• Bangla - ভূতের গল্প

    দূর্গার আঁধার

    গ্রামের কালীমন্দিরে দুর্গাপূজার অষ্টমীর রাত মানেই এক অন্যরকম আবহ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসত এই মন্দিরের পুজো দেখতে। সন্ধ্যা থেকেই মন্দিরের চত্বর আলোয় ভরে উঠেছিল, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের শব্দ, কাশীর বাঁশির সুর আর ধূপকাঠির ধোঁয়া মিলেমিশে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করেছিল। গ্রামের ছোটো থেকে বড়ো সবাই নতুন কাপড় পরে এসেছিল, কেউ প্রণাম দিতে, কেউ আবার প্রতিমা দর্শন করে আনন্দ পেতে। মন্দিরের সামনের উঠোনে তখন নাচগানের আসর বসেছিল, কচিকাঁচারা ধুনুচি হাতে ঘুরছিল আর মায়ের আরাধনায় মেতে উঠেছিল। একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুমুদিনী দেবী, গ্রামের জমিদারবাড়ির বিধবা, তাঁর চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা, যেন উৎসবের আনন্দের ভেতরও কোথাও এক অজানা ভয় তাঁর বুক চেপে ধরেছিল। পুরোহিত…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প - সামাজিক গল্প

    কাগজের ঘুড়ি

    হিমাদ্ৰী ঘোষ ১ বস্তির সকাল সবসময় একরকম শব্দে ভরা—খটাখট হাঁড়ি-বাসনের শব্দ, চায়ের দোকানের কেটলি থেকে উঠতে থাকা সিটি, ভাঙা টিনের চালের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করা সূর্যের লালচে আলো আর তার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা ছোট ছোট শিশুদের কোলাহল। এখানে সকাল মানেই নতুন দিনের লড়াই শুরু। কেউ ভোরেই কাজে বেরিয়ে পড়ে, কেউ বা কুপির আলো নিভিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে রাতভর ইটভাটায় কাজ করে আসার ক্লান্তি নিয়ে। মায়েদের হাঁকডাক আর কিশোরদের কাশি-মেশানো অস্থিরতা মিশে যায় বাতাসে। এর মাঝেই ঘুড়ির নাম উঠলেই বদলে যায় আবহ। যেন এক মুহূর্তের জন্য হলেও দারিদ্র্যের আঁকড়ে ধরা হাতটা আলগা হয়ে যায়, আর আকাশ থেকে নেমে আসে রঙিন আশার…

  • Bangla - কল্পবিজ্ঞান - প্রেমের গল্প

    রোবট কবি

    মৌমিতা রায়  এক ড. অরিন্দম মুখার্জি ছিলেন কলকাতার এক প্রখ্যাত রোবোটিক্স বিজ্ঞানী। বয়স তাঁর মাঝ চল্লিশে হলেও, জীবনের সবটুকু সময় তিনি ল্যাবরেটরির দেয়াল আর অসংখ্য তার, সার্কিট, স্ক্রিনের মধ্যে ডুবে কাটিয়েছেন। বন্ধু-বান্ধব, সাহিত্য, সঙ্গীত—এসব থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলেন তিনি। যুক্তির খোলস আর যান্ত্রিক অনুশাসনের ভেতরেই তাঁর জীবন বন্দি হয়ে গিয়েছিল। ছোটবেলায় কবিতা লেখার একটা শখ ছিল ঠিকই, কিন্তু বিজ্ঞানের টানে তিনি চলে আসেন যন্ত্রের দুনিয়ায়। বছরের পর বছর ধরে তিনি এক অদ্ভুত স্বপ্ন লালন করেছেন—একটা এমন রোবট তৈরি করবেন, যে মানুষের মতো লিখতে পারবে, শুধু সাধারণ ভাষা নয়, শিল্পের ভাষা। কবিতা। তিনি ভেবেছিলেন, যদি যন্ত্রও মানুষের মতো সাহিত্য রচনা…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    জলাশয়ের অপদেবতা

