পল্লব সেনগুপ্ত বিকেলের আলো ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে আসছিল, যখন অনন্যা ঘোষ ছোট ট্রলারে করে নদী পার হয়ে পৌঁছাল সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। আশপাশে কেবলমাত্র কাঁকড়াভরা কাদা, উঁচু বাঁধ, এবং জলপথের ওপর একধরনের ঘন স্তব্ধতা—যেটা শহরের মানুষদের অচেনা। অনন্যা কয়েক মাসের জন্য এসেছে এক NGO-র প্রতিনিধি হিসেবে, উদ্দেশ্য—মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তাঁর হাতে একটা পুরনো নোটবুক, যেখানে কাজের পরিকল্পনা লিখে এসেছে, কিন্তু গ্রামের নিস্তব্ধতা আর হাওয়ার গন্ধ যেন ওই সব কাগজের যুক্তির চেয়েও বেশি বাস্তব। গ্রামের মানুষজন তাকে সম্মান দেখিয়েই স্বাগত জানাল, কিন্তু তাদের চোখে একটা নিরুত্তাপ দূরত্ব ছিল—যেমন কেউ জানে অতিথি বেশিদিন থাকবে না।…
-
-
এক দক্ষিণ কলকাতার একটি তুলনামূলক পুরনো কিন্তু চৌকস আবাসন, নাম ‘উজ্জ্বল উদয়ন’। নাম শুনলেই মনে হয় যেন আলোয় ভরপুর কোনো স্বপ্নের মতো বাসস্থান। বাস্তবে অবশ্য চারতলার ওপরে ওঠা মাত্রই আলো যেন হঠাৎ একটু ফিকে হয়ে আসে, ছাদের নিচে জমে থাকে একরকম নরম, নিস্তব্ধ অন্ধকার। সেখানেই চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট 4C-তে উঠল সদ্যবিবাহিত দম্পতি সায়ন ও মেঘলা দত্ত। বিয়ের পর মাত্র তিন মাস কেটেছে, সংসার এখনও নতুন, তাজা, রঙিন বাক্সে মোড়ানো স্বপ্নে ভরা। সায়নের চাকরি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়, অফিস মূলত হাইব্রিড—তাই বেশিরভাগ সময় সে বাড়ি থেকেই কাজ করে। মেঘলা একটি বেসরকারি স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষিকা, শান্ত, সংবেদনশীল স্বভাবের। আবাসনে উঠে আসার দিনটিতে সব কিছুই…
-
ঋতবান চ্যাটার্জী হারিয়ে যাওয়া সকাল পুরুলিয়ার ঘাঘরা গ্রাম যেন একটানা নিঃশব্দে বেঁচে থাকে। এই গ্রামের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে শীতল সুবর্ণরেখা, আর মাথার ওপর ছায়া ফেলে রেখেছে অজস্র শাল-সেগুন। এখানে দিনের আলো পড়ে নরম, আর রাতের অন্ধকার গাঢ়, জ্যোৎস্নাতেও কালো। কেবলই যেন কেউ দেখে, তবু ধরা পড়ে না। বিপ্লব দাস ছিলেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক। গ্রামের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করত, কিন্তু ভালোবাসার চোখে—যেন তিনি তাঁদের আশার বাতি। সকাল সাতটায় উঠোনে লাল চায়ের কাপ হাতে বসে থাকতেন, পোষা কুকুর ‘রাঙা’ পায়ের পাশে বসে। সেদিন সকালে রাঙা ছিল, কাপটাও ছিল, শুধু মানুষটা ছিল না। অরুন্ধতী, বিপ্লবের স্ত্রী, প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো বাজারে…