সৌম্যজিৎ বসাক ১ সকালের আলো জানালার পাতলা পর্দার ফাঁক গলে এসে পড়ছে বিছানার চাদরে। ঘড়ির কাঁটা আটটা বাজিয়ে থেমে গেছে—না, থেমে যায়নি, চলছে, কিন্তু তার কাছে যেন সব স্থির। ড. অরিজিৎ ধর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ছাদের দিকে। মস্তিষ্কে যেন কোনো শব্দ নেই, কোনো স্মৃতি নেই, কোনো প্রতিচ্ছবি নেই। তিনি উঠে বসলেন বিছানায়। মাথাটা ভারী লাগছে, যেমন হয় একটানা অনেকক্ষণ ঘুমালে। চারপাশে চেনা আসবাবপত্র, পরিচিত বইয়ের তাক, ল্যাম্পশেডের নিচে রাখা একটা পুরোনো পেন স্ট্যান্ড। কিন্তু এই ঘরটা যেন আজ নতুন মনে হচ্ছে—কিংবা মনে পড়ছে না একেবারেই। তিনি টেবিলের দিকে হাঁটলেন, যেখানে একটি নীলমাখা ডায়েরি খোলা পড়ে আছে। নিজের হাতের…
-
-
মোহনা বসু উত্তর কলকাতার পুরনো এক গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা তিনতলা বাড়িটার নাম ‘শ্রীনিবাস’। বয়স প্রায় একশো বছরের কাছাকাছি। দরজার কাঠে হাত রেখে চোখ বন্ধ করলে এখনও মনে হয় যেন কেউ আঙিনায় রাঁধুনি দিদার হাঁকডাক দিচ্ছে, ভিতরে কেউ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে, আর পেছনের জানালা দিয়ে ভেসে আসছে ফুলকোচুর গন্ধ। এই বাড়িরই বড় কন্যা রোহিনী সেন, বয়স একুশ, প্রেসিডেন্সি কলেজের দর্শনের ছাত্রী। জন্ম থেকে বড় হওয়া এই বনেদি পরিবারে, যেখানে মেয়েরা কথা কম বলে, হাঁটে মেপে মেপে, হাসে মাথা নিচু করে। রোহিনীর বাবা অশোক সেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, মুখে মেপে কথা বলা, চোখে ঠাণ্ডা নিয়ন্ত্রণের রোশনাই। মা বাণী সেন, সমাজে পরিচিত এক ‘আদর্শ স্ত্রী…
-
দেবযানী মিত্র ১ নদীয়ার ‘গিরিজামোহিনী বালিকা বিদ্যালয়’ বরাবরই শান্ত, ছায়াস্নাত পরিবেশে গড়া একটি পুরনো স্কুল, যার পেছনে ছড়িয়ে আছে রহস্যে মোড়া এক আভা। বারো মাসে একদিন, পূর্ণিমা রাতে, হঠাৎ যেন স্কুলের প্রাচীরের আড়ালে নেমে আসে এক অদৃশ্য ছায়ার করাল উপস্থিতি। মেয়েরা জানে, কোনো অলীক কথা নয়, কেউ বা কিছু ওই স্কুলের পেছনের বিশাল বটগাছটিকে ঘিরে জেগে থাকে। দশম শ্রেণির ছাত্রী রিমা সাহা এই ধরনের গুজবে বিশ্বাস করে না, বরং হাসি ঠাট্টায় উড়িয়ে দেয় সবকিছু। কিন্তু সেই রাতটা ছিল আলাদা—পূজা ছুটি শেষে স্কুলে ফেরার আগের সন্ধ্যা, আকাশে টানা মেঘের ছায়া, তবু এক নিখুঁত গোল চাঁদ ঝলসে উঠেছে পশ্চিমের আকাশে। বাড়ির ছাদে…
-
ত্রিসা ভট্টাচার্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট—চিরচেনা, চিরসজীব, আলো-আঁধারির এক নিটোল সহবাস। দিনের শেষে যখন রাজপথের হট্টগোল স্তিমিত হয়ে আসে, আর দোকানপাটগুলো একে একে ঝাঁপ ফেলে দেয়, ঠিক তখনই এই রাস্তার পেট থেকে জেগে ওঠে অন্য এক কলকাতা—যার অলিগলিতে ঘুরে বেড়ায় ছায়া, স্মৃতি, আর কিছু হারিয়ে যাওয়া নাম। এই শহরের এক কোণে, এক ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা দোকানটা যেন শহরের ব্যস্ততা থেকে আলাদা, নিজের ছন্দে বাঁচে। নাম—”রিডিং রুম”। দোকানটা যত না বিক্রির জন্য, তার চেয়েও বেশি যেন অপেক্ষার জন্য বানানো। এখানে ধুলোমাখা বুকশেলফে ঠাসা পুরনো বই, কাঠের মেঝেতে বেজে ওঠা অদ্ভুত কড়মড় শব্দ, আর দোকানঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা কাঁসার ঘড়ির মতোই অপরিবর্তিত…