• Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    অন্ধকার কূপের ডাক

    এক গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে, বাঁশঝাড়ের আড়ালে এক বিস্মৃত কূপ বহুদিন ধরে অচল পড়ে আছে। সময়ের ভারে তার ইটগুলো ভেঙেচুরে এক অদ্ভুত শৈবাল-ঢাকা রূপ নিয়েছে, যেন প্রকৃতি নিজেই কূপটিকে ঢেকে রাখতে চায়। চারপাশে গজিয়ে ওঠা কাঁটাঝোপ, শুকনো ডালপালা আর বনলতা মিলেমিশে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে দিনের আলোও প্রবেশ করতে চায় না। গ্রামের শিশুরা দূর থেকে কূপটিকে দেখে আঁতকে ওঠে, আর বয়স্করা ভয়ে নামও মুখে আনে না। শোনা যায়, একসময় এ কূপই ছিল গ্রামের প্রধান পানির উৎস। মানুষজন প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা জল তুলতে আসত, কূপপাড়ে হাসি-ঠাট্টার আসর বসত। কিন্তু প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে এক ভয়াবহ ঘটনার পর হঠাৎ করেই কূপটি অশুভের প্রতীক…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গঙ্গার তলদেশে

    অর্ক গাঙ্গুলী এক গঙ্গার জলে ভোরের আলো তখনও পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি। ঘাটে দাঁড়িয়ে নদীর বুকের দিকে তাকিয়ে যেন মনে হচ্ছিল এক বিশাল, অগাধ রহস্য ছড়িয়ে আছে সামনে। অরিন্দম ঘোষ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন, হাতে ডাইভিং স্যুট আর সরঞ্জাম। তাঁর চোখে ছিল অভিজ্ঞতার গভীরতা, কিন্তু সেই চোখের ভেতরে লুকিয়ে ছিল অন্যরকম এক অস্বস্তি। জীবনে বহুবার ডুব দিয়েছেন, সমুদ্রের অন্ধকার গহ্বর থেকে শুরু করে পাহাড়ি নদীর স্রোত—সবই তাঁর অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে আছে। তবুও আজ গঙ্গার তলদেশে নামার আগে অদ্ভুত এক অশনি বার্তা যেন তাঁকে গ্রাস করেছিল। সেই মুহূর্তেই মাঝি জগন্নাথ এগিয়ে এসে গম্ভীর স্বরে বলল, “বাবু, গঙ্গা সব দেখে, সব রাখে। তবে যা সে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    দূর্গার আঁধার

    গ্রামের কালীমন্দিরে দুর্গাপূজার অষ্টমীর রাত মানেই এক অন্যরকম আবহ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসত এই মন্দিরের পুজো দেখতে। সন্ধ্যা থেকেই মন্দিরের চত্বর আলোয় ভরে উঠেছিল, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের শব্দ, কাশীর বাঁশির সুর আর ধূপকাঠির ধোঁয়া মিলেমিশে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করেছিল। গ্রামের ছোটো থেকে বড়ো সবাই নতুন কাপড় পরে এসেছিল, কেউ প্রণাম দিতে, কেউ আবার প্রতিমা দর্শন করে আনন্দ পেতে। মন্দিরের সামনের উঠোনে তখন নাচগানের আসর বসেছিল, কচিকাঁচারা ধুনুচি হাতে ঘুরছিল আর মায়ের আরাধনায় মেতে উঠেছিল। একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুমুদিনী দেবী, গ্রামের জমিদারবাড়ির বিধবা, তাঁর চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা, যেন উৎসবের আনন্দের ভেতরও কোথাও এক অজানা ভয় তাঁর বুক চেপে ধরেছিল। পুরোহিত…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    হীরের গহনা

    সুরজিৎ ব্যানার্জী অধ্যায় ১ – রাজবাড়ির প্রতিটি কোণে যেন আলো আর শব্দের উৎসব। বিশাল মুখার্জি প্রাসাদকে চারদিক থেকে সাজানো হয়েছে রঙিন আলোকমালায়, উঠোনে টাঙানো কাগজের লণ্ঠন থেকে শুরু করে বারান্দার শোভা বর্ধনকারী ঝাড়বাতি—সব মিলিয়ে যেন এক অভিজাত কল্পলোক। বিয়ের আগের রাত বলে উৎসবের রঙ আরও গাঢ়। অতিথিরা আসতে শুরু করেছে, কেউ দূর সম্পর্কের আত্মীয়, কেউ ব্যবসায়িক সূত্রে ঘনিষ্ঠ, আবার কেউ কেবল সামাজিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য। প্রতিটি অতিথির মুখে বিস্ময় আর প্রশংসার ছাপ, কারণ মুখার্জি পরিবারের ঐতিহ্য, ঐশ্বর্য এবং আতিথেয়তার জৌলুস তারা প্রত্যক্ষ করছে। বিশাল দরবার হলে তবলা আর সেতারের সুর ভেসে আসছে, একপাশে রান্নাঘরে চলছে অগণিত পদ তৈরির ব্যস্ততা—কষা মাংস,…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    জোনাকির আলো

    অমিত পাল রাতের অন্ধকার গ্রামটিকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করেছিল। চারপাশে নীরবতা, যেন পৃথিবীর সব শব্দ মুছে গেছে। পাতাগুলোর উপর হালকা শিশির জমে আছে, আর বাতাস নীরবভাবে গাছের পাতা দুলাচ্ছে। ছোট্ট গ্রামটির মাটির রাস্তাগুলো এখনো দিনের আলো থেকে দূর্যোগের মতো ফাঁকা। ঘরগুলো নিস্তেজ, জানালার পাশে কোনো আলো জ্বলছে না। তবে গ্রামের এক কোণে, নদীর ধারে, রূপসা একা বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে অদ্ভুত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে এক অচেনা ভয়ও জমেছে। সে জানে, এই রাত অন্য রকম। প্রতিবার এই সময় যখন আকাশে চাঁদের আলো নরম হয়ে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সে অনুভব করে গ্রামের সাধারণ নীরবতার মধ্যে লুকানো একটি অদ্ভুত শক্তি। সে…

  • Bangla - তন্ত্র

    অগ্নি-মুদ্রার রহস্য

    কলকাতার পুরনো শহরের অলিগলি পেরিয়ে যখন গঙ্গার ধারের কাছাকাছি এক মন্দিরের ভগ্নাবশেষে প্রত্নতত্ত্ব খনন শুরু হয়, তখন সৌরভ সেনগুপ্ত তার গবেষক দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভোরের আলোয় ভেজা গম্ভীর মন্দিরপ্রাঙ্গণটিতে শূন্য নীরবতা নেমে ছিল, শুধু কাকের ডাক আর হাওয়া বয়ে যাওয়া পাতার শব্দ ছাড়া। সৌরভ ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, বহুদিন ধরে প্রাচীন মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়ে কাজ করছেন, তবে এ রকম গোপন শক্তির গুজব জড়ানো কোনো নিদর্শন তিনি হাতে পাননি। খননের কাজ এগোতে এগোতে যখন মাটির গভীরে পাথরের স্তূপ সরানো হলো, হঠাৎই কারও হাতের আঘাতে ধাতব আওয়াজ বেজে উঠল। সবাই থমকে দাঁড়াল, আর সৌরভ ধীরে ধীরে নিচু হয়ে সেই…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    ছায়ার খুনী

    অনিন্দ্য মিত্র কলকাতার রাতের নিস্তব্ধতা সবসময়ই এক অদ্ভুত রকমের সৌন্দর্য বহন করে—কোথাও ল্যাম্পপোস্টের ম্লান আলো, কোথাও অটোর হর্নের টুংটাং, আবার কোথাও গলির মোড়ে ভাজাভুজির গন্ধ মিশে থাকা বাতাস। কিন্তু সেই রাতে শহরের হৃদস্পন্দন যেন থমকে গিয়েছিল এক ভয়ঙ্কর দৃশ্যের সামনে। সঞ্জয়, একজন সাধারণ ট্যাক্সিচালক, রাত সাড়ে দশটার দিকে তার গাড়ি নিয়ে ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী খুঁজছিল। দিনের চাপে তার চোখে লালচে আভা, শরীর ক্লান্ত, কিন্তু টাকার অভাবে আরও কিছু সময় গাড়ি চালানোর লোভ সামলাতে পারল না। ঠিক তখনই সে দেখতে পেল, রাস্তার অপর পাশে এক অচেনা লোক হঠাৎ করে ধপাস করে পড়ে গেল। প্রথমে ভেবেছিল লোকটা হয়তো মদ খেয়ে অজ্ঞান…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গঙ্গার ধারে খুন

