• Bangla - তন্ত্র

    ডাকিনীবৃত্তান্ত

    অমৃতা রায় চৌধুরী অধ্যায় ১: কলকাতার উত্তরপ্রান্তের এক মফস্বলি ফ্ল্যাটের বারান্দা ধরে ছড়িয়ে পড়া সকালের আলোয় বসে ছিল অর্ণা সেনগুপ্ত, হাতে ছিল এক কাপ লিকার চা আর চোখ ছিল ল্যাপটপের স্ক্রিনে আটকে থাকা। তার চোখে লালচে রেখা, সারারাত ঘুম হয়নি ঠিকঠাক—নিউজরুমের মধ্যরাতের মিটিং, তার পরে হঠাৎ করে সিনিয়র এডিটরের একটি নির্দেশ—“ঝাড়খণ্ডে একটা মেয়ের মৃত্যুর খবর এসেছে, গ্রামবাসীরা বলছে ডাইনি, কিন্তু তুই গিয়ে দেখে আয়। কিন্তু এবার শুধু নিউজ রিপোর্ট নয়, আমি চাই এক্সপোজে—তুই পারবি।” অর্ণা পারবে না? অর্ণা জানে, এই সমাজ কিভাবে নারীর অস্বাভাবিকতা বা স্বাধীনতা দেখলেই তাকে ‘ডাইনি’, ‘অশুভ’, বা ‘অতিমাত্রায় শক্তিশালী’ বলে আখ্যা দেয়। কিন্তু সাংবাদিকতা মানে কি…

  • Bangla - তন্ত্র

    মৃত্যুর তন্ত্র

    পর্ণা মজুমদার ১ কলকাতার এক নির্জন কোণে, পুরোনো পাঠাগারের চুপচাপ পরিবেশে প্রজ্ঞনাথ দাস তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করলেন। তিনি ছিলেন এক পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষক, যিনি প্রাচীন তন্ত্র, পুরাণ এবং রহস্যময় গ্রন্থের প্রতি প্রবল আগ্রহী। বহু বছর ধরে তিনি নানা পুরনো গ্রন্থের মধ্যে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়িয়েছিলেন এমন এক বই, যা তাকে রহস্যের গভীরে নিয়ে যাবে। আজ, সেই বইটি তার হাতে এল, একটি পুরানো এবং ক্ষয়প্রাপ্ত চামড়ার বাঁধনযুক্ত গ্রন্থ। বইটির উপর লেখা ছিল না কিছু, শুধু কিছু জটিল নিদর্শন ও অদ্ভুত চিহ্ন, যা প্রজ্ঞনাথের মনের মধ্যে একটি অদৃশ্য আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল। বইটি তার হাতে নেওয়ার পর থেকেই, যেন কিছু একটা ঘটতে…

  • Bangla - তন্ত্র

    নবচণ্ডী কাহিনী

    প্ৰনব দত্ত এক পত্রটা এসেছিল একেবারে অচেনা কাগজে, যেন তালপাতার কপি, তাতে আঁচড়ে আঁকা অদ্ভুত সব অক্ষর — সংস্কৃতের মতো, কিন্তু অচেনা ছন্দে বাঁধা। কলকাতার কলেজ স্টাফরুমে বসে চা খেতে খেতে যখন ঋদ্ধিমান ভট্টাচার্য চিঠিখানা খোলে, তখন সে ভাবেনি এমন কিছুর মুখোমুখি হবে। “আপনার পাণ্ডিত্য ও ঋগ্বেদের উপর আপনার বিশেষ জ্ঞান সমীহ জাগায়। অতএব, আপনাকে ত্রয়োদশ তিথির নবচণ্ডী যজ্ঞে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি — মহাভৈরবী মন্দির, দক্ষিণ নবগ্রাম।” চিঠির নিচে কোনো নাম নেই, শুধু একটা সিলমোহর — গাঢ় লাল, আর তার উপর খোদাই করা এক নারীর মুখ, যার কপালে শূন্য। প্রথমে মজা ভেবেছিলেন ঋদ্ধিমান, কেউ হয়তো বানিয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু জায়গাটার…

  • Bangla - তন্ত্র

    কালো রুদ্রাক্ষ

    রিতা সুর চৌধুরী এক শ্মশানের নরম সাদা ছাই আর কালো পাথরের ফাঁক দিয়ে বেরোনো ধোঁয়ার মতোই নিঃশ্বাস নিত রুদ্রনাথ—যেন প্রাচীন কালের অন্ধকার তাকে গ্রাস করে নিয়েছে আর ছাড়তে চায় না। এক সময় তান্ত্রিকদের মধ্যে যার নাম ছিল সম্মানের, সেই রুদ্রনাথ আজ শুধু অন্ধকার আর ব্যর্থতার এক জীবন্ত প্রতিমা। চোখের তলায় গভীর গর্ত, কপালে কালি আর রক্তের তিলক, ছেঁড়া গেরুয়া বসনে জড়ানো দেহ আর হাতের শিরাগুলোতে শুকিয়ে যাওয়া তেলের গন্ধ—সব মিলিয়ে এক পচন ধরা সাধকের চেহারা। শ্মশানটি সেই সময় প্রায় পরিত্যক্ত; মাঝে মধ্যে শুধু মৃতদেহের মিছিল এসে পুড়ে যায়, ধোঁয়ার সাথে মিলিয়ে যায় কান্নার শব্দগুলো। রুদ্রনাথের তন্ত্রের আসন সেই চিতা ভস্মের…

