• Bangla - ছোটদের গল্প - সামাজিক গল্প

    পুরনো সোয়েটার

    নির্মলেন্দু বিশ্বাস শীতকালের শুরুটা কলকাতায় যতটা না কাঁপুনির, তার চেয়েও বেশি স্মৃতির। সকালবেলায় ঠান্ডা আলো, শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বারান্দায় দাঁড়ানো মায়েরা, আর গরম চায়ের কাপ হাতে ভাঙা কাঁচের জানালা দিয়ে সূর্যের কুয়াশা-বাঁধা হাসি ঢুকে পড়ে ঘরে। এই শহরের অভিজাত বসতিপাড়ায় একটি তিনতলা বাড়ির প্রথম তলায় বসু পরিবার শীতের আগমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বসুদের ছেলে, আর্য, বয়স চৌদ্দ—তাকে কেউ দেখলে বলবে বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা কোনো শান্ত স্বভাবের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র। তার গায়ে তখন স্কুল ইউনিফর্মের গন্ধ, মাথার চুলে ঠিকঠাক জেল, হাতে একটি কমিক্স আর টেবিলের কোণে পড়ে থাকা আধখাওয়া স্যান্ডউইচ। মা রিমা বসু, সমাজসেবায় যুক্ত, কিন্তু সামাজিক অবস্থান বজায়…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ভূতের প্রেমে চার পাগল

    রক্তিম জানা বাড়িটা একটু বেশিই ঠান্ডা বিকেল পাঁচটা বাজতে না বাজতেই চারজন দাঁড়িয়ে ছিল পাণ্ডুগ্রামের পুরনো ‘সিংহবাড়ি’র সামনে। সাদা রঙের ছোপ ছোপ দেয়াল, বড় বড় কাঠের জানালা, আর ছাদের কিনারা দিয়ে বেয়ে নামা আগাছা দেখে মনে হচ্ছিল বাড়িটা কাঁদছে। “এই বাড়িতেই না তোর মামাবাড়ি ছিল, বুদু?”— প্রশ্ন করল চঞ্চল, যার চশমার কাঁচের পেছন থেকে সবসময় একটা অবিশ্বাস ফুটে বেরোয়। “হ্যাঁ রে… কিন্তু তোরা জানিস না, আমার মামারা কেন এই বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় চলে গেল,”— গলায় অদ্ভুত এক থমথমে ভাব এনে বলল বুদু। “ভূতের গল্প করিস না,”— বলল তোতন, যার বুকের মধ্যে বাঘ থাকলেও পোকা দেখলে চেঁচিয়ে উঠে। “ভূত হলে তো…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    একটা সাইকেলের স্মৃতিকথা

    সুদীপ্ত চৌধুরী পর্ব ১ আমার জন্ম হয়েছিল এক গরম দুপুরে, হাওড়ার একটি ছোট গ্যারেজের ভেতর। চারপাশে ধুলো, কাঠের গন্ধ, আর যন্ত্রপাতির আওয়াজ। তখন আমি কিছুই বুঝতাম না—শুধু টের পাচ্ছিলাম, কিছু একটা নতুন হচ্ছে। লোহা, রাবার আর রঙের গন্ধে ভরা সেই অদ্ভুত পরিবেশে কেউ আমাকে তৈরি করছিল, নিঃশব্দে, নিখুঁতভাবে। আমার কঙ্কাল জুড়ে নিচ্ছিল একে একে চাকা, হ্যান্ডেল, প্যাডেল। আমার গায়ে পড়ছিল চকচকে লাল রঙ, ঠিক যেন একটা নতুন জামা। সেই রঙে আমার আত্মা খুঁজে পেল নিজেকে। আমার গায়ে প্রথম স্পর্শ দিয়েছিল একটি খুদে হাত—সে ছিল শিবু, বছর আটেকের এক ছেলেমানুষ। ওর বাবা সেই গ্যারেজে কাজ করত, আর আমাকে তৈরি করেছিল তাঁরই…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গহনপুরের গুপ্তধন

