়িয়ে

    মেঘলা রায় পর্ব ১: সেই চিঠি পূর্ব ক্যালকাটা কর্পোরেশনের ঘিঞ্জি কোয়ার্টার, হরিদেবপুরের বাসা। সেইখানেই প্রতিদিন ঠিক আটটায় ঘুম ভাঙে সৌম্য মিত্রর। ঘুম থেকে উঠেই বাম দিকের দেয়াল ঘেঁষে থাকা পুরনো লোহার আলমারিটা খোলে—চাবি নেই, সরাসরি তালা ভেঙে রাখা। সেই তালার ভেতরেই পুরোনো চিঠিগুলো থাকে, মায়ের লেখা, ভাইয়ের পাঠানো, কয়েকটা সরকারি চিঠি, দু-তিনটে কাটা টিকিট। কিন্তু আজ সকালটা যেন কেমন অন্যরকম। জানলা গলে ঢুকছে একরাশ ঝিরঝিরে ঠান্ডা আলো, যেটা কলকাতার চেনা আষাঢ়ে মেলে না। আর তার ফাঁক দিয়ে, ছেলেবেলায় শোনা মাধবীলতার ঘ্রাণ এসে পড়ছে বিছানার বালিশে। হাতের প্রথম চিঠিটা হলুদ হয়ে যাওয়া খামে মোড়া। উপরে কালো কালিতে বড় বড় হরফে লেখা—সৌম্য…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    পদচিহ্ন

    নিবেদিতা চক্রবর্তী অধ্যায় ১: কুমিরডাঙার বাংলো অরিত্র বসুর মনটা বেশ কয়েক মাস ধরেই ভারী হয়ে আছে। ছবি আঁকার চেষ্টা করলেই মনে হয়, ব্রাশটা যেন বাতাসে দোলা খায়, কিন্তু রঙে ডুবে না। ক্যানভাসে রঙ মিশে যায় ঠিকই, কিন্তু তাতে জীবন থাকে না। তার ভেতরের কিছু যেন চুপ করে বসে আছে, আর তা না জাগলে কিছুই উঠে আসে না ক্যানভাসে। কলকাতার কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে, এক বন্ধুর পরামর্শে সে চলে এল পুরুলিয়ার এক প্রাচীন, নির্জন গ্রামে—কুমিরডাঙা। পাহাড়, জঙ্গল আর অদ্ভুত নীরবতায় ঘেরা এই গ্রাম এখনো যেন কালের গায়ে আঁচড় পড়তে দেয়নি। এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক চলে না, ইলেকট্রিকের তার আসে আবার যায়—আর…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    নবান্নর আগের রাত

    অর্ঘ্য দত্ত আগমন বিকেলের আলো তখনো জমে আছে গাছের পাতায়, যখন শুভম দাস ট্রেন থেকে নামল। ছোট্ট একটা স্টেশন—নাম ‘মাহেশচর’। আশেপাশে ঝিম ধরা সবুজ মাঠ, দূরে একটা নদীর রেখা দেখা যায়, আর ঝাঁক বেঁধে উড়ছে সাদা বক। শুভম শহরের ছেলে, কলকাতার এক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। পিএইচডির বিষয় “লোকজ কৃষিপদ্ধতি ও তার সামাজিক প্রভাব”, আর সেই সূত্রেই আজ এই প্রত্যন্ত জায়গায় তার পদার্পণ। এতটা ভিতরে ঢুকতে হবে, তা আগে আন্দাজ করেনি। স্থানীয় এক শিক্ষকের মাধ্যমে পরিচিত হয়েছে গ্রামের নাম—গোপীনাথপুর, আর সেই গ্রামের পাশেই একটি রহস্যময় ধানখেত, যেখানে প্রতি বছর নবান্নর আগের রাতে কেউ পা রাখে না। স্টেশন থেকে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেই…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    নবগ্রামের রাতবাড়ি

