সৌম্য কর ১ গ্রামের নাম আড়বেলিয়া, নদীর ধারে ছোট্ট অথচ প্রাণবন্ত এক বসতি। এখানকার মানুষদের জীবন সহজ, হাসি-ঠাট্টা আর খুনসুটিতে ভরা। এই গ্রামেই জন্মেছে আর বড় হয়েছে শশী—পুরো নাম শশীভূষণ। শশীকে যারা চেনে, তারা জানে সে মনের দিক থেকে একেবারে স্বচ্ছ কাচের মতো, কিন্তু মাথার দিক থেকে মাঝে মাঝেই গুবলেট করে ফেলে। শশীর বোকাসোকা স্বভাব গ্রামে বহুল আলোচিত; কখনো গরুকে খড়ের বদলে নিজের নতুন ধুতি খাইয়ে দিয়েছে, কখনো আবার জমির মাপ নিতে গিয়ে লাঠির বদলে খুপরি দিয়ে দাগ কেটেছে। গ্রামের বৃদ্ধেরা বলেন—“শশী ভালো ছেলে, কোনো খারাপ কাজ করে না, কিন্তু বুদ্ধিটা যেন একটু এদিক-ওদিক।” তবে একথা সবাই মানে—শশীর অন্তর সোনার…
-
-
রূপম মৈত্র অধ্যায় ১: আগমন শুভ হউক সকাল সাড়ে ন’টায় ‘Eastern Cloudwave Solutions’-এর রিসেপশনে এক নতুন মুখ। মাথায় টাক, কপালে লাল চন্দনের তিলক, হাতে রুদ্রাক্ষের মালা, কাঁধে একটি ছোট ব্যাগ, আর গলায় গামছার মতো হলুদ স্কার্ফ। নাম তপন কুমার ওঝা। ড্রয়িং-রুম থেকে উঠে আসা না-খাওয়া বাবাজীর মতো চেহারা দেখে রিসেপশনিস্ট জুয়েলী প্রথমে ভেবেছিল, হয়তো ভুল করে কেউ পুরোহিত ডেকেছে অফিস পুজোর জন্য। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন শীটে নাম দেখে বুঝল, এ তো আজকের নতুন সিস্টেম অ্যাডমিন। “ওঝা বাবু?” বলে একটু হেসে ফেলেছিল সে, কারণ পদবি তো এমনই ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জুয়েলী বুঝে গেল, এই তপন কুমার শুধু নামেই ওঝা নন—মনপ্রাণে তিনি…
-
বিমল রায়চৌধুরী কুলতলি গ্রামের বিকেলটা ছিল একদম শান্ত। হালকা হাওয়া বইছে, নারকেল গাছের পাতারা ঝিরঝির করে দুলছে। গ্রামের প্রধান রাস্তাটা পেরিয়ে বাঁশবাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে আসছেন এক মহিলার ছায়া। সিঁথিতে গাঢ় সিঁদুর, হাতে কাজ করা শাঁখা-পলা, চোখে আত্মবিশ্বাস। আর সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়—তার হাতে চকচকে একটা স্মার্টফোন! হ্যাঁ, উনি আলতা বৌ। পুরো গ্রামের প্রথম মহিলা যিনি নিজে উপার্জন করে কিনেছেন একটা স্মার্টফোন। আজ থেকে দুই মাস আগে সিধু ভাইয়ের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে উনি বলেছিলেন, “দাদা, ফোনটা কতো বলো তো?” সিধু ভাই তো অবাক, “বৌদি, এইটা তেনার ফোন! শহরের লোকেরা চালায়, ফেসবুক-ইউটিউব করে। তোমার কি হবে ও দিয়ে?” আলতা বৌ একগাল হেসে…