• Bangla - রহস্য গল্প

    অদৃশ্য ডাকপিয়ন

    অনিরুদ্ধ পাল পর্ব ১ : অচেনা খাম কলকাতার রাত তখনও ভিজে আছে বৃষ্টির রেশে। অগণিত গলিপথের আলো ঝাপসা হয়ে আছে টলোমলো কুয়াশার মতো বাষ্পে। উত্তর কলকাতার প্রাচীন গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভাঙাচোরা এক ডাকবাক্সে কে আর খাম ফেলে যায় আজকাল? লাল রঙ চটকে গেছে, গায়ে শ্যাওলা জমেছে, ছিদ্র দিয়ে ইঁদুর ঢোকে আর বেরোয়। বহু বছর ধরে অচল পড়ে থাকা সেই বাক্সটা হঠাৎই যেন আজ তাকে ডাকছিল। রুদ্র সেদিন রিপোর্টিং শেষে ফেরার পথে এক সিগারেট ধরাতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছিল বাক্সটার সামনে। চোখে পড়ে অদ্ভুত এক খাম—মোটা বাদামি কাগজে মোড়া, তার নামটা লেখা একেবারে কালো কালি দিয়ে স্পষ্ট অক্ষরে: “রুদ্র সেন”। বুকের…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গঙ্গার ধারে খুন

    দেবমাল্য গুপ্ত ভোরবেলা গঙ্গার ঘাট সবসময়ই যেন অদ্ভুতভাবে রহস্যময় হয়ে ওঠে। শীতল হাওয়া জলের গায়ে তরঙ্গ তুলে দিচ্ছিল, দূরে পুরোনো মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসছিল কুয়াশার আড়ালে, আর ঘাটে কিছু ভোরের সাধক গঙ্গাস্নানে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু সেই নিরিবিলি সকালে হঠাৎই এক চিৎকার ভেদ করে গেল চারপাশের নীরবতা। একজন মাঝি প্রথমে জলে ভাসতে থাকা অচেনা দেহটি দেখতে পায় এবং দৌড়ে লোক ডাকতে শুরু করে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই গঙ্গার ঘাটে ভিড় জমে যায়। সবাই শিউরে উঠল, কারণ দেহটি একেবারে অচেনা কারো নয়—চেনা শহরেরই একজন, ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ লাহিড়ী। মানুষটি গতকাল রাত পর্যন্ত শহরে দোকানে বসেছিলেন, এমনকি অনেকেই তাকে দেখেছে স্থানীয় ক্লাবে। অথচ আজ সকালে…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    নদীর গোপন নাম

    ঋতুপর্ণা দাশগুপ্ত পর্ব ১: নদীর ডাক গাঁটা যেন অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় মোড়ানো ছিল। শীতল দমকা হাওয়া ভোরের আকাশে নীলচে ছাপ রেখে দিত আর দূরে শাল-সেগুনের বনের ফাঁক দিয়ে ভেসে আসত নদীর গুঞ্জন। এই নদীর নাম ছিল কুলেশ্বরী। তবে মাধুরী ছোটবেলা থেকেই জানত, নামটা পুরোটা নয়—এই নদীর আরেকটা নাম আছে, একেবারে গোপন নাম, যা শুধু রাতের আঁধারেই ফিসফিস করে শোনা যায়। মাধুরী তখন দশ বছরের মেয়ে। প্রতিদিন বিকেলে সে বাঁশের ডাল দিয়ে বানানো কঞ্চির দোলনা নিয়ে নদীর ধারে যেত। নদীর পাড়ে বসেই তার পড়াশোনা, খেলাধুলো সবকিছু। কিন্তু এক পূর্ণিমার রাতে, হঠাৎ করেই সে শোনে অদ্ভুত একটা আওয়াজ—যেন নদী গুনগুন করছে। প্রথমে ভেবেছিল…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অসীমের ঘড়ি

