• Bangla - তন্ত্র

    অগ্নিমণ্ডল

    অর্কদীপ সেন পর্ব ১ : আগুনের পুঁথি রুদ্রর বয়স তখন সাতাশ। কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞানে তার গবেষণা শেষ পর্যায়ে। তার বিষয়—বাংলার লোকবিশ্বাস, ভূতপ্রেত, তন্ত্রমন্ত্র আর আচার। এই শহরে যাদের কাছে তন্ত্র কেবল এক অদ্ভুত ভয়ের প্রতীক, তাদের চোখে রুদ্র ছিল খানিকটা অদ্ভুতুড়ে। সে পুরোনো গ্রন্থাগারে বসে দিনের পর দিন প্রাচীন পুঁথি ঘাঁটতে ভালোবাসত, রাতে ঘরে ফিরে নিজের নোটবইয়ে লিখে রাখত অদ্ভুত সব ছেঁড়া ছেঁড়া তথ্য—যেন একটি ভাঙা আয়নার টুকরো একত্র করছে, কিন্তু আয়নার প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি। এক বিকেলে, গরমের ধুলোয় ভরা মে মাসে, রুদ্র যায় নীলরতন লাইব্রেরির আর্কাইভ বিভাগে। আর্কাইভের ভেতর ঢুকলেই ম্লান আলোয় অদ্ভুত গন্ধ ছড়িয়ে থাকে—পুরোনো কাগজ,…

  • Bangla - তন্ত্র - রহস্য গল্প

    কালীকূপের রহস্য

    সন্দীপন বিশ্বাস অন্ধকারে মোড়া সেই গ্রামে দীপঙ্কর সেনের আগমন যেন এক অদ্ভুত পূর্বাভাসের মতো ছিল। কলকাতার ইতিহাসবিদ ও লেখক হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল, আর তাই গবেষণার তাগিদেই সে এই দূরবর্তী গ্রামে আসে। গ্রামের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা কালী মন্দিরের পাশে কূপটির কথা সে অনেক আগে থেকেই শুনে এসেছে—লোকমুখে কিংবদন্তির মতো ছড়িয়ে থাকা গল্প যে, রাত নামলেই এই কূপ থেকে অশুভ ছায়ারা বেরিয়ে আসে। শোনা যায়, বহু বছর আগে এখানে এক তান্ত্রিক সাধক তপস্যা করত, আর কূপের অন্ধকার গভীরে তার আত্মা এখনও বন্দী আছে। দীপঙ্কর প্রথম দিনেই গ্রামে পৌঁছে বুঝতে পারে, এখানকার মানুষদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। দিনের আলোতে গ্রামটি দেখতে…

  • Bangla - তন্ত্র

    অঘোরীর উত্তরাধিকার

    বিপ্লব দে ১ বারাণসীর নিশ্ছিদ্র অন্ধকার গঙ্গার ধারে মণিকর্ণিকা ঘাটে সেই রাতটা যেন মৃত্যুর গন্ধে মোড়া। শতাব্দীপ্রাচীন ঘাটের ভাঙাচোরা সিঁড়িগুলোয় অগ্নিশিখা নেচে বেড়াচ্ছে, মৃতদেহ দাহের ধোঁয়া গঙ্গার কুয়াশার সঙ্গে মিশে তৈরি করেছে ভয়ঙ্কর অথচ পবিত্র আবহ। আগুনের লাল আভায় নদীর জল কালো রঙে চকচক করছে, যেন গঙ্গাই আজ এক মহাশ্মশান। সেই শ্মশানের প্রান্তে, এক জরাজীর্ণ ঘাটঘরে শায়িত মহেশ্বর নাথ—অঘোর তন্ত্রের এক প্রবীণ সাধক। তাঁর শরীর ক্ষয়ে গেছে, হাড়গোড় বেরিয়ে এসেছে, তবুও মুখে এমন এক দীপ্তি যা মৃত্যুকেও হার মানায়। বুক ওঠানামা করছে কষ্টে, চোখের গভীরে জ্বলছে অন্তিম আলো। পাশে বসে অরিন্দম, গুরুপ্রেমে ভিজে চোখে জল। শিষ্য হাত দিয়ে গুরুজীর পা…