    ঐশী মুখার্জী পর্ব ১: আগমন রাত্রি নামে ধীরে ধীরে, যেমন করে কোনও চেনা মুখে অচেনা ছায়া নেমে আসে। নবগ্রাম যেন শহরের এক ভুলে যাওয়া বাঁক—আলপথে মোড়া, কুয়াশার ভিতর ঢাকা, আর কোনো এক অসমাপ্ত অভিশাপের ভিতর আটকে থাকা একটি গ্রাম। এখানেই থামল ছ’জন তরুণ নাট্যদলের সদস্য—সাগ্নিক, শ্রেয়সী, ঋদ্ধি, অয়ন, তুরীণ আর জয়িতা। তারা এসেছে একটা নাটকের রিহার্সাল করতে, যার জন্য দরকার ছিল এক নির্জন জায়গা, দূরে শহরের কোলাহল থেকে। এই ‘রাতবাড়ি’র কথা জানিয়ে দিয়েছিল তুরীণের মামা, যিনি স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বাড়ির নাম শুনেই একটা কাঁটার মতো কিছু গাঁথা ছিল সাগ্নিকের মনে—“রাতবাড়ি”—মানে কি? রাত হলে বাড়ি জেগে ওঠে, না কি…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ছায়ার নিচে বাড়ি

    শুভ্রনীল দত্ত পর্ব ১: ফিরে আসা বাড়িটার নাম মধুবন কোঠি হলেও সেখানে এখন আর মধু নেই, নেই কোঠির আভিজাত্য। কয়েক দশক আগেও যেখানে চিত্রশিল্পীরা আসতেন রং তুলিতে ধরতে তার সৌন্দর্য, এখন সেখানে কেবল ধুলো, ঝোপঝাড় আর খালি জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া সময়। ঋদ্ধি মেট্রো থেকে নেমে টোটো ধরে পৌঁছাল গ্রামের মোড় পর্যন্ত। বাকিটা হেঁটেই যেতে হবে। এই বাড়িতে সে শেষ এসেছিল আট বছর বয়সে, দাদুর শ্রাদ্ধে। তারপর বাবা-মা বিদেশে চলে গেলে কলকাতায় মামাবাড়িতেই মানুষ হয়েছে। কিন্তু হৃদয়ের এক কোণে এই বাড়িটা যেন মায়ার মতন আটকে ছিল। “আপনি ওখানে যাচ্ছেন?”—টোটোচালক একটু থেমে বলেছিল, নাম শুনেই মুখ অন্ধকার। “হ্যাঁ, মধুবন কোঠি।…

  • Bangla - তন্ত্র

    তামার পায়ের ছায়া

    অরিজিৎ দে পর্ব ১: কুসুমবাড়ির ডাইনি পাহাড়ের কিনারে ছুঁয়ে বইছে জলঢাকা নদী। নদীর পাড়ে একটা গ্রাম—ছোট্ট, চুপচাপ, নাম তার কুসুমবাড়ি। দিনের বেলা গাছেদের ছায়ায় এখানে শিশুরা খেলে, বুড়োরা বিড়ি টানে আর মহিলারা কলতলায় গান ধরে। কিন্তু রাত নামলে? রাত নামলে কুসুমবাড়ি নিঃশব্দ হয়ে যায়। যেন কেউ বা কিছু পুরো গ্রামটাকে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়। এই কুসুমবাড়িতেই এসেছেন কমলিনি বসু। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি লোককাহিনি নিয়ে গবেষণা করছেন। তার বিষয়—“উত্তরবঙ্গের নারী-কেন্দ্রিক অপ্রাকৃত লোককাহিনির সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।” বলতে গেলে, ভূতের গল্প নিয়ে গবেষণা। কিন্তু তিনি বলেন, “আমি গল্প খুঁজি, ভূত না। গল্পের পেছনে লুকিয়ে থাকা সমাজকে দেখাই আমার কাজ।” গ্রামে পৌঁছে তাকে নিয়ে যাওয়া…