• Bangla - ভূতের গল্প

    জলাশয়ের অপদেবতা

    সৌমিত্র দাশগুপ্ত এক গ্রামের মাঝখান থেকে সামান্য দূরেই এক পুরোনো পুকুর, যার জলে সবসময় যেন এক অদ্ভুত গা ছমছমে নীরবতা ভেসে থাকে। চারপাশে শ্যাওলা জমে যাওয়া ঘাস, মাটিতে শুকনো পাতার স্তূপ, আর ভোরের কুয়াশা পুকুরের ধারে এক ভয়ানক আচ্ছাদন তৈরি করে। গ্রামের মানুষজন দিনের বেলায় সেখানে জল তুলতে যায়, গবাদি পশুকে গোসল করায়, কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই সেই জলাশয়কে এড়িয়ে চলে যায় সকলে। কারণ সেই পুকুরকে ঘিরে রয়েছে বহু বছরের ভয়ঙ্কর কাহিনি। অকারণে সেখানে ডুবে মরেছে গ্রামের মানুষ, কখনও শিশু, কখনও জেলে, কখনও গৃহবধূ। লোকেরা বলে, জলে সাঁতার জানলেও হঠাৎ পা কেঁচে যায়, শ্বাস আটকে আসে, আর চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ছিন্নমাথার বরযাত্রী

    ফাল্গুনী মিশ্র এক গভীর অন্ধকারে ডুবে থাকা সেই গ্রাম, নাম মালঞ্চপুর। দিনের বেলায় এ গ্রাম চিরচেনা ছবির মতো শান্ত, ধানখেতের সবুজ গালিচা, কুঁড়েঘর আর দিঘির জলে ছেলেদের হাসি-ঠাট্টা। কিন্তু সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই যেন অন্য এক ছায়াময় আবহ নামত এখানে। বিশেষত গ্রামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল পুরোনো বটগাছটি যেন অজস্র রহস্য গিলে রেখেছে। সেই গাছের নিচে প্রতিদিন সন্ধের পরে ভিড় জমত, গল্পগুজব করতে করতে গ্রামের লোকেরা আসত, কেউ কেউ তামাক টানত, কেউবা পাকা পান চিবোতে চিবোতে নিজের শোনা লোককথা খুলে ধরত। আর এইসব গল্পকথার ভিড়েই ছিলেন গদাধর কাকা—আশি ছুঁইছুঁই এক বুড়ো মানুষ, সাদা দাড়ি বুক অবধি নেমে এসেছে, চোখদুটো যেন…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শ্মশানঘাটের বাঁশি

    অরুণাভ চক্রবর্তী ১ গঙ্গার ধারে বরানগরের শ্মশানঘাট যেন সময়ের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক এলাকা। এখানে নদীর জল যেন অন্য রকম ছন্দে বয়ে চলে—দিনে আলো আর নৌকার কোলাহলে ভরা হলেও রাত নামলেই চারপাশে এমন এক নীরবতা নেমে আসে, যা মানুষের বুকের ভেতর কেমন একটা শূন্যতা তৈরি করে দেয়। পুরনো, বিশাল এক বটগাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক শ্মশানের পাশে, যার শিকড়গুলো মাটির ভেতর থেকে উঠে এসে কুণ্ডলী পাকিয়ে গিয়েছে, যেন মৃত মানুষের হাড়গোড় নদীর বাতাসে দুলছে। গাছের গায়ে শত বছরের শ্যাওলা, পেছনে নদীর কালো জলে পূর্ণিমা বা অমাবস্যার চাঁদের প্রতিফলন, আর দূরে জ্বলতে থাকা চিতার আগুনের লাল আভা—সব মিলিয়ে এক…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    রহস্যময় অশরীরী কণ্ঠ

    অর্জুন দে ১ গ্রামের প্রান্তে অবস্থিত খোশরুরাজ সরকারের পুরনো বাড়িটি বছরের পর বছর আগের সেই ভাঙাচোরা মেঝে আর ছাদের গাছের ফাঁকফোকর দিয়েই তার কাহিনী বলে চলে। আজও বাড়ির দেয়ালে সোনালী দিনের স্মৃতিগুলো উজ্জ্বল—তবে এখন যেন ম্লান হয়ে এসেছে সময়ের ধুলোয়। খোশরুরাজ, যে এককালে গ্রামের মঞ্চের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী ছিলেন, এখন নির্জনতার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। সাদা ধোঁড়া চুল আর গভীর রেখাচিত্র তার মুখে সময়ের সাক্ষী, কিন্তু চোখে এখন শুধুই নিস্তব্ধতা। পুরোনো দিনের গান আর সুরের স্মৃতি তার হৃদয়ে বাজে বারবার, যেন এক পুরানো রেকর্ড প্লেয়ারের সিডির মতো। তার একাকীত্ব ঘিরে রেখেছে একটি গভীর শূন্যতা—তাঁর একমাত্র সন্তান অনেক বছর আগেই শহরে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    কোয়ারেন্টাইন কোয়ার্টার