  • Bangla - তন্ত্র

    তন্ত্রপীঠের অগ্নিপরীক্ষা

    ১ প্রাচীন কাল থেকে গ্রামটির নাম শিউলিবাড়ি, তবে এই নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে বহু গোপন কাহিনি। গ্রামের উত্তর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষ প্রাচীন তন্ত্রপীঠ মন্দির, যার কাহিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কানে কানে পৌঁছেছে। লাল ইটের গায়ে শ্যাওলা জমে গেছে, ফাটল ধরা প্রাচীর থেকে গাছের শিকড় নেমে এসেছে যেন সময়ের আঁচড়। জনশ্রুতি আছে, এই মন্দির একসময় এক তান্ত্রিক রাজা নির্মাণ করেছিলেন, যিনি দেবীর কৃপা পাওয়ার জন্য নরবলি পর্যন্ত দিতেন। গ্রামের বয়স্করা বলেন, মন্দিরের অন্তঃকক্ষে এক গোপন দরজা আছে, যার ওপারে বন্দি রয়েছে এক অদ্ভুত অলৌকিক শক্তি—শক্তি, যা একবার মুক্তি পেলে সমগ্র অঞ্চলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। দিনের বেলাতেও মন্দিরের ভেতরে…

  • Bangla - তন্ত্র

    নির্বাচিত

    ঋদ্ধি চক্রবর্তী   পর্ব ১: কালির চোখ কলকাতা শহরের মধ্যভাগে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এক পুরোনো পাঠাগার—“রায় রে’ডিং রুম”—তেমন কোনও বিখ্যাত জায়গা নয়। অথচ সেখানে প্রতিদিন দুপুর তিনটার সময় ঠিক এক জন মহিলা এসে বসেন, বাম দিকের দ্বিতীয় সারির তৃতীয় টেবিলে। তাঁর নাম অনামিকা বাগচী। বয়স আটাশ। পেশায় গবেষক, জাদুবিদ্যা ও তন্ত্রশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তাঁর আসল কাজ শুরু হয় যখন বইয়ের পাতাগুলো শেষ হয়, আর প্রশ্নগুলো মুখে না থেকে ঢুকে পড়ে মগজে। সেদিন দুপুরেও অনামিকা এসে বসেছিল টেবিলটায়। লাল কাপড়ে মোড়া একটা পুরনো খাতা তার সামনে। নাম নেই, লেখকের উল্লেখ নেই। পাতাগুলোতে শুধুই আঁকা—ত্রিকোণ, মন্ডল,…

  • Bangla - তন্ত্র

    অগ্নিসূত্র

    তনিমা বসাক পর্ব ১: অজ্ঞাত সংলাপ কলকাতার গ্রীষ্মের বিকেল যখন কাচে ধাক্কা মারে, মনের ভেতরের অতীত-বর্তমানও তখন এক অদ্ভুত তাপমাত্রায় কাঁপে। ড. অরণ্য সেন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বাইরের ঝিম ধরা রোদ আর ঘামচাপা শহরের ভাঁজে ভাঁজে যতসব অদেখা গল্প জমা হচ্ছে, তার দিকে তাকিয়ে। তাঁর চেম্বারটি শহরের দক্ষিণে, বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছাকাছি, চতুর্থ তলায়, চুনে ধরা দেওয়ালের পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া বিবর্ণ সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এক প্রাইভেট চেম্বার। এইখানেই তিনি মানুষের মন পড়েন—যেমন দারোয়ান পড়ে কাগজে মোড়া চা, কিংবা বইয়ের দোকানের ছেলে পড়ে পৃষ্ঠার ভাঁজ। আজ তাঁর টেবিলের সামনে বসে রয়েছে এক অদ্ভুত মেয়ে—নিপা বসু। চোখে সুরের মতো নরম অস্থিরতা,…

  • Bangla - তন্ত্র

    চৌরঙ্গীর অমাবস্যা

    তিথি বসু পর্ব ১: তাবিজওয়ালা ঘর শহরের কোলাহলের মাঝখানে, যেখান থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঝাপসা দেখা যায়, সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে চৌরঙ্গীর একটি পুরনো হোটেল—‘হোটেল সম্রাট’। বাইরে থেকে দেখলে আধুনিক মনে হলেও ভিতরে ঢুকলেই যেন সময় পিছিয়ে যায়—ফিকে আলো, সাদা কাঠের জানালা, আর মোটা মোটা পর্দা যা আলো ঢুকতে দেয় না। সেই হোটেলের ৩১৫ নম্বর ঘর থেকে পাওয়া গেল এক মৃতদেহ। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখে—একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ খাটে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। ঘরের ভিতর অদ্ভুত একটা গন্ধ—মাটির, ধূপের, আর যেন ভেজা ছাইয়ের গন্ধ। মৃতদেহের পাশে পড়ে ছিল একটি তাবিজ—লাল সুতোয় বাঁধা, তাতে শিকল দিয়ে আটকানো একটা ক্ষুদ্র রৌপ্য বাক্স। এই খুনের…

