• Bangla - ভ্রমণ

    বোটানিক্যাল গার্ডেনের সন্ধ্যা

    অরিন্দম পাত্র প্রতিদিনের মতো সেই একঘেয়ে সকাল, অফিসে পৌঁছনোর আগে ট্রেনের দোল, ট্রামের ঘণ্টা, রাস্তায় অসংখ্য মানুষের ভিড় আর অসহনীয় শব্দে ভরা একটা শহর—কলকাতা। অফিসের কাজ, ক্লায়েন্টের ফোন, মিটিংয়ের চাপ সব মিলে তার দিন যেন একই ছকে বাঁধা। জানলার বাইরে উঁচু বিল্ডিং আর ধুলোভরা রাস্তাই তার প্রতিদিনের দৃশ্য। কিন্তু আজ যেন ক্লান্তি একটু বেশি, কপালের ভাঁজ একটু গভীর, আর বুকের ভেতর এক অদ্ভুত অস্থিরতা। ঘড়ির কাঁটা অফিস ছুটির সময় ছুঁতেই সে ব্যাগটা কাঁধে তোলে, কিন্তু হঠাৎই মন বলে দেয়—না, আজ সোজা বাড়ি ফেরা হবে না। প্রতিদিনের সেই রুটিনে হাঁটতে হাঁটতে তার ভেতরে জমা হচ্ছে একটা অজানা শূন্যতা, আর আজ সেই…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    ফিল্ড ট্রিপের আকস্মিকতা

    অর্পিতা দত্ত কলেজের বার্ষিক ফিল্ড ট্রিপের ঘোষণা হতেই যেন এক ঝড় বয়ে গেল ক্লাসের ভেতর। যে ক্লাসরুমের বাতাস এতদিন ধরে শুধু পাঠ্যবই আর ল্যাবরিপোর্টের ভারে ভারী হয়ে থাকত, সেদিন সেখানে উচ্ছ্বাসের গুঞ্জন। সবাই ব্যস্ত নিজের মতো করে পরিকল্পনা করতে—কে কোন ব্যাগ নেবে, কে কী পোশাক পরবে, কোথায় ছবি তুলবে। এই উত্তেজনার ভিড়েই নিঃশব্দে বসে ছিল শ্রেয়সী। শ্রেয়সী সবসময়ই একটু গম্ভীর মেয়ের মতো। সহপাঠীদের চোখে সে পড়াশোনায় সিরিয়াস, অন্তর্মুখী, প্রায় অদৃশ্য এক ছায়ার মতো। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারও কেমন এক তৃষ্ণা ছিল—কলেজ জীবনের এমন এক ভ্রমণে অংশ নেবে, যা হয়তো মনে থাকবে সারাজীবন। যাত্রার দিন সকালে হাওড়া স্টেশন যেন মেলা। ছাত্রছাত্রীদের…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    ফিরে এসো, শ্রুতি

    নন্দিতা রায় ১ বৃষ্টিভেজা ব্যাঙ্গালোরের সন্ধ্যা তখন গা ছমছমে করে তুলেছিল, যখন অর্ণব সেনের ফোনটা বেজে উঠেছিল। সে তখন একটি ক্লায়েন্ট মিটিংয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কফির কাপে চুমুক দিয়ে ল্যাপটপে পিক্সেল শিফট ঠিক করছিল। কিন্তু সেই একটানা বেজে চলা ফোনের শব্দ যেন আচমকা একটা অজানা সঙ্কেত হয়ে ঢুকে পড়ে তার শরীরের ভেতর। স্ক্রিনে নামটা দেখে মুহূর্তে নিঃশব্দ হয়ে যায়—‘ডা. অনিরুদ্ধ রায়’। সে বুঝে যায় কিছু একটা ভুল হয়েছে। ফোন ধরতেই ওপার থেকে ভারী গলায় খবরটা আসে—“আমার দুঃখিত অর্ণব, তোমার মা আমাদের মাঝে নেই।” কথাটা যেন স্থির বাতাসের মতো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। কিচ্ছু বলতে পারে না অর্ণব। এত ব্যস্ততায় গা ভাসানো একটা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    বেডরুমের বাইরে

