অমিত ধর ১ সকালবেলার ট্রেন থেকে নেমে দলটি যখন বিষ্ণুপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পা রাখল, তখনো শহরের আকাশে ছিল কুয়াশার হালকা চাদর। শীতের সকালের সেই আর্দ্র ও শীতল বাতাসের মধ্যে দূরে কোথাও বাজছিল মন্দিরের ঘণ্টা, যা মিলেমিশে এক ধরনের মিষ্টি শান্তি এনে দিচ্ছিল মনকে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিল ধূসর কুয়াশার আচ্ছাদন, আর তার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছিল লাল ইটের প্রাচীন টেরাকোটা মন্দিরের মাথা, যেন ইতিহাসের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে। অরিজিৎ কাঁধের ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল—কুয়াশার মধ্যে উঁকি মারা শিখর, প্রাচীন অলঙ্করণে ভরা মন্দিরের দেওয়াল, আর সকালের হাটে আসা মানুষের ভিড়। প্রিয়া নোটবুক খুলে…
-
-
মধুরিমা বসু ১ অর্ণবের জীবন ছিল ভীষণ ব্যস্ততার, ভিড়ে ভরা শহরের একঘেয়ে ছন্দের। প্রতিদিনের যান্ত্রিক সকাল আর রাত তাকে যেন ধীরে ধীরে গ্রাস করছিল। অফিস থেকে বাড়ি, বাড়ি থেকে অফিস—এটাই তার জীবনের রুটিন হয়ে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে নিজের ভেতরে এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করত সে, যেন কোথাও কিছু হারিয়ে গেছে। এই শূন্যতাই তাকে শহর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল। তাই হঠাৎ করেই একদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল—শান্তি খুঁজতে পাহাড়ের কোলে যাবে। সে ঠিক করল, কোনো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে নয়, বরং এক প্রত্যন্ত গ্রামে যাবে, যেখানে শহরের কোলাহল নেই, শুধু প্রকৃতির নিশ্বাস টের পাওয়া যায়। ট্রেন থেকে নামার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিপে…
-
সৌমিক ভট্টাচার্য ১ পাহাড়ি রাস্তাগুলো যেন কোনও অজানা গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল অভিজিৎ সেনগুপ্তকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক, লোকবিশ্বাস এবং পাহাড়ি সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘদিনের আগ্রহ ছিল তার। একটি গবেষণা প্রকল্পের সূত্রে সে এবার রওনা দিয়েছিল উত্তরবঙ্গের এক অদ্ভুত দূরবর্তী গ্রামে—সিংরিপাহাড়। ট্রেন থেকে নামার পর পায়ে হেঁটে, জিপে চড়ে, শেষমেশ খচ্চর পিঠে চেপে পৌঁছাতে হয়েছিল তাকে সেই দুর্গম স্থানে। পাহাড়গুলো যেন দাঁড়িয়ে ছিল এক অভেদ্য প্রাচীর হয়ে—মানুষের সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন, অথচ নিজেদের মতো করে সাজানো এক অলৌকিক গ্রাম। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত ছোট্ট গ্রামটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ল ছায়াঘেরা গাছপালা, পাথরের বাড়ি, আর সন্ধ্যার আগেই বন্ধ হয়ে আসা কুড়িটি দরজা-জানালা। অভিজিৎ…
-
অধ্যায় ১: চিঠির মতো নিঃশব্দ পাহাড়ে ওঠার পথে হঠাৎ করে কুয়াশা ঘন হয়ে এল। ট্রেকিং পাথ বেয়ে যে ঘোড়ামারা ডাকে ওঠা গ্রামের দিকে এগোচ্ছিল অভিজিৎ সরকার, তার চারপাশে যেন হঠাৎই সময় থমকে গেল। বালির কাঁধে বয়ে আনা ছোট স্যুটকেস, একটা জলচৌকো ব্যাগ আর হাতে ধরা সরকারি ফাইলের খাম—সবই ভার হয়ে উঠল যেন হঠাৎ। এই ডাকঘরটা, পুরুলিয়ার এক পাহাড়ি অঞ্চলের প্রান্তে অবস্থিত, বহু বছর আগেই তালাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে রেকর্ডে লেখা ছিল। কিন্তু হেড অফিস থেকে অদ্ভুত এক চিঠির সূত্র ধরে, তাকে বদলি করা হল এই ‘বন্ধ’ ডাকঘরে। সে ভেবেছিল হয়তো কোনো ফাইলের গরমিল, অথবা ভুল পদক্ষেপ। কিন্তু বদলিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন…