রৌনক রায় ১ রাত তখন দেড়টা। সল্টলেকের গলির মুখে জ্বলছে কেবল একটি পথবাতি। সেই হালকা আলোয় ঢাকা পড়ে আছে বিশাল এক ভবনের শেড—যেটিকে বাইরে থেকে সাধারণ কোনো গবেষণাগার মনে হলেও, তার ভেতরে সময় নিয়ে চলছিল এক অকল্পনীয় গবেষণা। ড. অনির্বাণ চৌধুরী বসে আছেন ডেস্কে, সামনে ছড়ানো রয়েছে ঘড়ির যন্ত্রাংশ, একটি প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা চর্মপুঁথি এবং তাঁর সর্বশেষ নির্মিত কোয়ান্টাম পেনডুলাম। সিগারেটের ধোঁয়া ধীরে ধীরে উঠে মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে, আর তাঁর চোখ জ্বলজ্বল করছে—দীর্ঘদিনের অভ্যাসে তিনি বুঝে গেছেন, আজ কিছু হতে চলেছে। হঠাৎই ঘড়ির কাঁটা, যেটি তিনি নিজেই ডিজাইন করেছিলেন সময়চক্র পরিমাপের জন্য, ধীরে ধীরে থেমে গিয়ে ঘুরে গেল উল্টো…
-
-
সৌম্যজ্যোতি ভট্টাচার্য ভোর চারটের দিকে কলকাতার আকাশে বৃষ্টির গন্ধ মিলিয়ে ছিল ধোঁয়ার মত আবছা আলো। কৌশিক মৈত্র জানালার ধারে বসে ছিল চুপ করে, ছয়তলার ফ্ল্যাটের নিচে তখনও শহর জেগে ওঠেনি। তার গলায় ঝুলে থাকা কাঁপতে থাকা একচিলতে নিঃশ্বাস, বিছানার ধারে পড়ে থাকা খোলা ঘুমের ওষুধের শিশি, ও পাশের টেবিলে ছেঁড়া কাগজে কুংথিত দুটো শব্দ— “মাফ করো”। গত রাতটা সে ঠিক কীভাবে পার করল, মনে পড়ে না। অথবা, মনে পড়াতে চায় না। এ জীবনের সব ছায়া, সব আগুন, সব ব্যর্থতা ঘিরে রেখেছিল তাকে এক অদ্ভুত অস্পষ্ট ধোঁয়াশায়, যেন কিছুই আর বাস্তব নয়—সবই বাষ্প। সেই বাষ্পেই ঘোর লাগা চোখে হঠাৎ পড়ে যায়…
-
সমীরণ সেনগুপ্ত এক রাত বারোটার কিছু পর। কলকাতার বুক জুড়ে যেন নিঃশব্দ এক বিষণ্নতা নেমে এসেছে। গলির পর গলি পেরিয়ে ডঃ অভিজিৎ ধর এসে দাঁড়ালেন জাফরান রোডের মোড়টায়—বামদিকে একটি পুরনো, ভাঙাচোরা বাড়ির পাশে লাগোয়া সংকীর্ণ দেওয়াল, যার গায়ে ছায়ার মতো কিছু একটার টলোমলো প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হচ্ছে। চারদিক ফাঁকা, তবে বাতাস ভারী। এক অদ্ভুত চুলকানির মতো অনুভব হচ্ছে তার মস্তিষ্কের ভেতর—এমন যেন কোনও অজানা কম্পন, অতি নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে মগজকে ঘিরে ধরেছে। এই জায়গাটায় বহু বছর আগে এসেছিলেন তিনি, শেষবার স্ত্রী রীণার হাত ধরে, তখনও জানতেন না—এই নির্জন গলি একদিন তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। গলির শেষপ্রান্তে একটা হলদে আলো টিমটিম করছিল,…