ইরা মুখার্জি পর্ব – ১ উত্তর কলকাতার পুরোনো একতলা-বাড়িগুলোর গায়ে সময়ের দাগ খুব স্পষ্ট। ঝাপসা রঙের দেওয়ালে শ্যাওলার ছোপ, টিনের ছাদের নীচে শালিকদের বাসা, আর লোহার গেটের খোঁচা খাওয়া রঙ ম্লান হয়ে আছে বহুদিন। সেই রকমই এক বাড়ি, রায়বাড়ি—যার বারান্দায় বিকেলবেলা বাতাস অন্যরকম লাগে। এখানে প্রতিদিন বসে পড়েন অমলবাবু, সদ্য অবসর নেওয়া এক স্কুলশিক্ষক। হাতে এক কাপ চা আর সামনে পত্রিকা, যদিও অক্ষরের ভেতর ডুবে থাকার বয়স তার অনেক আগেই ফুরিয়েছে। চায়ের ধোঁয়া আর নিস্তব্ধতার ভেতর তিনি শুনতে পান আশেপাশের বাচ্চাদের চিৎকার, রাস্তায় সব্জিওয়ালার হাঁকডাক, আর মাঝে মাঝে হাওয়ার ঝাপটায় শিউলির গন্ধ। অমলবাবুর বারান্দার একপাশ থেকে হঠাৎ চোখে পড়তে শুরু…
-
-
অনিতা রায় কলকাতার দক্ষিণের ব্যস্ত এলাকায় দশতলা এক বহুতলের চতুর্থ তলায় মৌসুমি সেনগুপ্তের ফ্ল্যাট। বাইরে থেকে দেখে মনে হয়, এ এক স্বপ্নময় শহুরে সংসার—সাদা দেয়ালের পরিপাটি ফ্ল্যাট, বারান্দায় কিছু শুকনো টব রাখা, জানালার পাশে গামছা শুকোতে দেওয়া, আর ভেতরে এক স্বামী-স্ত্রী ও তাদের স্কুলপড়ুয়া ছেলের নিখুঁত রুটিন। কিন্তু সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর থেকে রাত অবধি চলতে থাকা মৌসুমির দিনচক্রের ভেতরে সেই নিখুঁত ছবির ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে থাকে অদৃশ্য শূন্যতা। ভোর ছ’টা বাজতেই অ্যালার্মের আওয়াজে উঠে রান্নাঘরে ঢোকা, ছেলের টিফিন আর স্বামীর চায়ের কাপ সামলানো, এর পর বাসন মাজার শব্দে ভেসে আসা শাশুড়ির ফিসফিসে মন্তব্য, সব কিছুই যেন তাকে এক অবিরাম…
-
বিভাস সেনগুপ্ত এক নীলয় রায় জানালার ধারে বসে ছিল ট্রেনের কামরায়, মাথায় হেডফোন, চোখ দু’টো দৃঢ়ভাবে বাইরে, কিন্তু মন দূরে, একেবারে অন্যখানে। বাইরের কুয়াশায় ঢাকা দৃশ্যপট যেন তার ভেতরের অস্পষ্ট অনুভূতিগুলোরই প্রতিচ্ছবি ছিল। তার ব্যাগে একটি Nikon DSLR, দুটি লেন্স, একটি নোটবুক আর মুঠোফোন ছাড়া তেমন কিছু ছিল না। কলকাতা শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে সে চলেছে পুরুলিয়ার দিকে—এইবার শুধু একটি প্রজেক্টের জন্য নয়, বরং নিজের ভেতরের এক চাপা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য। সে শুনেছিল শঙ্খ নদীর পাড় ঘিরে একটি লোককথা—“নদী নাকি কথা বলে, যদি তুমি কান পেতে শোনো।” শহুরে যুক্তিবাদী মানুষদের কাছে হয়তো এসব নিছক রূপকথা, কিন্তু নীলয়ের কাছে…