সুচেতনা দত্ত অধ্যায় ১: আসর কলকাতার নবাববাড়ি সেই সন্ধ্যায় যেন স্বপ্ন হয়ে উঠেছিল—ঝাড়বাতিতে আলো, আতরের সুবাস, পানের স্বাদে ভারী ঠোঁট, আর আড়ম্বরপূর্ণ শেরওয়ানিতে মোড়ানো অতিথিদের মৃদু গুঞ্জন। মাঝে মাঝে চামচ-চামচির শব্দ, কাঁচের গ্লাসে লেবুর জল, আর পেছনের দিক থেকে সেতারের টানা সুর—সব মিলে এক অভিজাত রাত্রির উপসংহার রচনা করছিল। এই ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন নবাব আহসান উল্লাহ নিজে, তাঁর পাশে সংস্কৃতিভাজন গুণিজনেরা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবিগণ। কিন্তু সবাই অপেক্ষা করছিলেন যার জন্য, সে তখনও পর্দার ওপারে। কেউ বলছিল, “আজ নাকি নতুন বাঈ এসেছে, লক্ষ্মী নামে।” কেউ মৃদু হাসছিল—“নাম শুনেই তো বোঝা যাচ্ছে, লক্ষ্মী সে বটে। তবে সে কি শুধু নাচবে, না…
-
-
মীনাক্ষী ধর ভোর সাড়ে পাঁচটা। গ্রামের কুয়াশার চাদরের ভেতর ধীরে ধীরে জেগে উঠছে চারপাশের ধুলোমাখা জগৎ। রেনু মণ্ডল মাটির বারান্দায় বসে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা লাল চা হাতে নিয়ে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। বাড়ির ভেতর গরুর ঘটি থেকে টুপটাপ করে দুধ পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল, আর রান্নাঘর থেকে বীণা খাঁর গলা — “আজি মাইনসেগো পেট ভরাই খাওয়াবার হইব না, রেনুবৌদি?” — রেনু কিছু বলল না। তার চোখে ক্লান্তি ছিল না, কিন্তু শান্তিও ছিল না। চোখদুটো যেন অনেক দূর দেখছিল, অনেক গভীরে—সেই জায়গায়, যেখানে শব্দ পোঁছায় না, শুধু গর্জন জমে থাকে। তার স্বামী কুন্তল মারা গিয়েছিল এই বাড়ির একচালা ঘরের…