• Bangla - প্রেমের গল্প

    চুপচাপ শুভ

    আত্রেয়ী প্রধান মফস্বলের ছোট্ট স্টেশন। চারপাশে ধুলো উড়ছে, শিউলি গাছের নিচে পড়ে থাকা সাদা ফুলে ভরে গেছে পথ। বিকেলের আলো ধীরে ধীরে নেমে আসছে, আকাশের রং লালচে হয়ে উঠছে। এই সময়টায় স্টেশনটা যেন অন্যরকম লাগে—না শহরের কোলাহল, না গ্রামের নির্জনতা। মাঝামাঝি কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা এই স্টেশন এক অদ্ভুত নীরবতার মধ্যে মোড়া। অমৃতা প্রায়ই এখানে আসে। তার কলেজ থেকে হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনে পৌঁছোতে সময় লাগে পনেরো মিনিট। কেন আসে, সে নিজেও ঠিক জানে না। হয়তো এই স্টেশনের নীরবতা তার ভেতরের অস্থিরতাকে শান্ত করে। হয়তো ট্রেনের হুইসেল শুনলেই মনে হয় সে একদিন অচেনা কোথাও চলে যাবে, যেখানে কেউ তাকে চিনবে না। আজও…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চুপচাপ তোমার শহর

    অনন্যা চক্রবর্তী পর্ব ১ : স্টেশন নম্বর সাত শীতের বিকেল নামছিল একরকম ধীর অনুতাপে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের চতুর্থ প্ল্যাটফর্মটা অকারণে নির্জন হয়ে উঠেছিল — যেন এই শহর, এই ট্র্যাক, এই হুইসেল, এই কুয়াশার ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়েছে কারও একান্ত চিঠির মতো কিছু, যা কেউ পড়ে না, তবুও লিখে যায়। ঈশিতা প্রথম দিন এই স্টেশনের এক কোণে দাঁড়িয়ে ভাবেনি, সে কবে নিজে এই শহরের নির্জনতায় মিশে যাবে। তার বুকে তখনও কলকাতার জ্যাম ছিল, ট্রামলাইনের শব্দ ছিল, আর ছিল ব্যস্ততা — যা ভেতরে ভেতরে তাকে ফাঁপা করে তুলছিল। দার্জিলিং কলেজ থেকে বদলি হয়ে এসেছেন একমাস হলো। কোয়ার্টারে বই খুলে বসতে গিয়ে যেসব…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    আকাশে দুটি তারা

    অন্বেষা সরকার অধ্যায় ১: মেট্রোর নীরবতা কলকাতার সকালগুলো যেন একই গানের একেকটা রেওয়াজ। ঘড়ির কাঁটা আটটা পঁচিশ বাজলেই শহরের বুকে এক অদৃশ্য কম্পন ছড়িয়ে পড়ে—ট্রামের ঘণ্টি, চায়ের দোকানের ধোঁয়া, রাস্তায় ছুটতে থাকা ট্যাক্সি, আর সব কিছুর মাঝে পাতালপুরীর সেই নীল রেললাইন, যেখানে প্রতিদিন নিয়মমাফিক নাম লেখায় লক্ষ লক্ষ যাত্রী। সেই যাত্রীদের মাঝে একজোড়া চোখ থাকে প্রায়ই একই জায়গায়—শিয়ালদহ থেকে শুরু করে মহাত্মা গাঁধী রোড পর্যন্ত, একটি নির্দিষ্ট কোচে, নির্দিষ্ট সময়ে। ঈশান বসু। বাদামি রঙের স্লিং ব্যাগে চেপে ধরা স্কেচবুক আর হেডফোনে বাজতে থাকা হেমন্তের পুরনো গান নিয়েই তার সকাল শুরু হয়। ওর চোখ দুটো সাদা আকাশের মতো, যেন প্রতিদিন কিছু…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    রেনকোটে কফি

