সন্দীপন বিশ্বাস ১ অরিত্র ছিল এক নিরিবিলি স্বভাবের তরুণ প্রোগ্রামার, কলকাতার এক মাঝারি আইটি কোম্পানিতে কাজ করত। অফিসে তার কদর ছিল, কারণ জটিল সমস্যারও দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা তার ছিল। কিন্তু বাইরের চোখে যতই সে সফল মনে হোক না কেন, তার ভেতরের মানুষটা যেন শূন্যতায় ভরা ছিল। কোডের ভেতরেই সে খুঁজে পেত আশ্রয়, সংখ্যা আর চিহ্নের অদ্ভুত সুরে ডুবে থাকত সে। ছোটবেলা থেকেই তার বইয়ের প্রতি ছিল দুর্বলতা—বিশেষত পুরনো পুঁথি, প্রাচীন লিপি আর লোককথার প্রতি। সে বিশ্বাস করত, প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান ও মন্ত্রের ভেতরে এমন কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে, যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের লজিক দিয়ে পুরোপুরি ধরা…
-
-
চৈতালি ঘোষ কলকাতার এক আর্দ্র গ্রীষ্মের দুপুরে সায়ন্তনী মুখার্জী তার চেম্বারে বসে ছিল, ডেস্কে জমে থাকা কেস ফাইলের পাতাগুলো উল্টাচ্ছিলেন। জানলার বাইরে থেকে ভেসে আসছিল রাস্তার গরম ধুলো আর রিকশাওয়ালার ক্লান্ত গলার আওয়াজ। এদিনটা অন্য দিনের মতোই ছিল, যতক্ষণ না দরজায় ধীর, দ্বিধাগ্রস্ত কড়া নাড়ার শব্দ হয়। “ভেতরে আসুন,” বলতেই দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, এক তরুণী — বয়স তিরিশের কম — সাদামাটা কটন সালোয়ারে, মুখে চাপা আতঙ্কের ছাপ। তার হাতে এক পাতলা ফাইল আর একটি ছোট ব্যাগ। চেয়ার টেনে বসতে বললেও মেয়েটি প্রথমে বসেনি, যেন নিজেকে সামলাতে পারছে না। অবশেষে বসে, এক গ্লাস জল হাতে নিয়েই সে ফাইলটি সায়ন্তনীর…
-
১ অর্ণবের জীবনটা ছিল অনেকটা নির্জন কোডের ভেতরে ডুবে থাকা এক তরুণের জীবন। সে সদ্য একটি আইটি স্টার্টআপে যোগ দিয়েছে, সারাদিন কোড লিখতে লিখতে রাত প্রায় শেষ হয়ে আসে, তবুও তার চোখের ঘুম আসে না। ল্যাপটপের আলোই যেন তার একমাত্র আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধুবান্ধব আছে ঠিকই, কিন্তু সে খুব একটা বাইরে মিশতে ভালোবাসে না। রাতে নিঃশব্দ ফ্ল্যাটে বসে কোডের জট ছাড়াতে ছাড়াতে কখনও গান শোনে, কখনও ভিডিও দেখে, আবার কখনও কৌতূহল থেকে নতুন নতুন ফ্রি সফটওয়্যার ডাউনলোড করে খেলে। সেদিনও একদম তেমনই এক রাত ছিল। জানালার বাইরে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ, কানে হেডফোনে বাজছে কোনো পুরনো গান আর সামনে ল্যাপটপের স্ক্রিনে…
-
তীর্থঙ্কর সেন ১ ঘরের ভেতর তখন মাঝরাত পার হয়ে গেছে। অভিষেক ধর একা বসে ছিল তার পুরোনো ডেস্কটপের সামনে, চোখের নিচে হালকা কালি, ঠোঁটে ক্লান্তির চিহ্ন, তবু মনোযোগ অটুট। কোড লেখার থেকে বেশি আজ তার আগ্রহ ছিল ডার্ক ওয়েবের অদ্ভুত সব ফোরাম ঘাঁটাঘাঁটিতে। টর ব্রাউজারে ‘Deep Onion’ রাউট দিয়ে সে ঢুকেছিল এমন এক সাইটে যেখানে হ্যাকিং টুল, অস্ত্রের ব্লুপ্রিন্ট, এমনকি কালো বাজারে বিক্রি হওয়া মানুষের ডেটা পাওয়া যায়। এসব তার কাছে নতুন নয়, বরং নেশার মতো। হঠাৎ সে এক লিংকে ক্লিক করল— “TantraDoc.net – Unlock Ancient Tantra Through Live Sessions”. চোখ কুঁচকে পড়ল সে। তন্ত্রমন্ত্র নিয়ে ওয়েবে এমন সাইট সে…
-
১ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গা-ছমছমে সেই পুরোনো গবেষণা রুমটা দিনের আলোতেও যেন কিছুটা অন্ধকারময়। তারই এক কোণে বসে রেখা সেনগুপ্ত চোখ গুঁজে পড়ছিল পুরনো এক সংস্কৃত পাণ্ডুলিপি—জীর্ণ, পোড়া পাতাগুলো যেন শতাব্দী প্রাচীন রহস্যের সাক্ষ্য বহন করছে। বেশ কিছুদিন ধরেই সে খুঁজছিল এমন এক প্রাচীন তন্ত্রগ্রন্থ যা তন্ত্রশাস্ত্রের অপ্রকাশিত ধারার অন্তর্ভুক্ত। লাইব্রেরির পুরাতন ক্যাটালগে হঠাৎ করেই তার চোখে পড়েছিল ‘ভৈরব তন্ত্র’ নামক একটি অচেনা শিরোনাম। কোনো কাগজে তার উল্লেখ নেই, কোনো অনুবাদ নেই, এমনকি কেউ এটি সম্পর্কে জানেও না। আজ সকালে প্রাচীন গ্রন্থসংগ্রহ থেকে লাইব্রেরিয়ান তার জন্য এক মোটা কাঠের বাক্স এনে দেয়। রেখার হাত কাঁপছিল উত্তেজনায়। সাদা তুলোর ভেতর পেঁচানো পাণ্ডুলিপি…
-
সৌভিক নন্দী ১ কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলের সেই রাতটা অস্বাভাবিক ঠান্ডা ছিল, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ। শহরের ব্যস্ততা একটু শান্ত হলেও, গলিগুলোয় যেন ছায়া আরও ঘন হয়ে উঠছিল। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ এক রিকশাওয়ালা প্রথম মৃতদেহটি দেখতে পান—লাল রঙের কাঁথায় মোড়া একটি দেহ, যার কপালে স্পষ্ট লাল তিলক, যেন রক্তে আঁকা। তার চিৎকারে স্থানীয় থানা ছুটে আসে। অচিন্ত্য বসু, ডেপুটি কমিশনার (ক্রাইম ব্রাঞ্চ), সকালে ফোন পান—”স্যর, কালীঘাটে অদ্ভুত খুন… একটা সিম্বলিক মার্ডার বলেই মনে হচ্ছে।” সাদা শার্ট গায়ে চাপিয়ে, ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ হাতে, তিনি বললেন, “জীবনে কিছুই সিম্বলিক হয় না। সব কিছুরই মানে আছে। পাঠাও লোক।” কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিজেই…