অনির্বাণ সেন পর্ব ১ কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে এক বিশাল আবাসন—গ্লাসের বারান্দা, রঙিন আলো, লিফটে ওঠানামার শব্দে ভরা। সেখানকার অষ্টম তলার ফ্ল্যাটে থাকে দত্ত পরিবার। সুদীপ্ত দত্ত একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ অফিসার, মাসের শেষে তার অ্যাকাউন্টে যে বেতন জমে, তাতে অনায়াসেই চলে যায় তাদের তিন সদস্যের সংসার। তার স্ত্রী মৌসুমি, একসময় কলেজে ইংরেজি পড়াতেন, কিন্তু এখন ঘরের দেখাশোনাই তার প্রধান কাজ। মেয়ে ঐশী—নবম শ্রেণির ছাত্রী, পড়াশোনায় মেধাবী, আঁকতে ভালোবাসে, আর মাঝে মাঝে পিয়ানো বাজাতে শিখছে। ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে তাকালে দূরে দেখা যায় আকাশচুম্বী সব টাওয়ার, আর একটু নিচে তাকালেই উল্টো দৃশ্য। ঝুপড়ি ঘরগুলোর ছাউনিতে টিন, কোথাও পলিথিন, কোথাও বা ভাঙা বাঁশ…
-
-
অনিন্দিতা ধর প্রথম পর্ব: “শেষ নয় শুরু” মধুরিমা বসে ছিল তার রুমের ছোট্ট সাইজের টেবিলের সামনে। হাতের কাপটি ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তার চোখের সামনে কিছুই স্পষ্ট ছিল না। এই কয়েক মাস ধরে, সে যেন এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রোহিত, তার স্বামী, প্রায়ই অফিসে ব্যস্ত থাকে, আর সে নিজে বেশিরভাগ সময় একাই থাকে। তার জীবনে কিছুই বদলানো হয়নি, কিছুই নতুন ছিল না। তার দিনগুলোর মধ্যে একঘেয়েমি ভর করেছে, আর তাকে আরও একাকী করে তুলেছে। যতবারই মধুরিমা আ鏈ুলের দিকে তাকায়, ততবারই মনে হয় যেন সে কিছু খুঁজছে—একটি চমক, একটি অজানা দিশা। তাকে যেন বিশ্বাস করতে বলেছিল যে,…
-
ব্রততি সুর অংশ ১: ব্রাশ আর ক্যানভাসের মিলন ধোঁয়া ধোঁয়া আলোর মাঝে, তেলরঙ আর টারপেনটাইনের মিশ্রিত গন্ধ বাতাসে ভাসছিল। পুরোনো কাঠের ঘ্রাণও মিশে গিয়েছিল তাতে, যেন স্টুডিওটা সময়ের সাথে নিজেকেই মুছে ফেলেছে। দেয়ালে রাখা বড় বড় ক্যানভাস, অপরিস্কৃত চিত্রকর্ম আর অসমাপ্ত প্রতিকৃতি গুলি নীরবতার সঙ্গেই আলাপ করছিল। এটি ছিল একান্ত এক জায়গা, যেখানে শিল্পী তার আত্মাকে প্রতিটি ব্রাশের টানে খুলে রাখে। অনির্বাণ রায়, আশি বছর বয়সী এই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, তাদের অন্যতম। তিনি এবারও তার এক অসাধারণ চিত্রকর্মের শেষের দিকের বিস্তারিত কাজ করছিলেন। তার হাত একটু কাঁপছিল, কিন্তু তাতে কোনো হুঁশ ছিল না। চোখের উপর মোটা চশমা হেলে পড়েছিল, কিন্তু তাকে…
-
ঊর্মি পাল অধ্যায় ১: “অশ্রু ও বিষ” অমৃতা এক কঠিন সন্ধ্যায় ঘরের জানালার কপাট বন্ধ করে বসেছিল। তার চারপাশে সন্ধ্যার অন্ধকার পসরানো শুরু করেছে, কিন্তু তার মনে এখনও মায়ার মতো সাদা আলোয় একটা বিষণ্ণ রূপের প্রতিফলন। এক সময় সে স্বপ্ন দেখেছিল, কী সুন্দর হবে তার জীবন! কিন্তু এখন তার সামনে শুধু একটা দীর্ঘ অন্ধকার পথ, যেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়। তার জীবনের সবকিছুই যেন একটা অদৃশ্য বেষ্টনীতে আটকে গেছে, পরিবারের চাহিদা, তার স্বামী রোহিতের প্রত্যাশা, তার সন্তান মাহির স্নেহের আগ্রহ—এসব কিছু মিলে এক ভারী বোঝা হয়ে গেছে। রোহিত একজন সফল ব্যবসায়ী, কিন্তু তার সাফল্যের পেছনে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।…
-