  • Bangla - তন্ত্র

    তান্ত্রিকের অভিশাপ

    শুভেন্দু বসাক তান্ত্রিকের অভিশাপ শুভেন্দু বসাক নিষিদ্ধ শক্তি শুভ, এক তরুণ তান্ত্রিক ছাত্র, জীবন থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করছিল। তার সাধনাতে গভীরতার জন্য সে ছটফট করছিল, দিনের পর দিন চূড়ান্ত নিষ্ঠার সাথে তন্ত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন করছিল। সে জানত যে তার ভিতরের শক্তি শুধু তাকে নয়, পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে, যদি সে সেই শক্তির সঠিক ব্যবহার জানত। কিন্তু কেউ জানত না, যে তার তন্ত্র সাধনা শুধু এক ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এর পরিণতি তাকে এক অন্ধকারে নিয়ে যাবে, যা সে কখনো কল্পনা করতে পারেনি। তন্ত্র সাধনায় দীক্ষিত হওয়ার পর, শুভ একদিন শিখে গেল একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মন্ত্র—এটি তার সাধনা…

  • Bangla - ছোটগল্প - তন্ত্র

    বামাচরণের অভিশাপ

    বোধিসত্ত্ব চক্রবর্তী (১) কলকাতার নারকেলডাঙার থানায় সদ্য বদলি হয়ে আসা অফিসার অরিত্র বসু জানতেন না, এই বদলি তার জীবনের সব যুক্তি-পরম্পরাকে ভেঙে দেবে। সেই সময় বর্ষা শেষের দিন, আকাশে ছাইরঙা মেঘের স্তর ঝুলছে। সকালবেলা থানায় বসেই অরিত্রর হাতে এসে পড়ে এক বিশেষ চিঠি—দক্ষিণ ২৪ পরগণার এক প্রত্যন্ত গ্রাম ‘ছায়ামাটি’তে পরপর তিন বছর একদিনে আগুন লেগে গেছে, গ্রামের একাংশ ছাই হয়ে গেছে, এবং আজও কেউ জানে না কেন বা কীভাবে। চিঠির নিচে স্বাক্ষর করেছেন ডি.এস.পি. গগন সরকার—অরিত্রকে বলা হয়েছে, ঘটনাটি তদন্ত করে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। অরিত্র প্রথমে ভাবলেন, এ তো ফায়ার ব্রিগেডের ব্যাপার, পুলিশের কী? কিন্তু পড়তে পড়তে চোখ…

  • Bangla - তন্ত্র

    অষ্টভয়ার অন্তর্গত

    অভিজিৎ দাস পর্ব ১: আগমনী কলকাতার বিখ্যাত নাট্যদল ‘অভিনয়নগর’ তাদের পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শহরের বাইরে একটা থিয়েটার রিট্রিটের আয়োজন করেছিল। স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল বিষ্ণুপুর—ইতিহাস আর সঙ্গীতের শহর। সেখানে গিয়ে নাটকের মহড়া, স্ক্রিপ্ট রিডিং, ওয়ার্কশপ, আর প্রকৃতির মধ্যে কিছুটা সময় কাটানো—এই ছিল উদ্দেশ্য। দলের অন্যতম প্রবীণ সদস্য অভিজিৎদা বলেছিলেন, “বিষ্ণুপুরে একটা পুরনো রাজবাড়ির মন্দির আছে। বহুদিন কেউ যায় না, একটু ভৌতিক, কিন্তু জায়গাটা একেবারে থিয়েটার-যোগ্য।” সবার কৌতূহল জাগল। নাটকের ছায়া পড়ার জন্য এমন পরিবেশই তো চাই। রওনা হয়েছিল দশজন—আটজন অভিনেত্রী, একজন মেকআপ আর্টিস্ট, আর রুদ্র—স্ক্রিপ্ট লেখক এবং নির্দেশক। দলটির গঠন ছিল যেন এক থ্রিলারের চাবিকাঠি। সকলেই নিজস্ব জীবনযন্ত্রণা…