• Bangla - রহস্য গল্প

    ছায়ার সাম্রাজ্য

    আরিফ রহমান পর্ব ১: কাবুলের ধ্বংসস্তূপে জন্ম বাতাসে ধুলো আর বারুদের গন্ধ মিশে ছিল। কাবুল শহরের ভাঙাচোরা ইট, অর্ধেক গুঁড়িয়ে যাওয়া মসজিদ আর অগ্নিদগ্ধ গলিপথ যেন যুদ্ধের পরও যুদ্ধের গল্প শুনিয়ে যাচ্ছিল। একসময় যেসব পথে শিশুরা হেসে খেলত, সেসব গলিতে এখন কেবল বুটের শব্দ আর ভয়ে কাঁপতে থাকা মানুষের নিশ্বাস। যুদ্ধ এখানে কোনো সংবাদপত্রের শিরোনাম নয়—এখানে যুদ্ধ ছিল দৈনন্দিন জীবন। সে ভাঙাচোরা গলির এক অন্ধকার কোণে, জন্ম নিল এক শিশু। জন্মের সময় তার চারপাশে কোনো আনন্দ ছিল না, বরং চারদিকে বেজে উঠেছিল কামানের গর্জন। মায়ের রক্তাক্ত শরীর, আতঙ্কিত চোখ—সেই ছিল শিশুটির প্রথম পৃথিবী দেখা। নাম রাখা হলো ইমরান। তার জন্ম…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    বটতলার ছায়া

    রুদ্রনীল মুখোপাধ্যায় পর্ব ১: শীতের ধোঁয়ায় ঢাকা গ্রাম পূর্ব মেদিনীপুরের এক ছোট্ট গ্রাম। শীতকালের ভোর। মাঠে ঘন কুয়াশা নেমে এসেছে। শীতল হাওয়ায় নারকেল গাছের পাতা কাঁপছে। দূর থেকে হেঁটে আসছে কৃষকরা, কাঁধে লাঙল, মাথায় উলের টুপি। পুকুরপাড়ে বসে রয়েছে বুড়ো গোপাল—গাঁয়ের লোক তাকে ডাকে “গোপাল-ঠাকুর” নামে। বয়স আশির কোঠায়। মুখভরা সাদা দাড়ি, চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। গ্রামের নতুন প্রজন্ম ভাবে তিনি কেবলই বুড়ো। কিন্তু বয়স্করা জানে—এই মানুষ একসময় ছিলেন লোককথার ভাণ্ডার। নদীর ধারে, বটতলার আড্ডায়, মেলা-পার্বণে—তার গল্পে জমে উঠত রাত। আজও তিনি একা বসে বটগাছটার দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই বটগাছ গ্রামে এক রহস্য। লোকেরা বলে—গাছটার শিকড়ের নিচে লুকিয়ে আছে কোনো…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    Shadow Protocol

    অর্জুন ধর দ্য কল ব্যাক দিল্লির পুরোনো চাঁদনি চকের গলির ভেতরে এক ছোট্ট বইয়ের দোকান। নাম স্মৃতির আড্ডা। কাঠের তাকজোড়া ভরে আছে পুরোনো গোয়েন্দা উপন্যাস, ইংরেজি ক্লাসিক, বাংলার কবিতার বই। দোকানের মালিক অর্ণব সেন—চল্লিশ ছুঁইছুঁই, চশমা পরা, গম্ভীর মুখের মানুষ। তার বুকশপে দুপুরগুলো শান্ত, শুধু পাখির ডাক আর বাইরের যানজটের আওয়াজ ভেসে আসে। কেউ তাকে চিনে না, কেউ জানে না, এই নিরীহ বই বিক্রেতা একসময় ভারতের সবচেয়ে তীক্ষ্ণ গুপ্তচর ছিল। অর্ণবের দিনগুলো কাটছিল সহজেই—সকালে দোকান খোলা, দুপুরে ক’জন ছাত্রছাত্রী আসে নোটস খুঁজতে, সন্ধ্যায় তিনি একা বসে থাকেন। কিন্তু এই শান্তজীবন হঠাৎই ভেঙে দিল এক পুরনো ফোনকল। রাত তখন সাড়ে দশটা।…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    গহন বন আর বাঁশির ডাক

