• Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    আয়নার অন্যপাশে

    সুতপা মল্লিক কলকাতার উত্তরের এক পুরনো বনেদি বাড়ির ভেতর দুপুরটা যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল। ছাদের ওপর চড়া রোদ, নিচের দোতলা বাড়ির অন্দরে নিঃশব্দের এক গহ্বর। ব্রতী সেন জানলার ধারে বসে ছিল, পাশের ঘরে টিকটিকির ডাকে একটানা সময় যেন আটকে পড়েছিল। দুপুরের খাবার, থালা বাসনের শব্দ, শাশুড়ির নিয়মিত বকুনি—সবই সেদিনের মতো সেরে ফেলা হয়েছে। অরিন্দম অফিসে, শাশুড়ি ঘুমোচ্ছেন, আর এই সময়টুকু তার—সে জানে, এই এক-দেড় ঘণ্টা সে তার মতো করে বাঁচতে পারে। কিন্তু কীভাবে বাঁচে, তা সে নিজেই জানে না। তার পছন্দের খাতা, একটা পুরনো পেন আর সেই শাদা পৃষ্ঠা—যেখানে সে শব্দে শব্দে নিজের নিঃশব্দ চিৎকারগুলো গেঁথে রাখে। কেউ জানে না, কেউ…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    জাদুকরী লালরঙ

    বর্ণালী রাহা ১ শহরের উত্তর দিকের পুরনো অলিগলির মধ্যে এমন একটা গলি আছে, যার নাম কেউ ঠিক ঠাহর করতে পারে না। লোকমুখে বলে “লালগলি”, কেউ আবার “ঠাকুরদালান গলি” বলে ডাকেন— কিন্তু অফিসিয়াল মানচিত্রে তার কোনও অস্তিত্ব নেই। এই গলির একদম শেষে, পুরোনো পাথরের সিঁড়ি ঘেঁষে, এক আধভাঙা দোকান। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না কী বিক্রি হয় সেখানে। দোকানের নামফলক নেই, কাচের জানালাও নেই—শুধু লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা একটা কাচবিহীন গেট। কিন্তু সন্ধ্যে নামতেই ভেতর থেকে একরকম আলো ঝলসে ওঠে, যেন কেউ ভিতরে রক্তমাখা প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে। দোকানটির নাম কেউ কখনো জিজ্ঞেস করে না—যারা আসে, তারা ঠিক পথ খুঁজে নেয়।…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প - ভূতের গল্প

    পুতুলকন্যার অভিশাপ

    এক রোদ ঝলমলে একটা দুপুরে কলকাতা থেকে রওনা হয়ে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ডঃ অনিন্দিতা সরকার পৌঁছালেন দক্ষিণবঙ্গের এক প্রাচীন গ্রামে—সোনাচূড়া। চারদিকে যেন কুয়াশার আস্তরণ, অথচ বর্ষা নয়, শীতও নয়। তিনি জানতেন, এই জায়গার নাম ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নয়, তবুও এখানে একটি বিশেষ জমিদার প্রাসাদ আছে, যার কথা প্রায় কেউ জানে না। স্থানীয় লোকজন ভয়ে তার ধারে-কাছে যায় না। পুরনো দলিলপত্র ঘাঁটতে গিয়ে এই রায়চৌধুরী বাড়ির নাম ও বর্ণনা পেয়ে যান অনিন্দিতা। জমিদাররা নাকি ১৮৪০-এর দশকে গড়ে তুলেছিলেন এই রাজবাড়ি, কিন্তু ১৯৪৭-এর পর ধীরে ধীরে পরিবার ছড়িয়ে যায়, প্রাসাদ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। আজও বাড়িটির উত্তরাধিকারী আছে — এক অরিন্দম রায়চৌধুরী…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    ঘুঙুরের শব্দ

    সোনালী গুপ্ত ব্যানার্জী বাইজি মহলের দালানে কুয়াশা জমে থাকত ভোরবেলা। নাতিদূরে বাঁকানো পথে কুড়ুল গাছের পাশে দাঁড়িয়ে থাকত হরিপদ চা-ওয়ালা, যার গলায় বাজত সকালবেলার প্রথম চিৎকার—”মিষ্টি লাল চা!” আর সেই চায়ের গন্ধ পেয়ে মহলের জানালা খোলে একে একে, যেন এক অজানা শহরের ঘুম ভাঙার সময় হয়ে এসেছে। এই বাইজি মহল কেবল নাচগানের জায়গা নয়, ছিল কলকাতার জমিদার সংস্কৃতির এক অসমাপ্ত দলিল। আটটা পিলারের ওপরে দাঁড়ানো এই কাঠের বারান্দা জুড়ে শোনা যেত বাঁশির সুর, ঘুঙুরের আওয়াজ আর কত না চাপা কান্না। এটাই ছিল কমলার জন্মভূমি। ছোটবেলা থেকেই সে জানত তার নাম কমলা বাই। মা সরস্বতী বাইজির পায়ের কাছেই সে প্রথম রাগিণী…