    ঋত্বিক দে অসীম দে শ্যামবাজারের পুরোনো গলির ভেতরে ছোট্ট কিন্তু নামী জুয়েলার্স দোকানের মালিক। বয়স পঁয়ত্রিশের কোঠায়, কিন্তু চোখেমুখে তার বয়সের চেয়ে অনেক বেশি ক্লান্তির ছাপ। ব্যবসাটা তার নিজের তৈরি, বাবার থেকে পাওয়া নয়, তাই দোকানের প্রতিটি শোকেস, প্রতিটি রুপোর গহনা, প্রতিটি কাচের তাকের পেছনে লুকোনো আছে অসীমের বহু বছরের ঘাম আর অভিজ্ঞতা। সে বিশ্বাস করে প্রতিটি রত্নের নিজস্ব ইতিহাস থাকে, প্রতিটি অলঙ্কার এক-একটি অদৃশ্য গল্প বহন করে। তাই যখনই কোথাও কোনো নিলামের কথা শোনে, তার ভেতরে এক অদ্ভুত কৌতূহল জন্ম নেয়। সেই কৌতূহলই তাকে নিয়ে গেল বৌবাজারের এক পুরোনো নিলামঘরে। ভাঙাচোরা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অসীম অনুভব করছিল,…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    ছায়ার সাম্রাজ্য

    আরিফ রহমান পর্ব ১: কাবুলের ধ্বংসস্তূপে জন্ম বাতাসে ধুলো আর বারুদের গন্ধ মিশে ছিল। কাবুল শহরের ভাঙাচোরা ইট, অর্ধেক গুঁড়িয়ে যাওয়া মসজিদ আর অগ্নিদগ্ধ গলিপথ যেন যুদ্ধের পরও যুদ্ধের গল্প শুনিয়ে যাচ্ছিল। একসময় যেসব পথে শিশুরা হেসে খেলত, সেসব গলিতে এখন কেবল বুটের শব্দ আর ভয়ে কাঁপতে থাকা মানুষের নিশ্বাস। যুদ্ধ এখানে কোনো সংবাদপত্রের শিরোনাম নয়—এখানে যুদ্ধ ছিল দৈনন্দিন জীবন। সে ভাঙাচোরা গলির এক অন্ধকার কোণে, জন্ম নিল এক শিশু। জন্মের সময় তার চারপাশে কোনো আনন্দ ছিল না, বরং চারদিকে বেজে উঠেছিল কামানের গর্জন। মায়ের রক্তাক্ত শরীর, আতঙ্কিত চোখ—সেই ছিল শিশুটির প্রথম পৃথিবী দেখা। নাম রাখা হলো ইমরান। তার জন্ম…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চৌধুরীবাড়ির শেষ অতিথি

    তিথি বসু পর্ব ১: সেই ভগ্নপ্রায় দরজার শব্দ নদীয়ার কুয়াশা ঢাকা বিকেলে ট্রেন থেকে নামতেই শুভমর মনে হলো সময়টা যেন হঠাৎ করে থমকে গেছে। বাইরের হাওয়া ঠান্ডা, কিন্তু বাতাসের মধ্যে কিছু একটা গুমোট। সে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রিকশাওয়ালার দিকে এগোল। “চৌধুরীবাড়ি যাবেন?” জিজ্ঞেস করতেই রিকশাওয়ালার মুখটা কেমন থমথমে হয়ে গেল। “চৌধুরীবাড়ি? ওই যে শ্মশানের পাশে যেটা?” শুভম মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, ওটাই। আমি গবেষণার জন্য এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি আছে।” রিকশাওয়ালা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “আমি ওইদিক যাই না বাবু। ওখানে এখন কেউ থাকেও না।” শেষমেশ অনেক বোঝানোর পরে একজন রাজি হলো। অন্ধকার নেমে আসছিল, আর চৌধুরীবাড়ির পথটা খড়ি গাছ…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প - ভূতের গল্প - সামাজিক গল্প

    দেবী

    প্রজ্ঞা সেনগুপ্ত এক সূর্য তখন পাহাড়ের আড়ালে গিয়ে অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতিতে, আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে কমলা রঙের ছায়া। গ্রামের শেষপ্রান্তের কাঁচা রাস্তাগুলো ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসছে। গরু-বাছুর ফিরেছে খুঁটির কাছে, ধোঁয়া উঠেছে রান্নার চুলায়। এমন সময় একটা ছায়ামূর্তি—কোনওমতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে, কাপড় ছেঁড়া, হাঁটা কাঁপা কাঁপা। তার মুখটা ঢাকা, কিন্তু চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ স্পষ্ট। কেউ জানে না কোথা থেকে এল, বা কী ঘটেছে। অনেকে জানতেও চায় না। গ্রামের মধ্যে কানাঘুষো শুরু হল, “ওই তো সরকারবাড়ির পেছনের পথ দিয়ে আসছে! ওই তো রাধার কনিকা… বাঁচাও বাবা, আবার নাম জড়াবে গ্রামের।” কেউ জল এগিয়ে দিল না, কেউ তাকে…