    ঐশী সেনগুপ্ত পর্ব ১: বৃষ্টির ব্রেক কলকাতার জুলাই মাসের বৃষ্টি ঠিক যেন কাকেই বা কখন চমকে দেবে বোঝা যায় না। সকালে রোদ, দুপুরে গুমোট, আর বিকেল গড়াতেই যেন মেঘ ভিজিয়ে দিয়ে যায় ব্যস্ত মানুষগুলোর অবসরের ফাঁকফোকর। তিথি সিংহরায় ঠিক সাড়ে তিনটে নাগাদ নামল গেটস টেক পার্কের সামনে। তার ল্যাপটপ ব্যাগটা আজ অদ্ভুত ভারি লাগছে, হয়তো বা ভেতরের টেনশনটাই বেশি। আজ যে প্রেজেন্টেশনটা দিতে হবে, সেটা হেড অফিস থেকে সরাসরি এসেছে—এবং সঙ্গে এসেছে তিনটি কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। পা রেখেই সে বুঝল, মেঘ জমছে। “দুপুরের পরে এমন আবহাওয়ায় বরাবরই কিছু একটা হয়,” নিজের মনেই বলে উঠল তিথি। অফিস ক্যান্টিনটা প্রায় ফাঁকা। আরেকটা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    নীলপাহাড়ের নিচে তোমায় খুঁজে

    ঋতুপর্ণা চৌধুরী পর্ব ১: সেই দিনের আলো নীলপাহাড়ের গায়ে রোজ সন্ধ্যে নামে অদ্ভুত এক নরম রঙে। যেন আকাশ নিজেই তার ক্লান্তি গায়ে মেখে পাহাড়ের কোলে শুয়ে পড়ে। সেই রঙের নাম কেউ জানে না, কিন্তু ঊর্মির চোখে সে রঙের ছায়া আজও লেগে থাকে, বছর পেরিয়ে গেছে তবু। শিলারি-গাঁওয়ের গায়ে ছোট্ট কাঠের হোমস্টের বারান্দায় বসে সে দিনভর বই পড়ে। কিন্তু বইয়ের পৃষ্ঠায় শব্দগুলো যেন আবছা হয়ে আসে — যেন বই পড়ছে না, বরং অতীতের পাতাগুলোতেই বারবার হারিয়ে যাচ্ছে। তিন বছর আগে ঠিক এই জায়গাতেই প্রথম দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে — অয়ন। অয়ন, পুরো নাম অয়ন সেনগুপ্ত, ছিল উত্তর কলকাতার ছেলে। পলিটেকনিক কলেজে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    নীল বিকেলের প্রতিশ্রুতি

    ঋতুপর্ণা চৌধুরী   শান্তিনিকেতনের পথচলা রুদ্রর হাত থেকে নোটবুকটা প্রায় খসে যাচ্ছিল, বাইক থেকে নামার সময়। শান্তিনিকেতনের হেমন্তের রোদ যেন কাগজের পাতার উপর কবিতার মতো পড়ছিল। কলকাতা থেকে পালিয়ে আসার পর প্রথমবার মনে হচ্ছিল, বেঁচে আছে। রাস্তার ধারে তাল গাছের সারি, লাল মাটি, আর ভোরের মিষ্টি শীত—সব মিলিয়ে একটা পুরনো কবিতা মনে হচ্ছিল চারপাশটা। “তুই আবার কবিতা লিখতে এলি, না পালাতে?”—প্রশ্নটা বাবার কণ্ঠে এখনো মাথার মধ্যে বাজছে। রুদ্র কিছু বলেনি, শুধু বলেছিল, “একটু সময় দে, নিজেকে খুঁজে নিচ্ছি।” কলকাতার ঘিঞ্জি ফ্ল্যাট, মা’র গুমরে রাখা কান্না, বাবার ভ্রুকুটি—এসব থেকে পালিয়ে এখানে এসেই যেন আবার শ্বাস নিতে পারছে সে। রুদ্র থাকছে শান্তিনিকেতনের…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    পোড়া চিঠির গন্ধ

    সুস্মিতা লাহা পর্ব ১: জানালার ধারে বৃষ্টিটা সন্ধ্যা ছ’টার পর থেকেই নেমেছে, একটানা। জানালার কাঁচে ছোট ছোট ফোঁটা গলে পড়ছে, আর তৃষা একমনে তাকিয়ে আছে বাইরে। ফ্ল্যাটটা নিস্তব্ধ, অন্ধকারে ঢেকে গেছে। ঘরের ভেতরে হালকা হলুদ আলো জ্বলছে, কিন্তু তাতে মন ভরে না আজকাল। ঘড়িতে সাতটা পঁচিশ। অফিস থেকে ফেরার ট্রেনটা আজও মিস করেছে অমিত—এটা আর অবাক করে না তৃষাকে। বরং সে ধরে নিয়েছে, এসএমএসটা কখন আসবে, কখন শুনবে “আজ একটু দেরি হবে”—সে তো জানা কথাই। তৃষা জানে কাজ নয়, কাজের নামে অনন্যা। অমিতের সহকর্মী, ঝকঝকে স্মার্ট, নিখুঁত ঠোঁটের হাসি আর স্মোকি চোখের মেয়ে। সে মেয়েটাকে কখনো দেখেনি, শুধু অনুভব করেছে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    প্ল্যাটফর্ম নম্বর পাঁচ

    প্রীতম ১ শিয়ালদহ স্টেশনের বিকেলের চেনা ব্যস্ততা। প্ল্যাটফর্ম নম্বর পাঁচে লোকাল ট্রেন এসে দাঁড়ালে যে শব্দটা ওঠে—লোকের হাঁটার, announcements-এর কণ্ঠস্বর, ভ্যাপসা গরমে বাতাসের কম্পন—সেইসব কৌশিকের কাছে নতুন কিছু নয়। গত ছয় মাস ধরে, রোজ এই সময়েই, সে দাঁড়ায় একই জায়গায়—একটা পুরনো চায়ের দোকানের পাশের হলুদ রঙের খুঁটির সামনে। তার রুটিন প্রায় যন্ত্রের মতো: অফিস থেকে বেরিয়ে ট্রাম ধরে স্টেশন, তারপর সেই নির্দিষ্ট কোচে উঠে বাড়ি ফেরা। কিন্তু আজ কৌশিকের মন একটু অস্থির। সে ঠিক জানে না কেন। হয়তো কারণ, গত তিন দিন ধরে সে যার মুখ খুঁজছিল, সেই মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছে না। মেয়েটির নাম জানে না কৌশিক। তারা কোনোদিন কথাও…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    পাহাড়ের ওই পাশে

    রুদ্রনীল ধর পাঁচ বছর পর, চিলেরবস্তি টয় ট্রেনটা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে দিয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। জানালার ধারে বসে ঈশান পাহাড়ের কুয়াশার ভেতর তাকিয়ে ছিল। পাইনগাছগুলো যেন কুয়াশার শরীরে শীতের চাদর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক যেমন তার স্মৃতিতে তীর্থার চোখে ছিল এক ধরনের মেঘলা অভিমান। পাঁচ বছর। সময়টা কম নয়। তবু তার মনে হয় এইতো সেদিন, সে এই চিলেরবস্তির গলিগুলো ধরে হাঁটছিল তীর্থার সঙ্গে। পাথরের সিঁড়ি, পাহাড়ি চা, সন্ধ্যার আগেই ঘনিয়ে আসা অন্ধকার। সেই সব কিছু এখন কেমন একটা আবছা গল্পের মতো লাগে। তীর্থার সঙ্গে দেখা হয়েছিল একেবারে হঠাৎ করে। ঈশান তখন তার মাস্টার্সের রিসার্চ প্রজেক্ট নিয়ে পাহাড়ি পরিবেশ…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চুপকথার চিঠি

    ঈশিতা সেনগুপ্ত জানলার ওপারে কলকাতার উত্তরের এক পুরনো পাড়ায়, লাল ইটের তিনতলা বাড়িটা বহু দিনের সাক্ষী। উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুরনো ফুলদানি, জং ধরা বাইসাইকেল, আর সবথেকে দৃষ্টিনন্দন—একটা ঘন পাতা কদমগাছ। সেই গাছের নিচে প্রতিদিন সকালে বসে এক ছেলেটা, তার কোলে একটা স্কেচবুক, হাতে পেন্সিল—নিস্তব্ধ ঘোরে ডুবে যায় নিজের আঁকায়। ছেলেটির নাম অয়ন। অয়নের জীবনের ছন্দ বড়ো একঘেয়ে ছিল। আঁকাআঁকি আর কদমগাছের নিচে বসে থাকা ছাড়া সে খুব একটা কারো সঙ্গে মেশে না। পড়াশোনার দিন পেরিয়ে, সে এখন ঘরে বসেই গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে। পাড়ায় বহুদিনের বাসিন্দা, তাই কারও চোখে নতুন নয়। তবে হঠাৎ করেই সব বদলে গেল, যেদিন জানালায় সে…