অন্বেষা সেন নীল করচা, নীল চোখ বৃষ্টি থেমেছে। ঝাঁঝালো এক নীরবতা জমে আছে নদিয়ার ঠাকুরবাড়ির চারদেয়ালে। বাড়ির ভাঙা ভাঙা বারান্দায় দাঁড়িয়ে শ্রেয়া মনে মনে ভাবল, “সব রহস্যের শব্দ হয় না—কিছু শুধু নীরবতা দিয়ে ডাকে।” তিন দিন ধরে সে এই পুরনো জমিদারবাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গবেষণার বিষয়: “উনবিংশ শতাব্দীর নারীলোকের গোপন আখ্যান ও অলিখিত তান্ত্রিক প্রথা।” ইতিহাস বিভাগ এহেন ‘পপুলার’ বিষয়ে নাক সিঁটকোলেও শ্রেয়ার গবেষণা গতি থামেনি। বরং গতকাল রাতে পুরনো আলমারির পেছনে এক নীল কাপড়ে মোড়া ডায়েরি পেয়ে তার গবেষণা হঠাৎই ধাঁধা হয়ে উঠেছে। আজ সকালে সে ধুলো ঝেড়ে সেই নীল করচা খুলে পড়তে শুরু করে। “শ্রীশ্রী বগলা মহাবিদ্যায় নমঃ। এ…
-
-
সন্দীপন ধর খামে মোড়া নীরবতা রমেশচন্দ্র বসু বসে আছেন জানালার ধারে রাখা সেই পুরনো বেতের চেয়ারে। জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া বিকেলের আলো তার রুপোলি চুলে খেলে যাচ্ছে। মাথার ঠিক পাশেই একটা ছোট কাঠের তাক, সেখানে রাখা তার স্ত্রীর একটা ছবি — মেঘলা শাড়ি, মৃদু হাসি, কপালে ছোট্ট টিপ। নাম ছিল তার — কাবেরী। আজ অনেকদিন পর আবার পোস্টম্যান এসেছিল। লাল-হলুদ ইউনিফর্ম, কাঁধে ব্যাগ। সে বলল, “বসুবাবু, আপনার পেনশনের শেষ চেকটা এসেছে।” রমেশচন্দ্র ধীরে হাত বাড়িয়ে খামটা নিলেন। যেন মৃদু এক স্নেহে ছুঁলেন। এই খামে শুধু টাকা নেই, আছে একটা দীর্ঘ জীবনের সমাপ্তি ঘোষণা। অফিসের শেষ বেতন মাসেরও বেশি…
-
সৃজন ঘোষ পর্ব ১ — শিবু কাকার দোকান ওরা দুজন দুটো আলাদা অফিসে কাজ করে। আলাদা ভবন, আলাদা ফ্লোর, আলাদা ম্যানেজার, আলাদা টাইমশিট—কিন্তু বিকেল তিনটা পঁচিশে দুজন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ে একটাই জায়গায়—শিবু কাকার চায়ের দোকানে। হ্যারিসন রোড আর ব্যাঙ্কশাল স্ট্রিটের সংযোগস্থলে ছোট্ট এক টিনের ছাউনি, তিনটে লাল চেয়ার, একটা কেরোসিন স্টোভ, আর একটা চুন-ছোপ খাওয়া কাঠের বেঞ্চ। এখানেই তুলি রোজ বিকেলে আসে মাথার ব্যথা সারাতে, আর রুদ্র আসে… আগে হয়তো কেবল চায়ের জন্যই আসত, এখন সে নিজেও জানে না ঠিক কেন আসে। তুলির অফিস ‘ইমার্জ ইভেন্টস’-এর তিনতলায়। একঘেয়ে মিটিং, থিম-পিচ, ক্লায়েন্ট ব্রিফ আর ইনস্টাগ্রামের ক্যাপশন নিয়ে সকাল থেকে বেলা পার…
-
সঞ্চারী নাথ মঙ্গলেও চা মঙ্গল গ্রহের লালাভ আকাশের নিচে গড়ে উঠেছিল ‘জিরো-জী টাউন’—ভারতীয় বাঙালিদের প্রথম মহাকাশ উপনিবেশ। মাধ্যাকর্ষণ প্রায় শূন্য, তাই সবকিছু ভাসমান, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। এই শহরের মাঝখানে ভাসমান ছোট্ট এক ক্যাপসুল, যার নাম ‘চা-রকেট’। চন্দন ঘোষ, বয়স তিরিশের কাছাকাছি, ‘চা-রকেট’ চালান। তার বানানো চায়ের স্বাদে মঙ্গলবাসীর হৃদয় জয় করেছে। একদিন বিকেলে, ঝুমুর সেন নামে এক মহাকাশ প্রকৌশলী ‘চা-রকেট’-এ এসে এক কাপ লাল চা অর্ডার করল। ঝুমুর ছিল নতুন পোস্টিং পাওয়া, তার কাজ মহাকাশ ক্রায়োজেনিক রিয়্যাক্টর ঠিক রাখা। তার আগমন চন্দনের জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত, আর সেই ছোট্ট ‘ভাসমান চা’-র দোকানে দুজনের মধ্যে অদ্ভুত একটা টান…
-
পর্ব ১ দেবব্রতের প্রথম রাতের ডিউটি। হাওড়ার পুরনো শিল্পাঞ্চলের এক পরিত্যক্ত টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে সে নিযুক্ত হয়েছে নতুন রাতের প্রহরী হিসেবে। নাম—প্রতুল টেক্সটাইল মিল। মিল বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় তিন বছর, কিন্তু মালিকপক্ষ এখনো জায়গাটা সুরক্ষিত রাখতে চায়—কোনো সরকারি নোটিশ, জমি দখল বা আগুন যেন না লাগে, এইসব ভেবে একজন নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়েছে। নিঃশব্দ এক জায়গা, চারপাশে ভাঙাচোরা কারখানা, পেছনে এক পুরনো জলের ট্যাংকির নিচে গেট ঘর। সন্ধ্যার পরই মিলের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়, শুধু মূল গেটের একটা নীল আলো ছাড়া। সেই আলোয় আজ প্রথম বসেছে দেবব্রত, মাথায় টুপি, পাশে একটা টর্চ আর বিস্কুটের প্যাকেট। নীলকমল কাকু, যিনি চাকরিটা জোগাড়…