  • Bangla - তন্ত্র

    রক্ততান্ত্রিক

    অধ্যায় ১: উত্তরাধিকার দক্ষিণ কলকাতার শেষ প্রান্তে, গড়িয়ার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো বাড়িগুলোর মধ্যে একটি ছিল “নীলকুঠি”—একটা অর্ধভাঙা, গাঢ় সবুজ পাতাবরণে ঢাকা অদ্ভুত প্রাসাদসদৃশ বাড়ি। বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত, নিঃসঙ্গ সেই বাড়িটির একটিমাত্র প্রহরী ছিল সময়—যার সঙ্গে লড়তে লড়তে ভেঙে পড়েছিল ছাদের কার্নিশ, ভেঙে গিয়েছিল মেঝের সিমেন্ট, আর কড়া নড়তে নড়তে শূন্যতার ভিতরেও এক অচেনা শব্দ তৈরি হত। অনেকেই বলত, ও বাড়ি ভৌতিক। কেউ কেউ বলত, শয়তানের বাড়ি। কিন্তু অদ্বৈত মৈত্র এসব কল্পকাহিনি শুনেই বড় হয়নি। তার শৈশবের কতশত দুপুর আর সন্ধ্যে এই বাড়ির এক কোনায় তার ঠাকুরদার কোলে বসে কেটেছে—পুঁথি আর প্রাচীন কাগজের গন্ধমাখা গল্পের ভিতর। তবে বড়…

  • Bangla - তন্ত্র

    শ্মশানতলার পিশাচ

    সৌম্য আইচ অধ্যায় ১: অমাবস্যার আগমন বছর দশেক পরে তমাল আবার ফিরছে গ্রামের দিকে। শহরের ব্যস্ততা, কনক্রিটের জঞ্জাল, অসংখ্য হর্নের আওয়াজের ভিতর থেকেও তার মনটা একধরনের অস্থিরতায় কাঁপছিল কয়েকদিন ধরে। দাদুর হঠাৎ মৃত্যু সংবাদে সে যেন মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল, যদিও শেষ ক’বছর তেমন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু শৈশবের সেই বিকেলগুলো, যখন দাদুর তান্ত্রিক ঘরের ধূপগন্ধে বসে সে ঘুমিয়ে পড়ত—সে স্মৃতি আজো গাঁথা। তমাল জানত, তার দাদু শুধু ঘরের মন্ত্রতন্ত্রেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, গ্রামের লোকেরা তাঁকে ভয় করত। কিছুটা শ্রদ্ধায়, কিছুটা আতঙ্কে। ‘বিজনানন্দ ঠাকুর’ নামে পরিচিত তার দাদু নাকি এক পিশাচকে কাবু করেছিলেন—এমন গল্প শুনেছে সে ছোটবেলায় জমিলা বুড়ির মুখে। তমাল…

  • Bangla - তন্ত্র

    তান্ত্রিকের পালঙ্ক

    সায়ন্তন চক্রবর্তী ১ আকাশ ছিল ধূসর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পেরিয়ে এসেছে অনেকক্ষণ, কিন্তু সূর্য যেন সকালেই হেরে গিয়েছে মেঘের জোরে। শান্তিনিকেতনের মাঠ তখন প্রায় ফাঁকা, হেমন্তের শুষ্ক হাওয়া ঝরে পড়া পাতাগুলোকে ঘূর্ণির মতো ঘুরিয়ে নিচ্ছে। অনির্বাণ নিজের হোস্টেলের ঘরের জানালার পাশে বসে শেষ পৃষ্ঠা পড়ছিল একটি পুরোনো কাগজের কাটিং—যেখানে অর্ধশতক আগে ছাপা হয়েছিল এক আশ্চর্য সংবাদ: “পাথরঘাটার গোপন ঘরে তান্ত্রিকের ছায়া—ভয়ের আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে বাসিন্দারা।” খবরটা ছিল ভাসা-ভাসা, তেমন নির্ভরযোগ্য না, কিন্তু গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গত তিন বছর ধরে অনির্বাণ কাজ করছে বাংলার লোকবিশ্বাস ও তান্ত্রিক সাধনার উপর। শান্তিনিকেতনের বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গবেষণার বিষয় ছিল, “পূর্বভারতের লুপ্তপ্রায় তন্ত্রশিক্ষা ও জনচর্চা: বাস্তবতা…