ভাস্কর সেনগুপ্ত হিমালয়ের অন্তহীন তুষারশৃঙ্গ আর অন্ধকার বনপথের গভীরে, এমন এক অচেনা অঞ্চল রয়েছে যেখানে সাধারণ মানুষ কোনোদিন পা রাখে না। সেখানে বাতাসও যেন রহস্য বয়ে আনে—দিনের আলো কম টিকে থাকে, আর রাত নামলেই পাহাড়ের বুক থেকে ভেসে ওঠে অদ্ভুত সুর, যেন অচেনা কোনো ভাষায় কেউ প্রার্থনা করছে। এই জনমানবশূন্য অরণ্যের মাঝে গড়ে উঠেছিল এক শতাব্দীপ্রাচীন তান্ত্রিক সম্প্রদায়, যাদের অস্তিত্বের কথা শুধু কিছু কিংবদন্তি আর মিথে টিকে আছে। তারা নিজেদের আলাদা করে রেখেছে সভ্যতার চোখ থেকে, কারণ তারা জানে, তাদের জ্ঞান যদি বাইরের জগতে পৌঁছে যায়, তবে সেটি ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। তাদের গুরুগম্ভীর মঠ গড়ে উঠেছে প্রাচীন পাথরের ওপর,…
-
-
অগ্নিভ চক্রবর্তী ১ কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের পুরনো ভবনটার করিডোর সবসময়ই যেন একটু অন্ধকার আর আর্দ্র গন্ধে ভরা থাকে, বিশেষ করে বর্ষার রাতে। বাইরে তখন বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ, জানলার ফাঁক দিয়ে ঢুকে আসছে ঠান্ডা বাতাস, আর কোথাও দূরে হাসপাতালের করিডোরে ভিজে স্লিপারের শব্দ ভেসে আসছে। অয়ন মুখার্জী, তৃতীয় বর্ষের মেডিকেল ছাত্র, নিজের ঘরে বসে নোটস লিখছিল, কিন্তু মনটা অস্থির। সেদিন বিকেল থেকে বন্ধুর ফোনে কোনো উত্তর নেই—ঋত্বিক সেন, যে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ, সবসময় সময়মতো খবর দেয়, তার এই নীরবতা অয়নকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। রাত প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ হঠাৎ পাশের ঘর থেকে আসা একটা ধাক্কার শব্দ অয়নকে চমকে দিল। শব্দটা…
-
ছত্তিসগড়ের গভীর জঙ্গলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। চারদিকটা যেন অদৃশ্য কোনো চাপা রহস্যে ঘেরা—গা ছমছমে নিরবতা, ঘন কুয়াশা আর মাঝে মাঝে শোনা যায় অজানা পাখির ডানার শব্দ। ডঃ নীলয় সেনগুপ্ত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান, জিপ থেকে নেমেই চারপাশটা একবার ঠান্ডা চোখে স্ক্যান করলেন। পিছনে তাঁর দলের বাকি সদস্যরা: তরুণ তথ্যচিত্র নির্মাতা অরিন্দম পাল, প্রত্নতাত্ত্বিক চিত্র বিশারদ ডঃ শ্রুতি দত্ত, ইতিহাসের গবেষক তনুশ্রী মুখার্জী এবং স্থানীয় গাইড兼ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট রাহুল কোসলে। তাঁরা আজ যে জায়গায় এসে পৌঁছেছেন, তার হদিশ পেয়েছিলেন কিছু দুর্লভ আদিবাসী নকশা বিশ্লেষণ করে। কথিত আছে, এই নির্জন জঙ্গলের মধ্যেই আছে এক প্রাচীন মন্দির, যার অবস্থান এতদিন…
-
রাজীব আচার্য বিশ্বভারতীর লাল মাটির ছায়ায় ঘেরা প্রাচীন গ্রন্থাগারে বসে ছিলেন ড. অমৃতা সেন। তার চোখের সামনে খোলা একটি পুরোনো খাতা, যার পাতাগুলো এতটাই ভঙ্গুর ছিল যেন যেকোনও মুহূর্তে ধুলোয় পরিণত হবে। সকালটা ছিল ঠান্ডা, হালকা কুয়াশা ঘেরা জানালার ওপার থেকে ঝরে পড়া মহুয়া ফুলের গন্ধে ভরে উঠছিল চারপাশ। তবে ড. সেনের মন ছিল অন্যত্র। “তান্ত্রিক ভারতের নারী ইতিহাস” বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি খুঁজে পান একটি অদ্ভুত নাম—নক্রচক্র। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন এটি হয়ত কোনো লোককথা, কোনও সাধুর নাম বা গ্রাম্য আচার। কিন্তু যতই পাতাগুলো পড়ছিলেন, ততই তার বিশ্বাস ভাঙছিল। পুঁথিতে লেখা ছিল, “নক্রচক্র হ’ল সেই তান্ত্রিক প্রবাহ, যা কেবল…
-
১ শীতের শুরুতে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়া সকালটা চক্রপুর রেলস্টেশনে থেমেছিল মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য। ছোট একটা প্ল্যাটফর্ম, দুই পাশে ধানখেত, মাঝখানে লালমাটির পথ—নেমেই অরিজিৎ বুঝে গিয়েছিল, এখানে সময় একটু ধীরে চলে। তার পায়ের কাছে গুটিগুটি করে হেঁটে যাওয়া কুকুরটা যেন তাকিয়ে বলছিল, “তুমি নতুন এসেছো, বুঝি?” সল্টলেক থেকে বেরিয়ে প্রায় ছ’ঘণ্টার সফর শেষে সে পৌঁছেছে এই প্রত্যন্ত গ্রামে, গবেষণার কাজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি বিভাগের অন্তর্গত একটি সাবজেক্ট — “লোকজ তন্ত্র এবং বাংলার গ্রামীণ সমাজে তার প্রভাব” — এর ওপর MPhil থিসিস করছে অরিজিৎ। বহু পড়াশোনার পর ও খোঁজ পেয়েছিল এই চক্রপুর গ্রামের, নদীর ধারে এক অচেনা নাম,…