তিয়াসা রায় গরমের সন্ধ্যা নামছিল ধীরে ধীরে। দক্ষিণ কলকাতার পুরনো লাইব্রেরিটির জানালায় আলোর রেখা এসে পড়ছিলো এক আড়ষ্ট ঢেউয়ের মতো। ঈশান বসেছিল লাইব্রেরির কাঠের ডেস্কে—একদিকে ছড়িয়ে রাখা বইয়ের স্তূপ, অন্যদিকে তার নিজের নোটবুক। চারপাশে খুব বেশি পাঠক নেই আজ, শুধু দূরের কোণায় বসে একজন মাঝবয়সী মানুষ মগ্ন হয়ে পত্রিকা উল্টাচ্ছেন। এমন শান্ত সন্ধ্যা ঈশান ভালোবাসে, যখন পৃষ্ঠার শব্দ, দূরের হকারের আওয়াজ আর রোদের ক্লান্ত আলো মিলে এক অদ্ভুত গল্প রচনা করে চারপাশে। তার চোখ হঠাৎ জানালার বাইরে গিয়ে ঠেকে। রোদের ঝলকে ধরা পড়ে এক মেয়ে—চুপচাপ দাঁড়িয়ে, লাইব্রেরির জানালার পাশেই। তার হাতে একটা পুরনো বই, “শরতচন্দ্রের উপন্যাস সমগ্র – প্রথম খণ্ড।”…
-
-
তীর্থঙ্কর দেবনাথ রবিবারের সকালটা বরাবরই অন্যরকম। শহর যেন একটু দেরিতে চোখ মেলে, অটো-ট্যাক্সির হর্নের কোলাহল নেই, দোকানদারের গলা নেই, শুধু রয়েছে এক ধরনের অলস নিস্তব্ধতা, যেন শহরও একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। ঋজু চক্রবর্তী এই নিস্তব্ধতা ভালোবাসে, বরং সারা সপ্তাহ তার যান্ত্রিক অফিসজীবনের মাঝে সে শুধু এই একদিনের জন্য অপেক্ষা করে। তার ছোট্ট ব্যাচেলর ফ্ল্যাটের সাদা রঙের বারান্দাটা ঠিক উত্তর দিকে মুখ করা, আর সেই মুখোমুখি বারান্দাটিতেই থাকেন একজন মেয়ে—ঐশানী সেনগুপ্ত। বয়স হবে হয়তো পঁচিশ-ছাব্বিশ, প্রতিবার চুল বাঁধেন আলগা খোঁপায়, কখনো ফুলদানিতে গাঁদাফুল রাখেন, আর সকালবেলা বারান্দায় বসে মাটির কাপ হাতে চা খান। তারা কখনো কথা বলেনি, এমনকি একবারও নয়, কিন্তু এই…
-
সায়ন্তনী দে গরমের সন্ধ্যা নামছিল ধীরে ধীরে। দক্ষিণ কলকাতার পুরনো লাইব্রেরিটির জানালায় আলোর রেখা এসে পড়ছিলো এক আড়ষ্ট ঢেউয়ের মতো। ঈশান বসেছিল লাইব্রেরির কাঠের ডেস্কে—একদিকে ছড়িয়ে রাখা বইয়ের স্তূপ, অন্যদিকে তার নিজের নোটবুক। চারপাশে খুব বেশি পাঠক নেই আজ, শুধু দূরের কোণায় বসে একজন মাঝবয়সী মানুষ মগ্ন হয়ে পত্রিকা উল্টাচ্ছেন। এমন শান্ত সন্ধ্যা ঈশান ভালোবাসে, যখন পৃষ্ঠার শব্দ, দূরের হকারের আওয়াজ আর রোদের ক্লান্ত আলো মিলে এক অদ্ভুত গল্প রচনা করে চারপাশে। তার চোখ হঠাৎ জানালার বাইরে গিয়ে ঠেকে। রোদের ঝলকে ধরা পড়ে এক মেয়ে—চুপচাপ দাঁড়িয়ে, লাইব্রেরির জানালার পাশেই। তার হাতে একটা পুরনো বই, “শরতচন্দ্রের উপন্যাস সমগ্র – প্রথম খণ্ড।”…
-
এক দুপুরটা আজ যেন একটু বেশি নিস্তব্ধ। বাইরের রাস্তায় ছায়া পড়েছে সামনের অশ্বত্থ গাছের পাতায়; বাতাস নেই, শুধু একটা অনুজ্জ্বল আলো জানালার কাচে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। অদ্রিজা কোলের উপর রাখা বইটার পাতায় চোখ রেখে বসে আছে, অথচ পড়া নয়, সে দেখছে পাশের ফ্ল্যাটের ব্যালকনির ছায়া—যেখানে ছেলেটি, অনির্বাণ, ঠিক দুপুর বারোটা নাগাদ এসে দাঁড়ায় একটা মগ হাতে। প্রতিদিনের মতো আজও সে এসেছে। হালকা নীল শার্ট, খোলা চুলের মধ্যে একটুখানি এলোমেলোতা—যা দেখে অদ্রিজার মনে হয়, ছেলেটি বুঝি কোনও কল্পনার বই থেকে উঠে এসেছে। ছেলেটির চোখ থাকে নিচে, কিংবা দূরে কোথাও—তাকে দেখে না ঠিক, কিন্তু অদ্রিজার মনে হয়, ওর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা আসলে…
-
সুমনা বসাক (এক) নয়না সাহা প্রথম দিন অফিসে ঢুকেই একটু থমকে গিয়েছিল। ছিমছাম ফ্লোর, ছায়াঘেরা আলো, আর প্রফেশনাল পোশাকের নিচে অসংখ্য অভিব্যক্তি চাপা দিয়ে রাখা মুখগুলো যেন তার দিকে তাকিয়ে ছিল না—তবু এক অদৃশ্য মানদণ্ডে তাকে মেপে নিচ্ছিল। লাল পাথরের আধুনিক বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলায় “সিগমা ইনফোটেক”-এর কনটেন্ট বিভাগে সে সদ্য জয়েন করেছে একজন জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করে সদ্য পাশ করা একটা মেয়ে, যার চোখে কিছুটা দৃষ্টির সংকোচ, কিছুটা আবেগ আর কিছুটা “আমি পারব তো?” ধরনের সংশয়। টিমের এক সিনিয়র—তিথি ঘোষ—তার ডেস্ক অবধি পৌঁছে দিয়ে হালকা করে বলল, “এই অফিসে বেশি কথা না বলাই ভালো। কাজ…