• Bangla - তন্ত্র

    কালরাত্রির ডাকে

    প্রিয়াংশু মুখোপাধ্যায় অধ্যায় ১ গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে, যেখানে কাঁদামাটি ধীরে ধীরে কালচে ধূসর বালিতে মিশে গেছে, আর গঙ্গার একটি পরিত্যক্ত শাখা নদী যেন মৃত সাপের মতো স্থির হয়ে শুয়ে আছে, সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে সেই প্রাচীন শ্মশান। দিনের বেলাতেও এখানে ছায়া ঘন হয়, আর রাত নামলে মনে হয় যেন অদৃশ্য কোনো প্রহরী অন্ধকারের চাদর মেলে দিয়েছে। প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই শ্মশান একসময় জমিদারদের পারিবারিক চিতা স্থল ছিল, পরে ধীরে ধীরে সবার জন্য উন্মুক্ত হয়। তার ভাঙাচোরা প্রবেশদ্বারের ওপরের পাথরের খোদাইয়ে ক্ষীণভাবে এখনও দেখা যায় কালো দাঁত বের করা দেবীমূর্তি, যার চোখে লাল সিঁদুর লেপ্টে আছে। আশেপাশের পুরনো শিমুল, শিরীষ আর…

  • Bangla - তন্ত্র

    অগ্নিবিন্দু মন্ত্র

    তনিমা বসাক রুদ্রাক্ষী জানত না ঠিক কোন মুহূর্তে তার রোগীর মুখে উঠে আসে সেই চিহ্নটা—একটা বৃত্তের মধ্যে ঘূর্ণায়মান চারটি রেখা, যেটা দেখে মনে হয় যেন কালি ছড়ানো হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে কিন্তু ভেতরে কোনও গাণিতিক ছন্দ লুকিয়ে আছে। রোগীটির নাম ছিল অনুকূল বসু—৬৫ বছরের এক প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক, যার স্মৃতিভ্রংশের উপসর্গেই রুদ্রাক্ষী প্রথমে সন্দেহ করেছিল আলঝেইমার, কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে সেই কাগজটা হাতে এল। পুরোনো, হলুদ হয়ে যাওয়া একটা ডায়েরির ভাঁজে তোলা সেই চিহ্ন দেখে হঠাৎ তার মনে পড়ে গিয়েছিল মায়ের শেষদিনগুলো—যখন মা অজান্তে কিছু চিহ্ন আঁকতেন বাতাসে, চুপ করে থাকতেন, বলতেন, “এই লেখাগুলো কারো জন্য নয়, শুধুই অগ্নির জন্য।” মা ছিলেন একসময় রবীন্দ্রভারতীর…

  • Bangla - তন্ত্র

    অঘোরিণী

    অনির্বাণ বসু পর্ব ১: শ্মশানের আগুনের নিচে শ্মশানের রাতগুলো বড় নিঃশব্দ হয়, কিন্তু সেই রাতে কিছু ছিল যা নিঃশব্দ ছিল না। ছিল আগুনের গর্জন, ছিল মাটির নিচ থেকে উঠে আসা ধোঁয়ার মতো এক দীর্ঘশ্বাস। কাশীপুরের পুরনো শ্মশানঘাটে সেই রাতে আবার জ্বলে উঠেছিল চিতা, অথচ কারো মৃতদেহ ছিল না। অন্তত চোখে দেখা যায়নি। গ্রামের মানুষজন বলত—এই শ্মশানে কেউ যায় না চাঁদ না উঠলে। অথচ সেদিন ছিল অমাবস্যা, আকাশে ছিল না একফোঁটা আলো, কেবল আগুনের দীপ্তি কাঁপিয়ে দিচ্ছিল গাছের ছায়া। কুয়াশা, ধোঁয়া আর ছাই—সব মিশে এক অদ্ভুত গন্ধ তৈরি করছিল। হঠাৎ বাতাস থেমে গেল। চিতার সামনে বসে ছিল সে। সাদা ছাইয়ের মতো…

  • Bangla - তন্ত্র

    তন্ত্রের আঁধারে

    সব্যসাচী হাজরা পর্ব ১: রহস্যময় পুস্তক শীতের রাত। চারপাশে একটা গা ছমছমে নিস্তব্ধতা। কলকাতার শহরতলির প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো দোতলা বাড়িটা যেন রাতের আঁধারে আরও বেশি রহস্যময় দেখাচ্ছিল। সেখানেই থাকত আকাশ সেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ গবেষক। তার পড়াশোনার বিষয় ছিল “ভারতের লোকবিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক ইতিহাস”, বিশেষ করে তন্ত্রবিদ্যার ওপর সে গভীর আগ্রহী ছিল। তবে তার এই আগ্রহ ছিল শুধু বইপত্র পড়া ও গবেষণার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ—অন্তত সে তাই ভাবত। এক সন্ধ্যায়, কলেজ স্ট্রিটের এক পুরনো বইয়ের দোকানে ঢুকেছিল আকাশ। দোকানটা ছিল অদ্ভুত রকমের নিঃসঙ্গ, যেন কেউ ঢোকে না কখনও। ধুলো জমা তাকের মধ্যে হঠাৎ তার নজর পড়ল একটা মোটা চামড়া বাঁধানো…