    তনয়া সেন বিকেলের শেষ আলোয় যখন সূর্য পাহাড়ের গায়ে ধূসর হয়ে গলে আসছিল, তখনই অরণ্যের বাস এসে পৌঁছল ছোট্ট গ্রামটায়। বাস বলতে আসলে একটা পুরোনো মিনিবাস, জানালার কাচ ঝাপসা, সিটের চামড়ায় ফাটল। গাঁয়ের নাম রাধাপুর—এমন নাম মানচিত্রে খুঁজলেও পাওয়া মুশকিল। তবু অরণ্যের মতো ফটোগ্রাফারের কাছে এই জায়গার টান ছিল অন্যরকম। শহরের কোলাহল, নামজাদা প্রকল্প, নামী রিসর্ট নয়—বরং অচেনা, অনাবিষ্কৃত জায়গার মধ্যে লুকোনো প্রকৃতির ছবি তুলতে তার সবচেয়ে ভালো লাগে। অরণ্যের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটা ভারী, ভিতরে ক্যামেরা, লেন্স, ত্রিপড আর কিছু নোটবুক। বাসস্ট্যান্ডে নেমে চারপাশে তাকাতেই সে বুঝল, এই গ্রাম যেন সময়ের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁচা রাস্তা, খড়ের চালের ঘর, বাচ্চাদের…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গোপন সিন্দুকের ছায়া

    অরিন্দম ঘোষ পর্ব ১ : প্রথম সূত্র কলকাতার গরম বিকেলটা অস্বাভাবিকভাবে নিস্তব্ধ ছিল। কলেজ স্ট্রিটের বুকশপগুলোতে ভিড় কমে আসছিল, বই হাতে নিয়ে দু-চারজন ছাত্র পায়ে টেনে হাঁটছিল। রক্তিম সেনের চোখ তীক্ষ্ণ, তার হাতের পাতায় ধরা এক মলিন খাতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো আর্কাইভ ঘেঁটে এইমাত্র সে খাতাটা পেয়েছে—ভুলে যাওয়া এক জমিদারবাড়ির দলিল। হলুদ হয়ে যাওয়া কাগজ, তার ভেতরে খসখসে অক্ষরে লেখা নাম—“রায়বাহাদুর শশাঙ্ক মুখার্জি, ১৮৬৪।” রক্তিমের ভ্রু কুঁচকে গেল। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে সে জানে, শশাঙ্ক মুখার্জি ছিলেন মুর্শিদাবাদের এক বিত্তশালী জমিদার, যিনি ইংরেজদের সঙ্গে মিলেমিশে চলতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পরে হঠাৎ করে পুরো বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিংবদন্তি আছে, তার ভিটেবাড়ির ভেতর…

  • Bangla - তন্ত্র

    অগ্নিসূত্র

    তনিমা বসাক পর্ব ১: অজ্ঞাত সংলাপ কলকাতার গ্রীষ্মের বিকেল যখন কাচে ধাক্কা মারে, মনের ভেতরের অতীত-বর্তমানও তখন এক অদ্ভুত তাপমাত্রায় কাঁপে। ড. অরণ্য সেন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বাইরের ঝিম ধরা রোদ আর ঘামচাপা শহরের ভাঁজে ভাঁজে যতসব অদেখা গল্প জমা হচ্ছে, তার দিকে তাকিয়ে। তাঁর চেম্বারটি শহরের দক্ষিণে, বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছাকাছি, চতুর্থ তলায়, চুনে ধরা দেওয়ালের পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া বিবর্ণ সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এক প্রাইভেট চেম্বার। এইখানেই তিনি মানুষের মন পড়েন—যেমন দারোয়ান পড়ে কাগজে মোড়া চা, কিংবা বইয়ের দোকানের ছেলে পড়ে পৃষ্ঠার ভাঁজ। আজ তাঁর টেবিলের সামনে বসে রয়েছে এক অদ্ভুত মেয়ে—নিপা বসু। চোখে সুরের মতো নরম অস্থিরতা,…

  • Bangla - ছোটদের গল্প - রহস্য গল্প

    আলোর ওপার

    ঐন্দ্রিলা চক্রবর্তী কলকাতার সাউথ সিটি কলেজে নতুন সেমিস্টার শুরু হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ। ঐশী চৌধুরী ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে যখন ট্যাক্সি থেকে নামল, তখন বিকেলের আলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছিল। দক্ষিণ কলকাতার এক কোণায় অবস্থিত ‘সুবর্ণ পল্লী আবাসন’ – চারতলা একটি পুরনো ফ্ল্যাট কমপ্লেক্স, বাইরের রঙ প্রায় উঠে গেছে, জানালার লোহার রেলিংয়ে জং ধরেছে আর ছাদের ড্রেনপাইপ থেকে পানির ফোঁটা ঝরছে টুপটাপ। ঐশী নিজের নতুন ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটের চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলল—দরজার কপাটটা একটা ধাতব আর্তনাদের মতো শব্দ তুলে খুলে গেল। ভিতরে ঢুকেই একটা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ তাকে অভ্যর্থনা জানাল, তবে সে এমন গন্ধে অভ্যস্ত। ছোটবেলা থেকেই সে পুরনো জিনিসে টান…