    অর্ঘ্য বসু ১ দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ অঞ্চলের ঘিঞ্জি কিন্তু অভিজাত এক পাড়ায়, সন্ধ্যেবেলা গাড়ির হেডলাইটে ভিজে থাকা রাস্তায়, হঠাৎই ট্যাক্সি থামল “সৌরভ অ্যাপার্টমেন্ট”-এর সামনে। ঈশিতা ব্যানার্জি ধীরে ধীরে নেমে পড়ল গাড়ি থেকে, কাঁধে একটা মাঝারি ব্যাগ আর হাতে ছোট্ট স্যুটকেস। ট্র্যাভেল অ্যাপে বুক করা এই ভাড়া ফ্ল্যাট, 3B, সে গতকাল রাতেই নিশ্চিত করেছে—দামটা তুলনায় অস্বাভাবিক কম। মালিক ফোনে শুধু বলেছিল, “ঘরটা এখন খালি, কিন্তু বেশ কয়েকজন এসেছিলেন, এক সপ্তাহের বেশি কেউ থাকতে পারেননি।” ঈশিতা পাত্তা দেয়নি। তার কাছে ‘ঘর’ মানে একটা নিরিবিলি জায়গা—যেখানে কেউ প্রশ্ন করে না, কেউ দরজায় কড়া নাড়ে না। চাকরির বদল, একটা সম্পর্কের ভেঙে যাওয়া, আর সেই…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    কবরস্থান রোড

    অরুণাভ দাশগুপ্ত এক নৈহাটি শহরের এক নিরিবিলি কোণে ছোট্ট একটা গলি, যার নাম শুনেই অনেকের মুখ থমকে যায়—“কবরস্থান রোড”। শহরের অন্য অংশে আলো ঝলমলে বাজার, রঙিন দোকান আর ব্যস্ততা থাকলেও এই গলিটা যেন স্থির এক মৃত অতীতের বুক ছুঁয়ে বেঁচে আছে। পুরনো বাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে প্যাঁচপেঁচে গলির পাশে, যেন কারো দীর্ঘশ্বাস জমে আছে দেয়ালের ফাটলে। সেই গলিরই একদিকে, ধূসর রঙের তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া নেয় অভিক সেন, তার স্ত্রী তৃণা এবং তাদের চার বছরের ছেলে বিভান। শহুরে কোলাহল থেকে দূরে এক চিলতে শান্তি আর স্থিরতার খোঁজে তারা কলকাতা ছেড়ে এই শহরে এসেছে। অভিক একজন ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার, ঘরে বসেই…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শূন্য নম্বর ঘর

    শিলিগুড়ির পাহাড়ি রাস্তায় সন্ধ্যার অন্ধকার ধীরে ধীরে জমে উঠছিল, হালকা কুয়াশার পর্দা চেপে বসছিল বাতাসের গায়ে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সায়ন চৌধুরী নিঃশব্দে পাহাড়ের বুক চিরে চলা রাস্তাগুলোর নিঃসঙ্গ সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। সে বহুদিন ধরেই শহরের কোলাহল থেকে দূরে, একা কোথাও যাওয়ার কথা ভাবছিল—শেষমেশ এই পুরনো রিসর্টের খোঁজ পেয়ে বুকিং করে ফেলে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি রিসর্টটি স্থানীয়দের ভাষায় “নীলবন হিল রিট্রিট” নামে পরিচিত, কিন্তু বছর কয়েক আগে একটি রহস্যজনক ঘটনায় এক পর্যটক নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর জায়গাটি খানিকটা ভৌতিক তকমা পেয়ে যায়। সায়নের ব্লগ ‘Ghosts of Bengal’-এর পাঠকেরা তাকে অনেকবার বলেছে এই জায়গার কথা লিখতে, আর সেই আগ্রহেই…

  • Bangla - তন্ত্র

    কালো রুদ্রাক্ষ

    রিতা সুর চৌধুরী এক শ্মশানের নরম সাদা ছাই আর কালো পাথরের ফাঁক দিয়ে বেরোনো ধোঁয়ার মতোই নিঃশ্বাস নিত রুদ্রনাথ—যেন প্রাচীন কালের অন্ধকার তাকে গ্রাস করে নিয়েছে আর ছাড়তে চায় না। এক সময় তান্ত্রিকদের মধ্যে যার নাম ছিল সম্মানের, সেই রুদ্রনাথ আজ শুধু অন্ধকার আর ব্যর্থতার এক জীবন্ত প্রতিমা। চোখের তলায় গভীর গর্ত, কপালে কালি আর রক্তের তিলক, ছেঁড়া গেরুয়া বসনে জড়ানো দেহ আর হাতের শিরাগুলোতে শুকিয়ে যাওয়া তেলের গন্ধ—সব মিলিয়ে এক পচন ধরা সাধকের চেহারা। শ্মশানটি সেই সময় প্রায় পরিত্যক্ত; মাঝে মধ্যে শুধু মৃতদেহের মিছিল এসে পুড়ে যায়, ধোঁয়ার সাথে মিলিয়ে যায় কান্নার শব্দগুলো। রুদ্রনাথের তন্ত্রের আসন সেই চিতা ভস্মের…