শ্রাবণী বসু অধ্যায় ১: অচেনা পরিচয় শহরের ব্যস্ততম রাস্তায়, যানজট আর মানুষের ভিড়ে ডুবে থাকা এক বিকেলে, অরণ্যের চোখ হঠাৎ আটকে যায় এক অপরিচিত মুখে। মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে বাসস্ট্যান্ডের কোণে, লাল-সাদা শাড়ি পরা, কাঁধে বইভরা ব্যাগ, আর চোখে যেন এক অদ্ভুত শান্তি। গরমে ক্লান্ত সবাই যখন বিরক্তিতে কুঁকড়ে আছে, মেয়েটির মুখে তখনও একরকম প্রশান্ত ভাব। অরণ্য জানে না কেন, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তার বুকের ভেতর ধক করে ওঠে—যেন বহুদিনের হারিয়ে যাওয়া কাউকে আবার খুঁজে পেল। মেয়েটির চুল এলোমেলো হয়ে কপালে লেগে আছে, বাতাসে দুলে পড়ছে গাল ছুঁয়ে, আর সে এক অচেনা জগতে হারিয়ে যেতে চাইছে। অরণ্য থেমে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতে…
-
-
শাশ্বত বসু সেদিন সন্ধেটা মেঘলার জীবনে অদ্ভুত এক মোড় নিয়ে এল। শহরের এক নামী সাহিত্যিক সংগঠন আয়োজিত বার্ষিক সাহিত্য উৎসবে স্বামী অনিকেতের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি, মূলত সামাজিক কর্তব্যবোধ থেকে। সাহিত্য নিয়ে মেঘলার আগ্রহ একসময় প্রবল হলেও সংসারের চাপে, অফিস আর গৃহস্থালির দায়ে সেই আগ্রহ অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলের ভেতরে ঢুকতেই বাতাসে বইয়ের গন্ধ, মঞ্চে আলো, দর্শকসারিতে অচেনা অথচ উৎসুক মুখগুলো যেন তাঁর ভেতরে বহু পুরোনো দিনের আবেগকে নাড়া দিল। হাতে ধরা শাড়ির আঁচলটা আঁটসাঁট করে তিনি বসেছিলেন প্রথম সারির মাঝ বরাবর। তখনই হঠাৎ মঞ্চে নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এক পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এল—সেই কণ্ঠস্বর, যা তিনি কোনোদিন ভুলতে…
-
১ অনিন্দিতা দিনের ব্যস্ততম কাজ শেষ করে অফিসের বাইরে আসে। রাস্তায় হঠাৎ বাতাসের আভাস কিছুটা শান্ত, কিছুটা খটখটে। তিনি পায়ের ধাপে হেঁটে যাচ্ছেন, মাথায় ঘুরছে আজকের অফিসের চাপ আর নির্দিষ্ট মিটিংগুলোর খুঁটিনাটি স্মৃতি। মন খালি করার জন্য চোখে পড়ল রাস্তায় একটি ছোট্ট ক্যাফে, যার বাইরে ধোঁয়াশা-ভরা জানালা আর নরম আলো যেন তাকে টেনে নিল। অনিন্দিতা ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে মনে হয়, সে যেন ভিন্ন জগতে প্রবেশ করেছে। কাঠের ফার্নিচার, লো ফ্লোর লাইট, এবং কোমল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক—সবকিছু এক ধরণের সান্ত্বনা দেয়। তিনি নিজের হাতে মোবাইলটি নিয়ে একটু বসে পড়েন, কিন্তু চোখেরা অজান্তে তাকিয়ে থাকে অভ্যন্তরের দিকে। এবং ঠিক সেই মুহূর্তে, তার চোখ…