    কুশল রায় ১ শীতল বাতাসে ভেসে আসা ধোঁয়ার মতো কুয়াশার মধ্যে দার্জিলিং স্টেশনে ট্রেন থামতেই কাঁপতে কাঁপতে নামল অনির্বাণ ও মেহুলী। চারদিকে হালকা গুঞ্জন, মালবাহকদের হাঁকডাক, আর দূরে পাহাড়ে উঁকি দিয়ে থাকা বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে যেন একটা রঙহীন চিত্রকল্পে ঢুকে পড়েছে তারা। অনির্বাণের হাতে এক চামড়ার ট্রলি, অন্য হাতে মেহুলীর হাত। মেহুলী হালকা কমলা রঙের উলেন শালে নিজেকে জড়ানো, চোখে সানগ্লাস। তাদের মুখে বিবাহিত জীবনের সেই স্বাভাবিক জড়তা—যেখানে শরীরের স্পর্শ আছে, কিন্তু মনের ছায়াগুলো এখনো ধরা দেয়নি একে অপরকে। হোটেল থেকে গাড়ি পাঠানো হয়েছিল, চালক হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাল। গাড়ির জানালা দিয়ে তারা দেখতে থাকল কুয়াশার চাদরে মোড়ানো দার্জিলিংয়ের চায়ের বাগান,…

  • Bangla - ছোটদের গল্প - প্রেমের গল্প

    চন্দ্রমল্লিকার দিনগুলি

    নীলাঞ্জনা রায় বর্ধমান শহরের জানুয়ারির সকালগুলোয় কুয়াশা যেন চাদরের মতো শহরটাকে ঢেকে রাখে। স্কুলের মাঠটা তখনো ঘুমঘুম, কেবল কয়েকটা কাক আর গাছের ডালে বসে থাকা রংচটা ধোঁয়াশার ভেতর কিছু চেনা-অচেনা আওয়াজ। সেই রকম এক সকালে ঊর্মিলা সাইকেল ঠেলে স্কুলে ঢুকল, কানটুপি ঢাকা মুখে একরাশ মনোযোগ—তবে বাইরের নয়, তার নিজের ভিতরের কোনো অজানা ভাবনায়। ভেতরের কাঁপুনি ঠেকিয়ে সে সাইকেলটা লাইব্রেরির পাশে রেখে ক্লাসরুমের দিকে হাঁটতে লাগল, মেঝেতে জমে থাকা শিশিরে পা পিছলে যাবার মতো টান, আর জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে দেখে হঠাৎ থেমে গেল। ছেলেটা, নীল টুপি আর ধূসর সোয়েটারে আবৃত, জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল—হয়তো কুয়াশার ভেতর কিছু একটা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    বইমেলার সেই বিকেলটা

    শ্রেয়া বসু এক বইমেলার বিকেলগুলো যেন সবসময় একটু বেশি রঙিন হয়। মাঠের একপাশে রোদের ঝিলিক আর মানুষের ভিড় মিলেমিশে এক অদ্ভুত উষ্ণ আবহ তৈরি করে। সেই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কলকাতা বইমেলা তখন সেন্ট্রাল পার্কে, আর সেদিন ছিল জানুয়ারির শেষ শুক্রবার। ঋতা সেদিন প্রথমবারের মতো একা এসেছিল বইমেলায়। নিজের জগতে ডুবে থাকা এই তরুণী কোনও বন্ধুকে জানায়নি আসার কথা, অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিল চুপচাপ, আর একটা নীলখামে পুরে নিজের পুরোনো ‘পছন্দের বইয়ের তালিকা’ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। স্টলগুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখে, তালিকা মিলিয়ে বই কেনে। এমন সময়ে, ঠিক D-14 নাম্বার স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে একটা বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে তার চোখে পড়ে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    ট্রামের জানালায় ভালোবাসা

    সুব্রত রায় এক ১৯৮০ সালের কলকাতা শহরের সকালগুলো ছিল নিরালায় মোড়া, পাখির কিচিরমিচিরে ভরা এবং শহরের গায়ে তখনও আধুনিকতার খোলস পুরোপুরি চেপে বসেনি। শ্যামবাজার থেকে ট্রাম ছাড়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা ১০ মিনিটে, ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে ধর্মতলার দিকে। ঠিক এই ট্রামেই প্রতিদিন ওঠে অনিমেষ মুখার্জী, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, হাতে পুরনো কাপড় বাঁধানো একটা খাতা, যাতে সে নিজের মতো করে কবিতা লেখে আর অলস দুপুরে গুটিগুটি অক্ষরে নিজের মনোভাবের ছায়া ফেলে রাখে। সরকারি কলেজের লাইব্রেরিতে চাকরি করে ছেলেটি, স্নাতকোত্তর শেষ করে যেই চাকরি জুটেছে, তাতেই পরিতৃপ্ত। তার জীবনে রোমাঞ্চের জায়গা নেই, কিংবা সে তা নিজেই হতে দেয়নি—বাবার অবর্তমানে সংসারের দায়িত্ব…

