সৌমাভ গুহ ভোর থেকে দুপুর হয়ে গেছে, কিন্তু আকাশ যেন একরকম ম্লান নীলচে ধোঁয়াটে রঙে আচ্ছন্ন। মায়া কলেজের ক্লাস শেষ করে নিজের ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হয়, মনে ঘুরপাক খাচ্ছে দিনের কাজের ক্লান্তি আর বন্ধুর সঙ্গে কেচ্ছা। রাস্তা ধুয়ে ধুয়ে যাচ্ছে হালকা হাওয়ায়, কিন্তু আকাশে কোনও পূর্বাভাস নেই যে, খুব শীঘ্রই যেন সেই ধুয়ে যাওয়া রং একটি প্রবল বৃষ্টিতে বদলে যাবে। মায়া ব্যস্ত, চোখে পড়ছে পাশের দোকানের রঙিন শাটার আর গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরের পানি, আর হঠাৎ মনে হলো আকাশে ঘন কালো মেঘ জড়ো হতে শুরু করেছে। মুহূর্তের মধ্যে কুঁড়ে কুঁড়ে বৃষ্টির কণাগুলো ঝরে পড়তে শুরু করে, আর মায়া…
-
-
সুস্মিতা দে অধ্যায় ১: উত্তরবঙ্গের ছোট শহরটি যেন এক অদ্ভুত মায়ার পর্দায় মোড়া। পাহাড় থেকে নেমে আসা ধোঁয়াটে মেঘ, ঘন সবুজের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা ছোট ছোট টিনের চালের ঘর, কোলাহলহীন রাস্তায় মাঝে মাঝে শোনা যায় সাইকেলের ঘণ্টা কিংবা দূরের ট্রেনের হুইসেল—সব মিলিয়ে শহরটিতে যেন একধরনের ধীরলয়ের সুর বেজে চলে। এই শহরেই সদ্য যোগ দিয়েছেন ডাঃ অনির্বাণ সেন। বয়স মাত্র উনত্রিশ, কিন্তু শহরের হাসপাতালের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়েছে। কলকাতার ভিড়, হাসপাতালের প্রতিযোগিতা আর ব্যস্ততার মাঝে এতদিন কাটিয়ে হঠাৎ একেবারে উত্তরবঙ্গের এই ছোট্ট শহরে চলে আসা—প্রথম প্রথম তাকে খানিকটা অস্বস্তিতে ফেলেছিল। সরকারি হাসপাতালের পুরোনো ভবন, দরজার পেছনে জমে থাকা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ,…
-
অর্পিতা ঘোষ ১ শ্রেয়সীর ট্রেন যখন ধীরে ধীরে নতুন শহরের প্ল্যাটফর্মে থামল, তার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক টান অনুভূত হলো। এই শহরে তার আগে কখনও আসা হয়নি, এমনকি এই শহরের নামও শুধু সংবাদপত্র আর অফিসের নিয়োগপত্রে পড়েছে। ব্যস্ত রেলস্টেশনে নামতেই ভিড়, কোলাহল, হট্টগোল আর অচেনা চেহারার ভিড়ে নিজেকে একেবারে হারিয়ে ফেলল সে। এক হাতে ছোটো স্যুটকেস আর কাঁধে ল্যাপটপ ব্যাগ ঝুলিয়ে যখন রিকশাওয়ালাদের ডাক, ট্যাক্সিচালকদের জোরাজুরি সামলাতে গিয়ে হাঁসফাঁস করছে, তখন হঠাৎ মনে পড়ল—এখানে তাকে দেখার মতো বা নিতে আসার মতো কোনো পরিচিত মানুষ নেই। শহরের আকাশচুম্বী বিলবোর্ড, নতুন গন্ধের মিশ্রণ, রাস্তার ধুলোমাখা হাওয়া আর ছুটে চলা মানুষের ভিড়—সবকিছু যেন…
-
অদিতি চক্রবর্তী (১) ঋতমের কাছে গোধূলি বেলা সবসময়ই এক অদ্ভুত আকর্ষণের সময়। সূর্যের শেষ সোনালি আলো যখন নদীর জলে গিয়ে মিশে যায়, তখন আকাশ, জল আর বাতাস মিলেমিশে তৈরি করে এক রঙিন ক্যানভাস, যা তার আঁকার খাতায় ধরা পড়ে না, কিন্তু তার মনে গভীর ছাপ ফেলে। সেদিনও সে স্কুলের ব্যাগ ঘরে ফেলে দিয়ে হাতে স্কেচবুক আর পেন্সিল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল সেই পরিচিত বাঁকের দিকে। রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে সে শুনতে পায় পাখিদের বাসায় ফেরার ডাক, দূরে কারো গরু ফেরানোর বাঁশি, আর গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে হালকা আলো এসে তার গায়ে পড়ছে। নদীর ধারের কাশফুলগুলো তখন গোধূলির আলোয় যেন রুপালি আভা…