গ্রামের কালীমন্দিরে দুর্গাপূজার অষ্টমীর রাত মানেই এক অন্যরকম আবহ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসত এই মন্দিরের পুজো দেখতে। সন্ধ্যা থেকেই মন্দিরের চত্বর আলোয় ভরে উঠেছিল, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের শব্দ, কাশীর বাঁশির সুর আর ধূপকাঠির ধোঁয়া মিলেমিশে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করেছিল। গ্রামের ছোটো থেকে বড়ো সবাই নতুন কাপড় পরে এসেছিল, কেউ প্রণাম দিতে, কেউ আবার প্রতিমা দর্শন করে আনন্দ পেতে। মন্দিরের সামনের উঠোনে তখন নাচগানের আসর বসেছিল, কচিকাঁচারা ধুনুচি হাতে ঘুরছিল আর মায়ের আরাধনায় মেতে উঠেছিল। একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুমুদিনী দেবী, গ্রামের জমিদারবাড়ির বিধবা, তাঁর চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা, যেন উৎসবের আনন্দের ভেতরও কোথাও এক অজানা ভয় তাঁর বুক চেপে ধরেছিল। পুরোহিত…
-
-
মৈত্রেয়ী বসু অধ্যায় ১: “নবাগত” কলকাতার ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে খানিক দূরে, টালিগঞ্জের এক পুরনো গলিতে একটি তিনতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল অভিষেক আর মীনাক্ষী। নতুন বিয়ে, নতুন জীবন, আর এই নতুন ভাড়া বাড়ি—সবকিছুতেই একরকম সতেজ উত্তেজনা কাজ করছিল। বাড়িটির গায়ে সময়ের ছাপ স্পষ্ট; ধূসর দেয়ালে ফাটল, জানালার পাল্লাগুলো পুরনো, আর সিঁড়িতে কাঠের ঘষাঘষির শব্দ যেন নিজেই গল্প বলতে পারে। তবে বাড়ির মালিক মিত্রবাবু বলেছিলেন, “ভালো বাড়ি, হাওয়া-বাতাস যথেষ্ট, আর শহরের ভিড় থেকে দূরে। কেবল পুরনো, তাই লোকজন আগ্রহ দেখায় না।” মীনাক্ষীর বুকের গভীরে তখন এক ধরনের শীতল বাতাস খেলে যাচ্ছিল, যেন এই পুরনো বাড়ির দেয়ালগুলো শুধু ইট-কাঠের নয়, অনেক…
-
অসিত মল্লিক ১ শীতের প্রান্তে পৌঁছানো কলকাতা শহর একটু বেশিই নীরব হয়ে পড়ে ভোরের দিকে, বিশেষ করে উত্তর কলকাতার পুরনো লেনে—যেখানে দিনের বেলা হইচই করলেও, রাত গড়ালে শুধু হাওয়ার শব্দ আর পুরনো ঘরদোরের কঁকিয়ে ওঠা শোনা যায়। ঠিক তেমনই এক গলির শেষে দাঁড়িয়ে আছে মিত্র পরিবারের ঠাকুরবাড়ি—এককালে কলকাতার সমাজে যাদের নাম ছিল অতিশয় সম্মানের। আজ সেই বাড়ির দেওয়ালে স্যাঁতসেঁতে ছোপ, কার্নিশে কাকের বাসা, আর বন্ধ জানালার ফাঁকে ধুলোমাখা আলো ঢোকে। এই বাড়িতেই ফেরেন বিপ্রতীক মিত্র, বছর দশেক বিদেশে থাকার পর। শহরের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে এক আন্তর্জাতিক হেরিটেজ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ফিরে এসে সিদ্ধান্ত নেন, ঠাকুরদার রেখে যাওয়া এই ভাঙাচোরা বাড়িটাই তাঁর…