  • Bangla - সামাজিক গল্প - স্মৃতিকথা

    ধুলো জমা স্মৃতি

    মৈনাক ঘোষ অধ্যায় ১ ঈশানীর কাছে উত্তর কলকাতার সুবর্ণা দিদার বাড়ি মানে ছিল একটা নিঃশব্দ, ধুলো জমে যাওয়া সময়ের বাক্স। বহুদিনের পুরনো এই দোতলা বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই একটা শীতল বাতাস শরীর বেয়ে নামে, যেটার উৎস জানে না কেউ। দালানে ফেলে রাখা কাঠের চেয়ার, দেয়ালে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ছবি, আর সিঁড়ির কর্কশ কড়কড়ে শব্দ সব যেন এক অতীতের গর্জন ছড়িয়ে রাখে। সে এসেছে এইবার ছুটি কাটাতে, কিন্তু সঙ্গে নিয়েছে নিজের ল্যাপটপ আর কিছু গবেষণার বই—কারণ প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে তার এম.ফিল. চলছে, আর সে এই ছুটির সময়টাও খালি যেতে দিতে চায় না। দ্বিতীয় দিনের সকালে, বৃষ্টি নামার পরপরই, সে দিদার ঘরের পাশে একটা…

  • Bangla - ভ্রমণ

    কাঞ্চনজঙ্ঘা: একটি শেষ চিঠি

    ঋদ্ধিমান চক্রবর্তী পর্ব ১: চিঠির খামে কাঞ্চনজঙ্ঘা পুজোর ঠিক আগের দিন সকালে মিঠির চিঠিখানা হাতে আসে—একটা পুরোনো বাদামি খামে, অদ্ভুত সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা ‘মিতালী সেন’ নামটা ঠিক তার ছেলেবেলার ডাকনামের পাশে। তবে এই ডাকনামটা আজ বহু বছর কেউ ডাকে না, এমনকি নিজের কাছেও মিঠি অনেককাল হয়ে গেছে মিসেস মিতালী বসু। কিন্তু চিঠিটা খুলতেই মনে হল, সময় যেন উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছে। প্রেরক: প্রমথেশ চৌধুরী। ঠিকানা: সেন ভিলা, হিলকার্ট রোড, দার্জিলিং। তারিখ: ১৯৮৬। মিঠি শিউরে উঠেছিল। ১৯৮৬? তা হলে এই চিঠিটা এখন তার হাতে পৌঁছেছে ৩৯ বছর পরে? চিঠির ভাঁজে আরও ছিল একটি ছোট স্কেচ—হাতের আঁকা, পেনসিলে আঁকা কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া, এক…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    তোমার চোখে শালুক ফুটে

    অনিমেষ পাল অধ্যায় ১: চোখ খুলতেই জানালার বাইরের কুয়াশায় ঢাকা দৃশ্যটা ঝাপসা হয়ে গেল। কলকাতা থেকে আসার পর প্রথম সকাল, আর ঠিক তখনই ঋত্বিক বুঝে গেল—এই গ্রামের ভোর শহরের ভোর নয়। হেমন্তের কুয়াশা এখানে কেবল বাতাসে নয়, স্মৃতির ভেতরেও ঢুকে পড়ে। বাবা আর নেই। পঞ্চভূতে বিলীন হওয়ার পরেও যেন তার গলার কর্কশতা, ভাতের পাত থেকে ঝুলে পড়া মাছের কাঁটার মতোই, আজও জমে আছে দেয়ালে। গ্রামে ফিরে আসার আগে সে ভেবেছিল, হয়তো কিছুই চেনা লাগবে না। কিন্তু যখন মাটির উঠোনে পা রাখল, তখন মাটির নিচ থেকে শিকড়েরা যেন ফিসফিস করে ডেকে উঠল—“তুই ফিরে এসেছিস, ঋত্বিক!” পানের রঙে পুরনো হয়ে যাওয়া উঠোনের…