তিতলি মুখার্জী অধ্যায় ১: শিমুলগাছের ছায়ায় তিতির পালের জীবনের সেইসব দিন, যেগুলো সে পরবর্তীকালে স্মরণ করত “শিমুলফুলের দিন” নামে, আসলে ছিল এক অবিচল, নির্ভেজাল গ্রামীণ শৈশবের প্রতিচ্ছবি। তার গ্রাম—জয়নগর, ছিল যেন এক আলসে দুপুরের মতো ধীর, ছায়াঘেরা, অথচ অনুভবের গভীরে গাঁথা। কাঁচা রাস্তার দু’ধারে খেজুরগাছের ছায়া, পুকুরপাড়ে বসে থাকা ধলেশ্বর মাছের প্রত্যাশায় জাল ফেলে রাখা, আর বিকেলে মাঠের ধারে ছুটোছুটি—এইসবই ছিল তিতিরের দুনিয়া। তাদের ছোট্ট কুঁড়েঘরটি ছিল শিমুলগাছের পাশে, যে গাছের ছায়ায় বসে তিতির স্কুলের হোমওয়ার্ক করত। সেই গাছ, গাঢ় লাল শিমুলফুলে ভরা, যেন তার ছোট্ট জীবনের প্রতিটি স্বপ্নকে আগলে রাখত। হরিপদ পাল—তিতিরের বাবা, ছিলেন একজন গ্রাম্য পাঠশালার শিক্ষক, যিনি…
-
-
দেবযানী মিত্র ১ নদীয়ার ‘গিরিজামোহিনী বালিকা বিদ্যালয়’ বরাবরই শান্ত, ছায়াস্নাত পরিবেশে গড়া একটি পুরনো স্কুল, যার পেছনে ছড়িয়ে আছে রহস্যে মোড়া এক আভা। বারো মাসে একদিন, পূর্ণিমা রাতে, হঠাৎ যেন স্কুলের প্রাচীরের আড়ালে নেমে আসে এক অদৃশ্য ছায়ার করাল উপস্থিতি। মেয়েরা জানে, কোনো অলীক কথা নয়, কেউ বা কিছু ওই স্কুলের পেছনের বিশাল বটগাছটিকে ঘিরে জেগে থাকে। দশম শ্রেণির ছাত্রী রিমা সাহা এই ধরনের গুজবে বিশ্বাস করে না, বরং হাসি ঠাট্টায় উড়িয়ে দেয় সবকিছু। কিন্তু সেই রাতটা ছিল আলাদা—পূজা ছুটি শেষে স্কুলে ফেরার আগের সন্ধ্যা, আকাশে টানা মেঘের ছায়া, তবু এক নিখুঁত গোল চাঁদ ঝলসে উঠেছে পশ্চিমের আকাশে। বাড়ির ছাদে…
-
অনিন্দ্য ঘোষ ১ শিউলি আর আতরের গন্ধে ভরে উঠেছিল পুরনো রায়চৌধুরি বাড়ির আঙিনা। দীপাবলির উৎসব, তাই শতবর্ষীয় অন্দরমহল আজ নতুন আলোয় আলোকিত। লালটেন থেকে ফেয়ারি লাইট, পায়রা কাঁপানো পটকা আর চিত্তাকর্ষক রকমারি মিষ্টির হাঁড়ি—সবই যেন একটা নিখুঁত নাট্য মঞ্চের পরিপাটি প্রপস। ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁতেই ছোটদের দল মেতে উঠল ফোয়ারা আর চাকরি নিয়ে, আর প্রবীণরা চায়ের কাপ হাতে স্মৃতির আলো-আঁধারিতে গল্পে মশগুল। বাড়ির কনিষ্ঠ পুত্রবধূ কবিতা তখন সবে সিঁড়ি দিয়ে নামছে—হলুদ তসর শাড়ি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, হাতে একটা তাজা চন্দ্রমল্লিকা ফুল। চোখে চোখ রেখে কারও সঙ্গেও কথা বলছে না, কেবল নিঃশব্দে হাঁটছে—একটা নিস্তব্ধ অভিমান যেন তার চলনে ধরা দেয়। তাকে…