    দেবমাল্য গুপ্ত ভোরবেলা গঙ্গার ঘাট সবসময়ই যেন অদ্ভুতভাবে রহস্যময় হয়ে ওঠে। শীতল হাওয়া জলের গায়ে তরঙ্গ তুলে দিচ্ছিল, দূরে পুরোনো মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসছিল কুয়াশার আড়ালে, আর ঘাটে কিছু ভোরের সাধক গঙ্গাস্নানে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু সেই নিরিবিলি সকালে হঠাৎই এক চিৎকার ভেদ করে গেল চারপাশের নীরবতা। একজন মাঝি প্রথমে জলে ভাসতে থাকা অচেনা দেহটি দেখতে পায় এবং দৌড়ে লোক ডাকতে শুরু করে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই গঙ্গার ঘাটে ভিড় জমে যায়। সবাই শিউরে উঠল, কারণ দেহটি একেবারে অচেনা কারো নয়—চেনা শহরেরই একজন, ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ লাহিড়ী। মানুষটি গতকাল রাত পর্যন্ত শহরে দোকানে বসেছিলেন, এমনকি অনেকেই তাকে দেখেছে স্থানীয় ক্লাবে। অথচ আজ সকালে…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    হারানো শব্দ

    আলোক গুপ্ত ভোরের আলো তখনো পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি, আকাশের কোণে হালকা লাল আভা। গ্রাম বেলতলা প্রতিদিনের মতো ঘুম ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই গ্রাম এমনই, যেখানে প্রকৃতির নিজস্ব সুরে সকাল শুরু হয়—পূর্ব দিকের তালগাছের মাথায় দোয়েল গান গাইতে থাকে, ঘরের উঠোনে মুরগির ডাকে কৃষাণী ঘুম থেকে ওঠে, গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টা বাজে আর মন্দির থেকে শাঁখ আর ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসে। সকালের এমন হুল্লোড়ে বেলতলার প্রতিটি মানুষ নিজের কাজ শুরু করত। কিন্তু সেদিন সকালটা ছিল একেবারে আলাদা। অদ্ভুত নিস্তব্ধতা যেন চারদিক জড়িয়ে ধরেছিল। গাছের ডালে পাখিরা উড়ছিল, ঠোঁট নড়ছিল—কিন্তু কোনো ডাক শোনা যাচ্ছিল না। উঠোনে মুরগিরা এদিক-ওদিক ছুটছিল, কিন্তু একটিও ডাক কানে…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প - রহস্য গল্প

    অদৃশ্য উত্তরাধিকার

    সোনালী দেব ১ রায়চৌধুরী বাড়ি যেন ইতিহাসের এক প্রাচীন দলিল, যার প্রতিটি দেয়ালে লুকিয়ে আছে গৌরব ও ক্ষয়ের মিলেমিশে থাকা কাহিনি। বিশাল ফটক পেরোলেই চোখে পড়ে দোতলা প্রাসাদের মতো বিশাল বাড়ি—উঁচু খিলানওয়ালা জানালা, বারান্দার লোহার গ্রিলের কাজ, আর সিঁড়ির মাথায় শ্বেতপাথরের সিংহমূর্তি। একসময় এ বাড়ির জমিদারি ছড়িয়েছিল আশেপাশের বহু গ্রামে, ঘোড়ার গাড়ি, হস্তিদল, পালকি, এবং শত শত কৃষকের আনাগোনায় মুখর থাকত এই প্রাসাদ। এখন অবশ্য সময়ের সঙ্গে তার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, কিন্তু ছায়াঘেরা আঙিনা আর খসে পড়া দেওয়ালগুলো এখনো অতীতের গৌরবের সাক্ষী। সন্ধ্যা নামলেই যেন এই বাড়ি চারপাশের অন্ধকারকে গিলে নেয়; ঝুলে থাকা পুরোনো ঝাড়বাতি, কড়কড়ে দরজা আর বাতাসে…