শ্রেয়া বসু গ্রামের ভেতরটা এখনও যেন এক পুরোনো ছবির মতো আটকে আছে—মাটির রাস্তা, গাছপালার ছায়া, আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী জমিদারবাড়ি। বাড়িটার সামনে বিশাল দোতলা বারান্দা, অথচ তার উঠোনে কারও পদচিহ্ন নেই। বছরের পর বছর ধরে শুনে আসা কড়া নিয়ম—“মেয়েরা এই উঠোনে পা রাখবে না।” যেন মেয়েদের উপস্থিতি ওই পুরুষতান্ত্রিক প্রতীকের গাম্ভীর্য ভেঙে দেবে। শিউলি, গ্রামের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে, ছোট থেকেই শুনে এসেছে সেই নিষেধাজ্ঞার কথা। ছোটবেলায় ঠাকুমা গল্প শোনাতেন—একসময় নাকি জমিদারবাড়ির উঠোনে উৎসব হতো, নাটক হতো, পুজো হতো। কিন্তু সবই পুরুষদের দখলে। নারীরা থাকতো রান্নাঘরে বা অন্দরমহলে, দূর থেকে গোপনে তাকিয়ে দেখতো আনন্দ। সন্ধ্যার পর একদিন শিউলি হাঁটতে হাঁটতে…
-
-
ঋতুপর্ণা দাশগুপ্ত পর্ব ১: নদীর ডাক গাঁটা যেন অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় মোড়ানো ছিল। শীতল দমকা হাওয়া ভোরের আকাশে নীলচে ছাপ রেখে দিত আর দূরে শাল-সেগুনের বনের ফাঁক দিয়ে ভেসে আসত নদীর গুঞ্জন। এই নদীর নাম ছিল কুলেশ্বরী। তবে মাধুরী ছোটবেলা থেকেই জানত, নামটা পুরোটা নয়—এই নদীর আরেকটা নাম আছে, একেবারে গোপন নাম, যা শুধু রাতের আঁধারেই ফিসফিস করে শোনা যায়। মাধুরী তখন দশ বছরের মেয়ে। প্রতিদিন বিকেলে সে বাঁশের ডাল দিয়ে বানানো কঞ্চির দোলনা নিয়ে নদীর ধারে যেত। নদীর পাড়ে বসেই তার পড়াশোনা, খেলাধুলো সবকিছু। কিন্তু এক পূর্ণিমার রাতে, হঠাৎ করেই সে শোনে অদ্ভুত একটা আওয়াজ—যেন নদী গুনগুন করছে। প্রথমে ভেবেছিল…
-
অলীক ছায়ার ঘর রোজকার আলোচ্য বিষয়ের বাইরে কলকাতার একটি ছোট্ট ফ্ল্যাট, বালিগঞ্জের গলিতে। জানালার পাশে বসে শিউলি তাকিয়ে থাকে একঘেয়ে আকাশের দিকে। মেঘ জমেছে, কিন্তু বৃষ্টি আসে না। যেমন তার জীবনে জমেছে ক্লান্তি, কিন্তু উপশম নেই। দশ বছর হয়ে গেল বিয়ের। রঞ্জনের সঙ্গে একসময় প্রেম ছিল, হাতে হাত রেখে সিনেমা দেখা, ট্রামে চেপে লেকের ধারে হাওয়া খাওয়া। এখন সেইসব স্মৃতি যেন পুরোনো কাপড়—আছে, কিন্তু ব্যবহার হয় না। রুটিনে বেঁধে গেছে জীবন। সকালে উঠে রান্না, অফিস, বিকেলে ফিরে টিভির আওয়াজ, রাতে নিঃশব্দ বিছানা। রঞ্জন বলে, — “আজ আবার টিফিনে ঝোল কম ছিল।” শিউলি মৃদু হেসে বলে, — “তুমি তো এমনিতেও কম…