শুভেন্দু বসাক তান্ত্রিকের অভিশাপ শুভেন্দু বসাক নিষিদ্ধ শক্তি শুভ, এক তরুণ তান্ত্রিক ছাত্র, জীবন থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করছিল। তার সাধনাতে গভীরতার জন্য সে ছটফট করছিল, দিনের পর দিন চূড়ান্ত নিষ্ঠার সাথে তন্ত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন করছিল। সে জানত যে তার ভিতরের শক্তি শুধু তাকে নয়, পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে, যদি সে সেই শক্তির সঠিক ব্যবহার জানত। কিন্তু কেউ জানত না, যে তার তন্ত্র সাধনা শুধু এক ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এর পরিণতি তাকে এক অন্ধকারে নিয়ে যাবে, যা সে কখনো কল্পনা করতে পারেনি। তন্ত্র সাধনায় দীক্ষিত হওয়ার পর, শুভ একদিন শিখে গেল একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মন্ত্র—এটি তার সাধনা…
-
অনির্বাণ ঘোষ অদ্ভুত ধ্বনি গাঁয়ের শেষ সীমানায়, ঘন জঙ্গল আর বুনো পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল বহুতলা ভুতের বাড়ি, যেখানে কোনোদিন মানুষের পা পড়েনি। গাঁয়ের বয়স্করা বলতেন, “এ বাড়ি শাপিত, এখানে বাস করা লোকের ভাগ্য বিপর্যস্ত।” কিন্তু আধুনিক যুবকরা এসব অন্ধবিশ্বাসকে গা ছেড়ে দিয়েছিল, আর তার মধ্যে এক জন ছিল আরিফ। এক রহস্যপ্রেমী সাংবাদিক, যিনি শহর থেকে এই গ্রামে এসেছিলেন কিছু অদ্ভুত ঘটনা অনুসন্ধান করতে। আরিফের প্রথম দিনের সন্ধ্যায় যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্ত যাচ্ছিল, তখন গাঁয়ের বাজারের এক কনফেকশনারি দোকানে বসে শুপ্রা নামক এক স্থানীয় মেয়ের সাথে পরিচয় হলো। শুপ্রা কথায় কথায় বলল, “আপনি কি বহুতলা ভুতের বাড়ি সম্পর্কে জানেন?”…
-
অনিমা সেন পর্ব ১: প্রথম দেখা কলকাতার এক ঐতিহ্যবাহী কফি হাউসে, একটি স্বাভাবিক বিকেল, যেখানে মানুষের ভিড় এবং কফির গন্ধ মিশে এক অদ্ভুত মাধুর্যে পরিণত হয়, সেখানে প্রথমবারের মতো দেখা হয় নিলয় এবং রাধিকার। সেদিন রাধিকা কোনো কারণে তার usual জায়গা ছাড়িয়ে অন্য একটি টেবিলে বসেছিল। কফি হাউসে এসেছে তার বন্ধুদের সাথে কিছু সময় কাটাতে। তবে, তার মনের মধ্যে কিছু ছিল, যেটি সেদিন সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় পেয়ে গিয়েছিল। সে আসলে কিছুটা বিধ্বস্ত, কিছুটা ক্লান্ত, আর ঠিক তখনই নিলয়ের চোখ পড়েছিল তার ওপর। নিলয় ছিল এক উচ্চাভিলাষী তরুণ। লেখক হতে চেয়েছিল, কিন্তু সে এখন এক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। সে…
-
প্রিয়া সরকার গ্রামের মাঝে যখন একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব উঠলো, তখন তা সাধারণত গ্রামবাসীদের মধ্যে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হিসেবে ভাবা হয়। সেতু হবে দুই গ্রামের মধ্যে, একটি ছোট গ্রাম, অপরটি বড়। দুটো গ্রামের মানুষদের মাঝে দূরত্ব ছিল শুধু শারীরিক নয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিকও। গ্রামগুলো একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল এবং একে অপরকে প্রায় কখনোই বুঝতে পারত না। আফতাব রহমান, এক তরুণ নেতা, জানত এই সেতুর মাধ্যমে শুধু দূরত্বের অভাবই পূর্ণ হবে না, বরং দুই গ্রামের মধ্যে এক শক্তিশালী সামাজিক ঐক্যও প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু, গ্রামবাসীরা জানত না যে, তাদের মধ্যে এক দীর্ঘকাল ধরে থাকা বিভেদ, সমাজের ঐতিহ্য এবং শ্রেণীভেদ এমন…