মেঘলা সেনগুপ্ত পর্ব ১: কুয়াশার ভেতর প্রথম দেখা দার্জিলিংয়ের সকালটা যে রকম হতে পারে—একটু কড়া চা, টিনের ছাদের উপর টুপটাপ জল, আর দূরে টাটকা ধোঁয়ার মতো ভেসে থাকা মেঘ—তৃষা ঠিক ওই রকম এক সকালে পাহাড়ে পৌঁছোল। রাতের ট্রেনের ক্লান্তি চোখে গড়িয়ে থাকলেও তার ভেতরে ছিল সেই পুরনো অস্থিরতা—নতুন জায়গা, নতুন আলো, নতুন মুখ। ব্যাকপ্যাকে দুটো লেন্স, একখানা নীল নোটবুক, আর একটা পুরনো স্কার্ফ—ওর মা দিয়েছিল কলকাতা থেকে বেরোনোর আগে—“পাহাড়ে হাওয়া লাগে, গলা ঢেকে রাখবি।” তৃষা মুখে হালকা হাসি টেনে স্টেশনের ভিড় পার হল, বাইরে বেরিয়ে এল কুয়াশার ধোঁয়াটে পর্দা ভেদ করে। তার বুক-পকেটে লিখে রাখা ছিল একটি নাম—“অভয় শেরপা”—স্থানীয় গাইড।…
-
-
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় পর্ব ১: সন্ধ্যাবেলা এক অদ্ভুত দেখা দুমগাড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে এক বিশাল নদী, যেটি ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তের দৃষ্টান্ত—একটি জলপথ, যা কখনো কখনো জীবনের সেতু, আবার কখনো বিভাজক হয়ে ওঠে। নদী তার স্রোত নিয়ে চলে, কিন্তু মাঝখানে থাকে কাঁটাতার, দেয়াল—যা মানুষের সম্পর্ককে ভেঙে দেয়। এখন সন্ধ্যা। নদী পাড়ে বসে থাকে রিনা, তার পা বালির মধ্যে গাঁথা। চোখ দুটি যেন নদীর ওপারে, যেখানে তার প্রিয় ভিটে—বাংলাদেশ। এখানে সে অবৈধভাবে চলে এসেছে, তবে এখন নদীই তার জায়গা, নদীই তার আবেগের সমুদ্র। অপর পাড়ে, মাধুপুর গ্রামের এক তরুণ ছেলে—অর্জুন। সে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে আসে, কিছুটা নিঃসঙ্গতা আর…
-
ঋদ্ধিমান দাশ পর্ব ১: কাগজের পাতা, ধোঁয়ার রেখা ক্যাফে কুয়াশার দরজায় টাঙ্গানো পুরনো ঝোলানো ঘণ্টাটা বাজল, আরোহী ঢুকল ধীরে, একহাতে ব্যাগ, অন্য হাতে ফোন। অফিস থেকে সরাসরি আসছে, মাথাটা কেমন যেন ভারী, দিনের ঝাপসা ক্লান্তি তাকে গিলে খেতে চাইছে। কিন্তু এই ক্যাফেটার ভেতরটা যেন অন্যরকম—জানলার কাচ দিয়ে বিকেলের আলো এসে পড়ছে সোনালি ছায়ায়, দেওয়ালে ঝোলানো বইয়ের কভার আর পুরনো বাংলা গানের পোস্টার। তার প্রিয় টেবিলটা—ডান দিকের কোণারটা—আজ খালি। সে বসে, ব্যাগটা পাশে রাখে। ওয়েটার রাজু এসে জানতে চায়, “দিদি, এক কাপ স্পেশাল দার্জিলিং আর কালচার্ড বিস্কুট দেব?” “হ্যাঁ, আর একটা গরম জল দিও, মাথা ধরেছে,” বলে সে, চোখ বন্ধ করে…
-
তিয়াসা বণিক প্রথম পর্ব: প্রথম দিন, প্রথম চোখে দেখা নতুন কলেজ, নতুন শহর, নতুন চুলের কাটিং—সব মিলিয়ে তিথির ভিতরে একটা অদ্ভুত রোমাঞ্চ কাজ করছিল। প্রথম বর্ষের বাংলা বিভাগের ক্লাসটা শুরু হচ্ছে সকাল আটটায়। বাবা নিজে এসে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গতকাল ফিরেছেন হাওড়ায়, আর আজ সকাল থেকেই তিথি একা। একা, কিন্তু তেমন একা নয়, বুকের ভিতরে একটা আলগা ঢেউ উঠছে, যেন কিছু একটা ঘটবে। কলেজের গেট পেরিয়ে যখন প্রথমবার ক্লাসরুমে ঢুকল, তখন প্রায় সব ছাত্রছাত্রী ঢুকে গেছে। একটা কোণার বেঞ্চে জায়গা খুঁজে নিয়ে বসতেই পাশের জন একটু সরে এসে বলল, “তুমি নতুন? আমি রুদ্র।” একটা হালকা হাসি, চুলগুলো এলোমেলো, কিন্তু চোখে…
-
ঋতুপর্ণা বসু শীতের দুপুরে শীত তখন শহরের কাঁধে নেমে বসেছে। কলেজের লাইব্রেরির বাইরের কাঠের বেঞ্চে বসে ছিল অনিরুদ্ধ। তার পরনে ছিল ধূসর সোয়েটার, গলায় মাফলার, আর হাতে ছিল একটিমাত্র বই—জীবনানন্দ দাশের কবিতা। সে বইটা যেমন ছিল, তেমনই তার মনটাও—অদ্ভুত নিঃশব্দ, সময়ের গন্ধ মাখানো। বইয়ের পাতায় চোখ ছিল, কিন্তু মন ছিল বইয়ের বাইরের জগতে। প্রতিদিন বিকেলে লাইব্রেরির সিঁড়ি দিয়ে যে মেয়েটা নামে, আজও সে ঠিক সময়মতো নামছে। তার নাম প্রভা। ছিমছাম পরিপাটি সাজ, নীল-সাদা শাড়ি, কানে ছোট্ট ঝুমকা। চোখে এক অদ্ভুত আভা, যেন কোনো কথা না বলেই সে অনেক কিছু বলে যেতে পারে। অনিরুদ্ধ বহু দিন ধরেই তাকে লক্ষ করে, কিন্তু…