    অর্ণব গুহ অধ্যায় ১: হারিয়ে যাওয়া নোটবই গহনপুর – নামটায় এক রকম রহস্য আছে। বাঁকুড়া জেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটার ইতিহাস কতদূর ছড়িয়ে, কেউ তা স্পষ্ট বলতে পারে না। জঙ্গলে ঘেরা, পিচঢালা রাস্তা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানেই এই গহনপুর। গ্রামের মধ্যে এখনও কিছু টালির ছাউনি ঘর, একটা ভাঙা জমিদার বাড়ি আর একটা প্রাচীন শিবমন্দির—কোনটা কবে তৈরি, সঠিক কেউ জানে না। সেই গহনপুরেই পৌঁছল তিনজন বন্ধু—সুদীপ্ত, ঐন্দ্রিলা আর বাপি। কলকাতার স্কুলজীবনের বন্ধুত্ব এখন কাজের চাপে একটু আলগা হলেও, এই রহস্যময় আমন্ত্রণ তাদের আবার এক করল। “এই বাড়িটা তো একেবারে হন্টেড সিনেমার মতো!”—বাপি গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে। ঐন্দ্রিলা একটু…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গুপ্তধনের ছায়ায়

    অর্ণব গুহ পর্ব ১: পুরনো পাতার গন্ধে বৃষ্টির পর বিকেলের আলোটা যেন গড়বেতার আকাশে রূপকথার পর্দা টেনে দিয়েছে। মাটি থেকে ধোঁয়ার মতো জলীয়বাষ্প উঠছে, যেন মাটিও নিঃশ্বাস নিচ্ছে। রিমি জানালার পাশে বসে ছুঁয়ে দেখছিল তার ঠাকুরদার পুরনো নোটবুকটা। হলুদ হয়ে যাওয়া পাতাগুলোর গায়ে ঘামের মতো ছাপ, পুরনো কালি ঝাপসা, কিন্তু কিছু লেখা এখনও পরিষ্কার— “যদি খুঁজে পাও সেই লাল পাথর, তার নিচে শুয়ে আছে কুড়ি কুড়ি স্বর্ণমুদ্রা—বজ্রসেনের রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার। কিন্তু তার আগে পেরোতে হবে বাঘের গুহা, মৃত জলের কুয়া, আর রক্তলাল মহুল গাছ।” রিমি একগাল হেসে উঠে চিৎকার করে ডাকল, “আকাশ! ঈশান! তুহিন! তোরা একবার দেখ তো!” আকাশ, যে…

  • Bangla - ভ্রমণ

    স্বাদের পথচলা

    ঐশী মল্লিক শুরুর চা, শুরুর স্বপ্ন   শহরের ঘুম তখনও পুরোপুরি ভাঙেনি। কলকাতার গলি গলি জেগে উঠছে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে। হাওড়ার চায়ের দোকানগুলোর মধ্যে অন্যতম লালদার ছোট্ট দোকান। ছোট টিনের চালা, কাঁচের বয়ামে বিস্কুট, আর সিগারেটের গন্ধে ভাসা একটা সকাল। এখান থেকেই শুরু আমাদের পথচলা—স্বাদের পথে, মানুষের পথে, গল্পের খোঁজে।   আমরা পাঁচজন। আমি ঐশী, আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী রিমা, ওর বর রজতদা, আমার ভাই নীল আর ড্রাইভারের আসনে থাকা বিজয়। আমাদের গন্তব্য—ডুয়ার্স, শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং। তবে লক্ষ্যটা শুধু জায়গা দেখা নয়। লক্ষ্য হলো—প্রত্যেক জায়গার খাবার চেনা, অনুভব করা। তাই তো আমরা একে বলছি ‘খাবার-ভ্রমণ’, বা সহজ কথায়—স্বাদের পথচলা।  …

