এক শ্যামবাজারের রাস্তাগুলো দিনের আলোয় যতটা সরগরম থাকে, রাত নামলেই যেন ততটাই অচেনা হয়ে যায়। বিশেষ করে শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় থেকে একটু ভেতরের সরু গলিটা যেন আরও রহস্যে ভরা। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরনো থিয়েটার হল, যার নাম আজ আর কেউ মনে রাখে না। একসময় এখানে জমজমাট নাটকের আসর বসত, শহরের বড় বড় অভিনেতারা মঞ্চে আসতেন, তুমুল হাততালিতে ভরে উঠত আসনভর্তি দর্শক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব থেমে যায়—একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে থিয়েটারটি বন্ধ হয়ে পড়ে। তারপর কেটে গেছে দুই দশকেরও বেশি সময়, ধুলো জমে গেছে ভেতরে, মাকড়সার জালে জড়িয়ে গেছে সোনালি আসন, কাঠের মঞ্চ কেবল পচতে পচতে দাঁড়িয়ে…
-
-
অভ্রনীল দত্ত পর্ব ১ – যাত্রা শুরু সকালবেলা কোলাহলমুখর শিয়ালদহ স্টেশনের ভিড়ের ভেতর দিয়ে যখন তারা সবাই প্ল্যাটফর্মে পৌঁছল, তখনও কারও মাথায় ছায়ামাত্রও ছিল না কী অপেক্ষা করছে সামনে। কলকাতার এই পাঁচজন কলেজ–বন্ধু—অনিক, সুমিত, তন্ময়, দেবলীনা আর রুদ্র—দীর্ঘদিন পর আবার মিলে একসঙ্গে কোথাও বেরোচ্ছে। গন্তব্য সুন্দরবন। ভ্রমণের উদ্দেশ্য একটাই—দু–একদিন শহরের কোলাহল ভুলে প্রকৃতির নির্জন অরণ্যে কিছুটা সময় কাটানো, বাঘ দেখার ভাগ্য হলে আরও ভালো, আর সবার ওপরে একধরনের অদেখাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। রুদ্র, যে দলের মধ্যে সবচেয়ে উচ্ছল, আগেই পরিকল্পনা করেছিল গোটা ট্রিপ। সে বলেছিল—“এইবার তো পুজোর ভিড় নেই, একেবারে নিস্তব্ধ জঙ্গলে গিয়ে আসব। কী রোমাঞ্চ বলো তো!” বাকিরা তার কথায়…
-
এক অরিন্দমের পদধ্বনি যখন গ্রামের সরু মাটির পথগুলোতে প্রতিধ্বনিত হলো, তখন তার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা জন্ম নিল। গ্রামটি এমন একটি স্থানে অবস্থিত, যেখানে সময় যেন নিজেই ধীরে চলার চেষ্টা করছে। চারপাশের ঘরবাড়ি প্রায়শই কাঁকড়া মাটির তৈরি, তার ছাদগুলো বাঁশের খোঁপায় ঘেরা, এবং প্রতিটি ঘর যেন গল্পের অংশ বহন করছে। গ্রামের প্রবেশদ্বার থেকে দেখা যায় প্রাচীন মন্দিরের সোনালী কল্পচিত্র—যেখানে সূর্য ওঠার সময় মন্দিরের গম্বুজে আলোর খেলা যেন এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। অরিন্দম গ্রামে এসেছিল তার গবেষণার জন্য, কিন্তু এখানে এসে তার মনে হলো যেন ইতিহাস ও বাস্তবের মধ্যে এক অদৃশ্য সেতু তৈরি হয়েছে। সে শোনেছে, গ্রামবাসীর জীবন এই দেবীর মূর্তির চারপাশে…
-
অগ্নিভ বসু ১ মেঘে ঢাকা আকাশ, ছেঁড়া ছেঁড়া কুয়াশার চাদরে মোড়া বাঁকুড়ার পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে একটি জিপ। স্টিয়ারিংয়ের পাশে বসে ডঃ নীলাভ মুখার্জী ডায়েরির পাতায় অস্থির হাতে কিছু নোট নিচ্ছিলেন—যার বেশির ভাগই ছিল স্থানীয় পুরাতাত্ত্বিক মানচিত্রের হালনাগাদ তথ্য। তাঁর মুখে সিগারেট, চোখে ক্লান্তির ছাপ। পেছনে বসে ছিলেন গবেষক মালবিকা রায়, যিনি জানালার কাঁচ সরিয়ে বাইরের পাহাড়ঘেরা দিগন্তে তাকিয়ে ছিলেন, যেন কোন কিছু চেনার চেষ্টা করছেন—যা হয়তো কোনো ছবি বা কাহিনি পড়ে মনে গেঁথে গিয়েছিল। গাড়িচালক রঘু হাঁসদা হঠাৎ বলে উঠল, “আর একটু সামনে গেলেই গোবিন্দপাহাড়পুর, বাবু। আপনারা যেই দেউলের খোঁজ করছেন, সেটার ধ্বংসস্তূপ ওই গ্রামের ওপারেই। তবে লোকজন…