    সৌমিত্র দাশগুপ্ত এক গ্রামের মাঝখান থেকে সামান্য দূরেই এক পুরোনো পুকুর, যার জলে সবসময় যেন এক অদ্ভুত গা ছমছমে নীরবতা ভেসে থাকে। চারপাশে শ্যাওলা জমে যাওয়া ঘাস, মাটিতে শুকনো পাতার স্তূপ, আর ভোরের কুয়াশা পুকুরের ধারে এক ভয়ানক আচ্ছাদন তৈরি করে। গ্রামের মানুষজন দিনের বেলায় সেখানে জল তুলতে যায়, গবাদি পশুকে গোসল করায়, কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই সেই জলাশয়কে এড়িয়ে চলে যায় সকলে। কারণ সেই পুকুরকে ঘিরে রয়েছে বহু বছরের ভয়ঙ্কর কাহিনি। অকারণে সেখানে ডুবে মরেছে গ্রামের মানুষ, কখনও শিশু, কখনও জেলে, কখনও গৃহবধূ। লোকেরা বলে, জলে সাঁতার জানলেও হঠাৎ পা কেঁচে যায়, শ্বাস আটকে আসে, আর চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    অদম্য

    নিবেদিতা বসু অনন্যার শৈশবটা অন্য সবার থেকে আলাদা ছিল। যেখানে বেশিরভাগ মেয়েরা পুতুল সাজাতে, রান্নাবান্না খেলতে কিংবা চকচকে চুলের ফিতেতে মেতে থাকে, সেখানে অনন্যার চোখ জ্বলে উঠত ব্যাট-বলের নাম শুনলেই। পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই তার খেলার সঙ্গী ছিল পাশের গলির ছেলেরা। তারা যখন ক্রিকেট খেলতে মাঠে নামত, অনন্যা কাঁধের ব্যাট ঝুলিয়ে দৌড়ে যেত। প্রথমে ছেলেরা তাকে নিতেই চাইত না, “মেয়েরা খেলতে পারে নাকি?”—এমন ঠাট্টা-বিদ্রুপ হতো নিয়মিত। কিন্তু অনন্যার চোখে এক অদ্ভুত জেদ ছিল, যেন প্রতিটি অবহেলার উত্তর সে ব্যাটের শব্দে দিতে চায়। খেলার সুযোগ না পেলেও সে গলি মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে সবার খেলা দেখত। কারও ব্যাটিং ভেঙে পড়লে,…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    নীলতরঙ্গ

    স্নিগ্ধা চক্রবর্তী এক ভোরের আলো ধীরে ধীরে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে মীরার সিঁথির পাশে খসে পড়া চুলে লেগে যায়। চায়ের কাপে দুধ গরম হওয়ার শব্দ, প্রেসার কুকারের শিস, আর পাশের ঘর থেকে ভেসে আসা অরুণের গম্ভীর কাশি—সব মিলিয়ে ঘরটা যেন এক অদৃশ্য নিয়মে চলছে। অথচ এই শব্দের ভেতরে মীরার মনটা থাকে অন্য কোথাও। হাতের কাজ চলতে থাকে অভ্যাসের মতো, কিন্তু মাথার ভেতর এক ফাঁকা গহ্বর—যেন দিনের শুরু মানেই আরেকটা একই রকম দিনের পুনরাবৃত্তি। সবার জন্য সকালের নাস্তা সাজিয়ে দেওয়ার পরও মনে হয়, কেউ যেন তাকে দেখে না, শোনে না। মীরার কাছে সংসারটা এখন যেন এক অদৃশ্য খাঁচা, যেখানে সে নিজেই…

  • Bangla - তন্ত্র

    রুদ্রসাধক

    দেবায়ন মুখোপাধ্যায় এক পিতার মৃত্যুর পরে বছরখানেক কেটে গেছে, কিন্তু ঋষভের জীবনে সেই শূন্যতা যেন আজও পুরোপুরি ভরেনি। শহরের ব্যস্ততা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ আর বন্ধুদের হাসিঠাট্টার মাঝেও কিছু একটা চুপচাপ গুমরে গুমরে উঠত ভেতরে—একটা অপূর্ণতা, একরকম গোপন আর অজানা অভাব। এবার গ্রীষ্মের ছুটিতে সে ফিরে এসেছে পুরনো বাড়িতে—উত্তর কলকাতার অন্ধকার আর ধূলিধূসর অট্টালিকা, যার প্রতিটি দেয়ালে, জানালায়, এমনকি বাতাসে লেগে আছে সেই মানুষটার ছায়া, যাঁকে সে পুরোপুরি চিনতেই পারেনি কখনও। দেবদ্যুতি সেন—ঋষভের বাবা—ছিলেন এক সময়ের বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত, কিন্তু পরবর্তী জীবনে তাঁর আচরণ হয়ে উঠেছিল রহস্যময়, চাপা, এমনকি ভীতিকরও কিছুটা। নিজের ঘরে একা একা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা, কুঠুরি বন্ধ…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    তাহাদের দেখা হয়েছিল মাঘের শীতে

