ঋদ্ধিমান গুহ ১ বেঙ্গালুরুর ব্যস্ততার ভিড়ে অদ্বৈতের দিন শুরু হয় একঘেয়ে অফিসের কাজ দিয়ে, শেষ হয় আবার সেই অফিসেই জমে থাকা ফাইলের পাহাড়ে ডুবে থেকে। কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে রাত কেটে যায়, কফির কাপে ভর করে শরীর চালায়, কিন্তু ভেতরের শূন্যতাকে কিছুতেই পূর্ণ করতে পারে না। উত্তর কলকাতার ছেলেটি ছোটবেলা থেকে কখনো ভাবেনি—শহরের এত দূরে একা পড়ে থাকবে। কাজের চাপ, নতুন জায়গার অনিশ্চয়তা, আর নিঃসঙ্গতা মিলে তাকে ধীরে ধীরে ক্লান্ত করে তোলে। তবু প্রতিদিন রাত নামলেই একটুখানি আলো জ্বলে ওঠে—সোহিনীর কল। ফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা তার মুখই যেন অদ্বৈতের দিনের সমস্ত ক্লান্তি মুছে দেয়। কিন্তু এই দেখা শুধুই কাঁচের দেয়ালে…
-
-
অনন্যা ঘোষ ১ কলকাতার শরতের বিকেলটা ছিল অদ্ভুত নীরব। কলেজ থেকে ফিরে ঈশা নিজের ছোট্ট ঘরের জানলার ধারে বসে ছিল, হাতে ল্যাপটপ। শাদা কাপে চা ধোঁয়া তুলছিল, আর পাশে খোলা ছিল ফেসবুক। সাহিত্যের প্রতি ঈশার টান বরাবরই প্রবল, তাই সে কিছুদিন আগে ফেসবুকের একটি লিটারেচার গ্রুপে যোগ দিয়েছিল। ওই গ্রুপে মাঝেমাঝেই নতুন নতুন কবিতা, গল্প, আলোচনার পোস্ট আসত, আর ঈশা সেগুলো পড়ে আনন্দ পেত। সেদিনও সে স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ একটি কবিতার ওপর চোখ আটকে গেল। কবিতার নাম ছিল—“অচেনার ছায়া।” কবিতার ভাষা ছিল সহজ অথচ গভীর, যেন শহরের ব্যস্ত রাস্তাঘাট থেকে দূরে কোনো নিঃশব্দ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের একাকিত্বকে কাগজে…
-
ঊর্মি ভট্টাচার্য কলেজের ক্যান্টিনটা ছিল একটা ছোট আকারের গম্বুজ ঘর, দেয়ালগুলোয় বহুদিনের ধুলো জমে মাটি রঙ ধারণ করেছিল, আর মাঝখানে কয়েকটা কাঠের বেঞ্চ টেবিল—যেখানে সারাদিন ধরে শব্দের তরঙ্গ আর চায়ের ধোঁয়া মিশে থাকত এক অপূর্ব গন্ধে। দুপুর তখন থমকে থাকা সময়ের মতো, ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছে, ছেলেমেয়েরা যে যার মতো ব্যস্ত। কিন্তু এক কোণে, জানলার ধারে বসেছিল মেয়েটি—সায়নী। গা ছোঁয়া সাদা-ধূসর সালোয়ার, চোখে পাতলা ফ্রেমের চশমা, আর কোলের উপর একটা নীল রঙের ডায়েরি রাখা। তার সামনে রাখা একটা লাল চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উঠছে, আর সেই ধোঁয়ার ফাঁক দিয়ে সে বাইরে তাকিয়ে—কলেজের পুরনো গাছগুলোর দিকে, যাদের পাতায় তখনো বৃষ্টির জল…