দীপক সাহা শহরের নিস্তব্ধ সকালের আলোয় যখন পত্রিকার পাতায় পাতায় ছাপা হচ্ছিল গত রাতের নানা খবর, তখনই মানুষের চোখে ধরা দিল এক অস্বাভাবিক শিরোনাম—“বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকর অরিন্দম রায় হঠাৎ নিখোঁজ।” খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই সারা শহরে আলোড়ন। যে মানুষটি তার তুলি আর রঙের যাদু দিয়ে বিশ্বকে বারবার অবাক করেছে, যার চিত্রকর্ম একেকটা প্রদর্শনীতে কোটি টাকারও বেশি দামে বিক্রি হয়, তিনি নাকি হঠাৎ করেই উধাও! অরিন্দম ছিলেন শুধু শিল্পী নন, তিনি ছিলেন এক ধরনের দর্শন—রঙের ভেতরে মানুষের অজানা ভয়, দুঃখ, ভালোবাসা আর মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি তিনি এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতেন, যেন প্রতিটি ছবিই জীবন্ত হয়ে ওঠে। এমন এক মানুষ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলে তা সাধারণ…
-
-
সুবর্ণ সাহা অধ্যায় ১: পাহাড়ি শহরের গল্প উত্তরবঙ্গের ছোট্ট পাহাড়ি শহরটির নাম মানুষজন খুব একটা জানে না, অথচ তার বুকজুড়ে ইতিহাসের চাপা স্তর জমে আছে বছরের পর বছর ধরে। চা-বাগানের মাঝখানে, খরস্রোতা নদীর ধার ঘেঁষে আর কুয়াশায় ঢাকা বনানীর ভেতর দিয়ে ছোটো রাস্তাগুলো ছড়িয়ে আছে। পাহাড়ি হাওয়ায় ভেসে আসে কাঠের গন্ধ, আর মাটির ভেতর থেকে উঠে আসা একধরনের আর্দ্র শীতলতা মানুষকে অচেনা এক আতঙ্কে আবদ্ধ করে রাখে। শহরের বাসিন্দারা দিনের বেলা যতটা সরগরম থাকে, রাত নামলেই ততটাই নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তবে এই নিস্তব্ধতার ভেতরে আছে এক অদ্ভুত শূন্যতা—যেটাকে তারা বরাবরই এক পুরনো ভবনের নামের সঙ্গে জুড়ে দেয়। সেটি হলো পাহাড়ি…
-
অভ্রনীল দত্ত পর্ব ১ – যাত্রা শুরু সকালবেলা কোলাহলমুখর শিয়ালদহ স্টেশনের ভিড়ের ভেতর দিয়ে যখন তারা সবাই প্ল্যাটফর্মে পৌঁছল, তখনও কারও মাথায় ছায়ামাত্রও ছিল না কী অপেক্ষা করছে সামনে। কলকাতার এই পাঁচজন কলেজ–বন্ধু—অনিক, সুমিত, তন্ময়, দেবলীনা আর রুদ্র—দীর্ঘদিন পর আবার মিলে একসঙ্গে কোথাও বেরোচ্ছে। গন্তব্য সুন্দরবন। ভ্রমণের উদ্দেশ্য একটাই—দু–একদিন শহরের কোলাহল ভুলে প্রকৃতির নির্জন অরণ্যে কিছুটা সময় কাটানো, বাঘ দেখার ভাগ্য হলে আরও ভালো, আর সবার ওপরে একধরনের অদেখাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। রুদ্র, যে দলের মধ্যে সবচেয়ে উচ্ছল, আগেই পরিকল্পনা করেছিল গোটা ট্রিপ। সে বলেছিল—“এইবার তো পুজোর ভিড় নেই, একেবারে নিস্তব্ধ জঙ্গলে গিয়ে আসব। কী রোমাঞ্চ বলো তো!” বাকিরা তার কথায়…
-
সোনালী দেব ১ রায়চৌধুরী বাড়ি যেন ইতিহাসের এক প্রাচীন দলিল, যার প্রতিটি দেয়ালে লুকিয়ে আছে গৌরব ও ক্ষয়ের মিলেমিশে থাকা কাহিনি। বিশাল ফটক পেরোলেই চোখে পড়ে দোতলা প্রাসাদের মতো বিশাল বাড়ি—উঁচু খিলানওয়ালা জানালা, বারান্দার লোহার গ্রিলের কাজ, আর সিঁড়ির মাথায় শ্বেতপাথরের সিংহমূর্তি। একসময় এ বাড়ির জমিদারি ছড়িয়েছিল আশেপাশের বহু গ্রামে, ঘোড়ার গাড়ি, হস্তিদল, পালকি, এবং শত শত কৃষকের আনাগোনায় মুখর থাকত এই প্রাসাদ। এখন অবশ্য সময়ের সঙ্গে তার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, কিন্তু ছায়াঘেরা আঙিনা আর খসে পড়া দেওয়ালগুলো এখনো অতীতের গৌরবের সাক্ষী। সন্ধ্যা নামলেই যেন এই বাড়ি চারপাশের অন্ধকারকে গিলে নেয়; ঝুলে থাকা পুরোনো ঝাড়বাতি, কড়কড়ে দরজা আর বাতাসে…
-
শৌনক দে গ্রামের সীমানা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে অনিরুদ্ধ সেন অনুভব করলেন যে, এখানে কোনো সাধারণ শীতলতা নেই; বরং এক অদ্ভুত শীতলতা আছে, যা হাড় কাঁপানোর মতো ঠান্ডা না হলেও, মনকে স্থির করে, চুপচাপ করে রাখে। গ্রামটি চুপচাপ, রাস্তার ধুলো উঠছে নিঃশব্দে, এবং বাতাসে যেন অদৃশ্য কোনো দমনের গন্ধ ভাসছে। গ্রামের মানুষের চোখে এক অদ্ভুত আতঙ্ক, যা তাদের মুখের হাসিকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। তারা খুব সাবধানভাবে চলাফেরা করে, যেন কোনো অদৃশ্য চোখ তাদের প্রতি তাকিয়ে আছে। অনিরুদ্ধ একটি ছোট কুঁড়েঘরের কাছে রিকশা থামালেন, যেখানে গ্রামের মানুষ সাধারণ জীবনযাপন করছে বলে মনে হলেও, তাদের আচরণে যেন প্রতিটি মুহূর্তে এক অনিশ্চয়তার চাপ…