    ঊর্মি দাশগুপ্ত মাঘ মাসের এক কুয়াশাভরা সকালে বাস থেকে নামল সুদীপ। বোলপুরের পরে আরও চল্লিশ মিনিটের রাস্তা ধরে পৌঁছেছে নদীপারের ছোট্ট গ্রাম ‘চণ্ডীপুর’। ঠান্ডার কামড়ে কাঁপছিল চারদিক, ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির রোদ উঠলেও গলে না। হালকা বাদামি রঙের মাফলার জড়িয়ে সে তাকিয়ে রইল চারপাশে—বাঁশঝাড়, সরু মাটির পথ, আর দূরে গাঁয়ের মাঠে কিছু কাক খুঁটে বেড়াচ্ছে। মোহন কাকার সাইকেলের টুং টাং শব্দে সে ফিরে এল বাস্তবে। “এই তো! পৌছেও গেলে,” মোহন কাকা হাসলেন। মোটা চাদর জড়ানো শরীর আর রুক্ষ গলা, তবে চেহারায় যত্নের ছাপ স্পষ্ট। কলেজে পড়ার সময় সুদীপ একবার এক সেমিনারে তাঁর সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল, তখনই বলেছিলেন—”তুই যদি গ্রাম…

  • Bangla - ভ্রমণ

    সারনাথের সকাল

    অতনু রায়চৌধুরী অধ্যায় ১: নিঃশব্দের পথ বারাণসীতে পৌঁছেছিলাম আগের দিন সন্ধ্যায়। শীতের কুয়াশায় ঢাকা ঘাটগুলো তখন ধূপ আর সান্ধ্য আরতির আলোয় মায়াবী হয়ে উঠেছে। কিন্তু শহরের কোলাহল, ভিড়, আর টানাটানির ভিড়ে কোথাও যেন আমার মন শান্তি খুঁজে পাচ্ছিল না। হোটেলের জানালা দিয়ে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে থেকে রাতটা কেটেছিল। ঘুম এসেছিল, কিন্তু মনটা যেন ঘোরের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলছিল—কোন এক দূর, স্নিগ্ধ স্থানে। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল। হঠাৎ মনে হল, আজ সারনাথ যাওয়া যাক। বারাণসীর কেন্দ্র থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে, যেখানে গৌতম বুদ্ধ প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন করেছিলেন—এই জায়গাটাই যেন ডেকেছিল আমাকে। চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম, অটোতে চেপে বসি। রাস্তার…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    জাদুকরের খুন

    সায়ন্তিকা দাশগুপ্ত অধ্যায় ১: শেষ কৌশলের রাত স্টার থিয়েটারের আলো নিভে যাওয়ার মুহূর্তেই সবার নিঃশ্বাস যেন আটকে গিয়েছিল। কলকাতার থিয়েটার-প্রেমীরা বহুদিন পর আবার এমন চমকপ্রদ কিছু প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছেন—রাজদীপ মুখার্জির “শেষ কৌশল”। থিয়েটারজুড়ে স্তব্ধতা। পর্দা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে, ঘন কালো ধোঁয়ার মধ্যে থেকে উদিত হচ্ছে সোনালী আলো, তার মাঝে একা দাঁড়িয়ে আছেন রাজদীপ—তার মুখাবয়বে এক রহস্যময় আত্মবিশ্বাস, গলায় কোটের কলার তুলে। হাতজোড়া তুলে বললেন, “এই কৌশল দেখার পর যদি কেউ বলতে পারেন কীভাবে করলাম, আমি আমার ম্যাজিক ছাড়বো। আর যদি না পারেন, তবে আজ আপনারা দেখবেন… মৃত্যু থেকে ফেরা যায় কি না!” দর্শকদের ভেতরে কেমন যেন এক অজানা কাঁপুনি…