  • Bangla - তন্ত্র

    চৌরঙ্গীর অমাবস্যা

    তিথি বসু পর্ব ১: তাবিজওয়ালা ঘর শহরের কোলাহলের মাঝখানে, যেখান থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঝাপসা দেখা যায়, সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে চৌরঙ্গীর একটি পুরনো হোটেল—‘হোটেল সম্রাট’। বাইরে থেকে দেখলে আধুনিক মনে হলেও ভিতরে ঢুকলেই যেন সময় পিছিয়ে যায়—ফিকে আলো, সাদা কাঠের জানালা, আর মোটা মোটা পর্দা যা আলো ঢুকতে দেয় না। সেই হোটেলের ৩১৫ নম্বর ঘর থেকে পাওয়া গেল এক মৃতদেহ। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখে—একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ খাটে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। ঘরের ভিতর অদ্ভুত একটা গন্ধ—মাটির, ধূপের, আর যেন ভেজা ছাইয়ের গন্ধ। মৃতদেহের পাশে পড়ে ছিল একটি তাবিজ—লাল সুতোয় বাঁধা, তাতে শিকল দিয়ে আটকানো একটা ক্ষুদ্র রৌপ্য বাক্স। এই খুনের…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    ওয়াচম্যানের নোটবুক

    পর্ব ১ দেবব্রতের প্রথম রাতের ডিউটি। হাওড়ার পুরনো শিল্পাঞ্চলের এক পরিত্যক্ত টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে সে নিযুক্ত হয়েছে নতুন রাতের প্রহরী হিসেবে। নাম—প্রতুল টেক্সটাইল মিল। মিল বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় তিন বছর, কিন্তু মালিকপক্ষ এখনো জায়গাটা সুরক্ষিত রাখতে চায়—কোনো সরকারি নোটিশ, জমি দখল বা আগুন যেন না লাগে, এইসব ভেবে একজন নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়েছে। নিঃশব্দ এক জায়গা, চারপাশে ভাঙাচোরা কারখানা, পেছনে এক পুরনো জলের ট্যাংকির নিচে গেট ঘর। সন্ধ্যার পরই মিলের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়, শুধু মূল গেটের একটা নীল আলো ছাড়া। সেই আলোয় আজ প্রথম বসেছে দেবব্রত, মাথায় টুপি, পাশে একটা টর্চ আর বিস্কুটের প্যাকেট। নীলকমল কাকু, যিনি চাকরিটা জোগাড়…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অমাবস্যার বাড়ি

    দেবায়ুধ পাল গাড়ি থামল কুঁয়োডাঙায় কুঁয়োডাঙা গ্রামের নামটা প্রথম শুনে মনে হয়েছিল কোথাও একটা গভীর কুয়ো আছে—শুধু গভীর না, এমন কিছু একটা যার দিকে তাকালেই গা ছমছম করে ওঠে। সুজয় যখন গাড়ি থামাল, তখন সন্ধে নামছে। পুরো গ্রাম যেন অন্ধকারের গায়ে চাদর মুড়িয়ে বসে আছে। অল্প আলোয় দেখে বোঝা গেল চারপাশে মাটির ঘর, তাল-খেজুর গাছ, আর একটাই পাকাবাড়ি—লাল ইটের একতলা, বন্ধ জানালায় কালো কাঁচ। ওটাই নাকি ‘ওদের’ বাড়ি। সুজয় কলকাতার একজন ছোটখাটো ইউটিউবার। নিজের চ্যানেল ‘ভূতুড়ে বাংলায়’ মাঝেমাঝেই চেনা-অচেনা ভৌতিক জায়গায় গিয়ে ভিডিও তোলে। আজ তার সঙ্গে এসেছে ক্যামেরাম্যান অলোক আর নতুন যুক্ত হওয়া সাউন্ড টেকনিশিয়ান রোহিনী। রোহিনী কিছুটা চুপচাপ…