সুতপা মল্লিক কলকাতার উত্তরের এক পুরনো বনেদি বাড়ির ভেতর দুপুরটা যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল। ছাদের ওপর চড়া রোদ, নিচের দোতলা বাড়ির অন্দরে নিঃশব্দের এক গহ্বর। ব্রতী সেন জানলার ধারে বসে ছিল, পাশের ঘরে টিকটিকির ডাকে একটানা সময় যেন আটকে পড়েছিল। দুপুরের খাবার, থালা বাসনের শব্দ, শাশুড়ির নিয়মিত বকুনি—সবই সেদিনের মতো সেরে ফেলা হয়েছে। অরিন্দম অফিসে, শাশুড়ি ঘুমোচ্ছেন, আর এই সময়টুকু তার—সে জানে, এই এক-দেড় ঘণ্টা সে তার মতো করে বাঁচতে পারে। কিন্তু কীভাবে বাঁচে, তা সে নিজেই জানে না। তার পছন্দের খাতা, একটা পুরনো পেন আর সেই শাদা পৃষ্ঠা—যেখানে সে শব্দে শব্দে নিজের নিঃশব্দ চিৎকারগুলো গেঁথে রাখে। কেউ জানে না, কেউ…
-
-
অনিরুদ্ধ বাগচী ১ গঙ্গা, পদ্মা আর মেঘনা—তিন নদী, তিন স্রোত, তিন বুকভরা কান্না। এবং সেই কান্নার নিচে চাপা পড়ে থাকা তিনটি মুখ—রোহিমা, পার্বতী, আর নিরু। ১৯৪৩ সালের অগাস্ট মাস। আকাশ যেন প্রতিদিন আগুনে পোড়া ভাতের মতো ঝাঁজালো। সূর্য চৌচির মাটি ফাটিয়ে ঢুকতে চাইছিল মানুষের নাভিমূলে। মাঠ নেই, ফসল নেই, কুয়াশা নেই—শুধু চিৎকার আর খিদে। গঙ্গার ধারে রোহিমার গ্রামটা কখনও মাটি হারায়নি, বর্ষায় শুধু উঠোনে জল দাঁড়াত। কিন্তু এই বছর বর্ষা এল না। আর এল না বাজারের দিকে চালের গন্ধ। তার স্বামী কাসেম ঘাটে কাজ করত। একদিন ঘরে ফিরে বলল, “আজ পাঁচ পয়সার চাল বিশ পয়সায় উঠছে। দু-সপ্তাহের মধ্যে চাল থাকবে…