• Bangla - ভূতের গল্প

    নবান্নর আগের রাত

    অর্ঘ্য দত্ত আগমন বিকেলের আলো তখনো জমে আছে গাছের পাতায়, যখন শুভম দাস ট্রেন থেকে নামল। ছোট্ট একটা স্টেশন—নাম ‘মাহেশচর’। আশেপাশে ঝিম ধরা সবুজ মাঠ, দূরে একটা নদীর রেখা দেখা যায়, আর ঝাঁক বেঁধে উড়ছে সাদা বক। শুভম শহরের ছেলে, কলকাতার এক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। পিএইচডির বিষয় “লোকজ কৃষিপদ্ধতি ও তার সামাজিক প্রভাব”, আর সেই সূত্রেই আজ এই প্রত্যন্ত জায়গায় তার পদার্পণ। এতটা ভিতরে ঢুকতে হবে, তা আগে আন্দাজ করেনি। স্থানীয় এক শিক্ষকের মাধ্যমে পরিচিত হয়েছে গ্রামের নাম—গোপীনাথপুর, আর সেই গ্রামের পাশেই একটি রহস্যময় ধানখেত, যেখানে প্রতি বছর নবান্নর আগের রাতে কেউ পা রাখে না। স্টেশন থেকে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেই…

  • Bangla - ভ্রমণ

    বালুচরের দিনগুলি

    মালবিকা সেনগুপ্ত   ঢাকার ধুলো-ধোঁয়া আর ট্র্যাফিকের চক্রব্যূহ পেরিয়ে যখন জয়িতা নামল মেঘনাঘাটের ছোট্ট ফেরিঘাটে, তখন সূর্য মাথার উপর একচিলতে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে। চারপাশে জনমানবশূন্য প্রান্তর, দুটো হেমন্তের কাক আর কয়েকটা শুকনো পাতার ঝটপট আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনও শব্দ নেই। ঠিক এইখানেই সে শুট করবে তার নতুন ট্র্যাভেল ভ্লগ: “Unfiltered Bengal”-এর এক বিশেষ পর্ব। “মোবাইল ডেটা কাজ করছে না? নো টাওয়ার?” – ক্যামেরাম্যান শান্তু মাথা চুলকে বলল। জয়িতা মাথা নাড়ল। ও জানত এই চর অঞ্চলে ঢুকলেই নেটওয়ার্ক ঘুমিয়ে যায়, মানুষের শব্দের চেয়ে নদীর শব্দ বেশি জোরালো হয়। “চর বলরামপুর”, গুগল ম্যাপে মাত্র একটা বিন্দু। কিন্তু সেই বিন্দুর মধ্যে যেন সারা…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অমাবস্যার বাড়ি

    দেবায়ুধ পাল গাড়ি থামল কুঁয়োডাঙায় কুঁয়োডাঙা গ্রামের নামটা প্রথম শুনে মনে হয়েছিল কোথাও একটা গভীর কুয়ো আছে—শুধু গভীর না, এমন কিছু একটা যার দিকে তাকালেই গা ছমছম করে ওঠে। সুজয় যখন গাড়ি থামাল, তখন সন্ধে নামছে। পুরো গ্রাম যেন অন্ধকারের গায়ে চাদর মুড়িয়ে বসে আছে। অল্প আলোয় দেখে বোঝা গেল চারপাশে মাটির ঘর, তাল-খেজুর গাছ, আর একটাই পাকাবাড়ি—লাল ইটের একতলা, বন্ধ জানালায় কালো কাঁচ। ওটাই নাকি ‘ওদের’ বাড়ি। সুজয় কলকাতার একজন ছোটখাটো ইউটিউবার। নিজের চ্যানেল ‘ভূতুড়ে বাংলায়’ মাঝেমাঝেই চেনা-অচেনা ভৌতিক জায়গায় গিয়ে ভিডিও তোলে। আজ তার সঙ্গে এসেছে ক্যামেরাম্যান অলোক আর নতুন যুক্ত হওয়া সাউন্ড টেকনিশিয়ান রোহিনী। রোহিনী কিছুটা চুপচাপ…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    তোমাকে দেখেছিলাম বইমেলায়

