প্রতীক দত্ত অরিন্দম সেনের জীবনের দিনযাপন ছিল সুশৃঙ্খল, নিয়মমাফিক ও দৃষ্টিতে পরিপূর্ণ এক সংসারের ছবি। সকালবেলা তার ঘুম ভাঙত অ্যালার্ম ঘড়ির একঘেয়ে শব্দে, তারপর দাঁত ব্রাশ, চায়ের কাপ, অফিসের ফাইল আর প্রতিদিনের সেই একই রুটিন। স্ত্রী স্নিগ্ধা যত্নে তার সকালের নাশতা তৈরি করত, সন্তান স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিত, আর ঘরজুড়ে যেন সবকিছু সুন্দর ছন্দে চলছিল। বাইরের চোখে অরিন্দম ছিল এক আদর্শ স্বামী ও দায়িত্বশীল বাবা। অফিসে সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য, আর পাড়াপড়শির চোখে এক স্থির-স্বভাবের মানুষ। কিন্তু এই নির্দোষ ছবির ভেতরে লুকিয়ে ছিল এক অদৃশ্য ক্লান্তি, যা কাউকে জানানোর উপায় ছিল না। প্রতিদিন ঘরে ফেরার পর তিনি দেখতেন টিভির…
-
-
চৈতালী বৰ্মন চাঁদের আলোয় ডুবে থাকা সেই গ্রামটির চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছিল। দিনের কোলাহল ফুরিয়ে গেলে গ্রামের আকাশ যেন হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে যায়, কেবল দূরের পুকুরের ব্যাঙের ডাক আর মাঝেমধ্যে শেয়ালের হাঁক সেই নীরবতাকে খানিকটা ভেঙে দেয়। অরিন্দমের জীবনের প্রতিটি দিন কাটত একই ছন্দে—ভোরের আলোয় খেতের কাজে বেরিয়ে যাওয়া, দুপুরের রোদে ঘেমে-নেয়ে খড়ের গাদায় বসে বিশ্রাম নেওয়া আর সন্ধ্যার দিকে ফেরার পথে মাঠের আল দিয়ে একবার চোখ ফেরানো। সে জানত, সেই দিকেই হয়তো দেখা মিলবে মিতালীর। কৃষকের ছেলে হয়েও তার ভেতরে এক গভীর কোমলতা ছিল, যা মাটির গন্ধে জন্মেছিল, অথচ গ্রামের চোখে সে ছিল এক সাধারণ শ্রমিক, যার…
-
নন্দিতা বসু কলকাতার এক গরম দুপুর। শহরের রাস্তাঘাট তখনও গ্রীষ্মের দমচাপা গরমে হাঁসফাঁস করছে। সূর্যের তীব্র আলো জানালা পেরিয়ে লাইব্রেরির ভেতরে ঢুকছিল, কিন্তু ভেতরের শীতল নীরবতা বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক অনুভূতি তৈরি করেছিল। লাইব্রেরির চিরচেনা গন্ধ—পুরনো বইয়ের মলাট, ধুলোমাখা পাতার গন্ধ, আর কাঠের তাকের গন্ধ মিশে তৈরি করেছে এক অনন্য পরিবেশ। অনন্যা, ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্রী, প্রতিদিনের মতো নিজের গবেষণার কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। রবীন্দ্রনাথের লেখার ওপর তার বিশেষ আগ্রহ, তাই প্রায়ই তাকে লাইব্রেরির কবিতা বিভাগে পাওয়া যায়। সেদিনও সে মন দিয়ে খুঁজছিল একখানা বই—“গীতাঞ্জলি”-র প্রথম সংস্করণের একটি বিশেষ কপি। তাকের সামনে দাঁড়িয়ে বইটা খুঁজতে গিয়ে হঠাৎই সে…