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    অচেনা বন্ধুত্ব

    ইন্দিরা দত্ত পর্ব ১: জানলার ওপারে বেলেঘাটা অঞ্চলের পুরনো এক বাড়ির জানালায় বসে আছেন অরুন্ধতী সেন। বয়স প্রায় পঁচাত্তর। বিধবা, প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা। একটা সময় ছিল যখন তিনি ছিলেন ‘ম্যাডাম সেন’ — প্রয়োজনে কঠোর, কিন্তু কোমল হৃদয়বিশিষ্ট এক আদর্শ শিক্ষিকা। এখন তিনি শুধু অরুন্ধতী — একা, নিঃসঙ্গ, আর অপেক্ষায় থাকেন রোজ দুপুরে ডাকপিয়নের গলার আওয়াজ শোনার। তাঁর ছেলে সৌরভ আমেরিকায় চাকরি করে। মেয়ে অদিতি দিল্লিতে থাকে, সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বছরখানেক আগে একবার এসেছিল… তারপর আর ফেরা হয়নি। অরুন্ধতী এখন বেশিরভাগ সময় বই পড়ে কাটান। তবে মাঝে মাঝে সে বইয়ের পাতাগুলোর ফাঁকেও যেন খুঁজে ফেরেন কারও কণ্ঠস্বর, কেউ যেন ডাকে—“মা…” একদিন,…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    বাতাসিয়াপুর হত্যাকাণ্ড

    জয় ভট্টাচার্য চুপচাপ বাতাস কালিম্পঙের এক কোণে, কুয়াশা মোড়া ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম বাতাসিয়াপুর। চারদিকে পাহাড়, গাছগাছালি আর নিঃস্তব্ধতা—শহরের ব্যস্ততা থেকে যেন একেবারে পালিয়ে আসার জায়গা। ঠিক সেখানেই শীতের ছুটিতে ঘুরতে এসেছিল চার বন্ধু—সৌরভ, অরিত্র, তিয়াসা আর মেহুল। দার্জিলিং থেকে ছোট গাড়িতে এক ঘণ্টার পথ পেরিয়ে, শেষ বিকেলে তারা পৌঁছালো বাতাসিয়াপুর। গ্রামের একদম কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো কাঠের বাংলো—“হিমালয় ভিউ লজ”। নামের সঙ্গে মিলে বাংলোর বারান্দা থেকেই দেখা যায় কুয়াশার চাদরে মোড়া পাহাড়ের চূড়া। বাংলোর কেয়ারটেকার বুড়ো গনেশবাবু, মুখে চিরকালীন ধূসরতা। “রাতের দিকে বেশি বাইরে যাইয়েন না বাবুরা,” বললেন চা এগিয়ে দিতে দিতে। “এই পাহাড়ে কুকুরও কখনও কখনও হাওয়ায় ঘেউ ঘেউ…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প - ভ্রমণ

    কাশ্মীর, চারটি হৃদয়

    ঋতা মিত্র উত্তরের ডাক কলকাতার এক গরম বিকেল। ছেলের হোমওয়ার্ক শেষ করিয়ে চায়ের কাপ হাতে বসেছিল মেঘনা। জানলার ধারে বসে থাকা সেই একচিলতে সময়টা তার খুব নিজের। সোফার পাশের টেবিলে পেতলের কেটলিতে আধখানা কফি পড়ে আছে, ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মনের ভেতরটা তখন উত্তপ্ত—আবারও সেই পুরনো ক্লান্তি, কেটে যাওয়া দিনের ভার। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল—ইরা কলিং। “হ্যাঁ বল, তুই কেমন আছিস?” মেঘনা কথা বলতে বলতেই জানলার বাইরে তাকাল। “শুনবি? এবার আর ভাবনা নয়—চল, পালিয়ে যাই। দু-একদিনের জন্য, কাশ্মীর ঘুরে আসি?” ইরার গলায় যেন একটা অদ্ভুত আবেগ, মেঘনার শরীরের ভিতর দিয়ে ঠান্ডা একটা শিহরণ বয়ে গেল। “সত্যি বলছিস?”…