    নৈঋতা সেন হারানো জিনিস, পাওয়া কবিতা কলকাতা বইমেলা। ফেব্রুয়ারির শেষ বিকেল। বাতাসে পাতা ওড়া, চায়ের গন্ধ, আর সেই চিরচেনা হালকা গুঞ্জন—যা একসঙ্গে উত্তেজনা আর একাকীত্ব বয়ে আনে। অভিজিৎ তাড়াহুড়ো করে ঢুকেছিল মেলার গেট দিয়ে, একহাতে ব্যাগ, অন্যহাতে ফোনে কেউ একজনকে জানাচ্ছিল, “হ্যাঁ রে, আমি ঢুকে গেছি… স্টল নম্বর ৪১ এ আয়, হ্যাঁ, যেখানে ধ্রুব সাহিত্য আছে… ওটা সামনেই।” হঠাৎ একটা ধাক্কা। কে যেন পাশ দিয়ে দ্রুত হেঁটে গিয়ে ওর কাঁধে লেগে গেল। স্যরি বলার সুযোগও দেয় না। আর ওর হাতে থাকা ফোনটা আচমকাই পড়ে গেল মানুষের ভিড়ের মধ্যে। অভিজিৎ নিচু হয়ে খুঁজতে চায়, কিন্তু চারপাশে লোক, হাঁটা, জুতো, ধুলো—সবকিছু মিলিয়ে…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    রঙ বদলানো জানালা

    অনির্বাণ চক্রবর্তী পর্ব ১: আলো এসে পড়ে নয়নপুর শহরের প্রান্তে, সেই লালচে ইটের পুরনো দোতলা বাড়িটা শহরের কোলাহলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বহু বছর ধরে। জংধরা গেট, একপাশে বেঁকে থাকা নারকেল গাছ, ছাদে শুকনো কাপড়ের দুলুনি—সব মিলিয়ে এক ধরনের নিস্তব্ধ নস্টালজিয়া। ওই বাড়ির দোতলায় একা থাকেন সরলা দেবী। বয়স পঁয়ষট্টি পেরিয়েছে, স্বামী মারা গেছেন প্রায় বারো বছর আগে, ছেলেটা থাকে ব্যাঙ্গালোরে। আসা-যাওয়ার ব্যবধানটা বছরে একবারে এসে ঠেকেছে অনেক দিন আগে। সরলা দেবীর দিন কাটে একঘেয়ে রুটিনে—ভোরে উঠে তুলসী তলায় জল দেওয়া, কাকের ডাক শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘোমটা টেনে প্রার্থনা, তারপর পত্রিকা পড়া, রেডিওতে গানের ক্লাসিক, দুপুরে নিঃশব্দ ভাত খাওয়া, আর বিকেল…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    পাহাড়ের ওই পাশে

    রুদ্রনীল ধর পাঁচ বছর পর, চিলেরবস্তি টয় ট্রেনটা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে দিয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। জানালার ধারে বসে ঈশান পাহাড়ের কুয়াশার ভেতর তাকিয়ে ছিল। পাইনগাছগুলো যেন কুয়াশার শরীরে শীতের চাদর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক যেমন তার স্মৃতিতে তীর্থার চোখে ছিল এক ধরনের মেঘলা অভিমান। পাঁচ বছর। সময়টা কম নয়। তবু তার মনে হয় এইতো সেদিন, সে এই চিলেরবস্তির গলিগুলো ধরে হাঁটছিল তীর্থার সঙ্গে। পাথরের সিঁড়ি, পাহাড়ি চা, সন্ধ্যার আগেই ঘনিয়ে আসা অন্ধকার। সেই সব কিছু এখন কেমন একটা আবছা গল্পের মতো লাগে। তীর্থার সঙ্গে দেখা হয়েছিল একেবারে হঠাৎ করে। ঈশান তখন তার মাস্টার্সের রিসার্চ প্রজেক্ট নিয়ে পাহাড়ি পরিবেশ…

  • Bangla - হাস্যকৌতুক

    ভজহরি মামার বউ খোঁজা

    বাপ্পা মণ্ডল পাড়ার সবচেয়ে আজব চরিত্র যদি কেউ হয়, তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে ভজহরি মণ্ডল। বয়স ৪৫ হলেও মনটা আটকে আছে ১৮-তে। বগলে রেডিও, গলায় প্রেমের গান, মুখে রসিকতা—এই হলো তার দৈনন্দিন জীবন। পুরো গ্রাম তাকে চেনে “ভজহরি মামা” নামে—কেউ হাসে, কেউ বিরক্ত হয়, কিন্তু সবাই জানে, তার মত ব্যাচেলর আর হয় না। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই ভজহরির মাথায় চেপে বসে বিয়ের ভূত! “আমি কি বিয়ে করব না?”—এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় এক অসম্ভব মজার, অদ্ভুতুড়ে এবং কখনো কখনো আবেগঘন অভিযান। পর্ব ১: ব্যাচেলর বোম্বা ভজহরি ভজহরি মণ্ডল—এই নামটা শুনলেই গাঁয়ের মানুষদের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। কেউ বলে তিনি পাগল,…