অনিৰ্বাণ দাস ১ গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ভিলাটির জন্ম একেবারে ইতিহাসের গর্ভে লুকিয়ে আছে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে, যখন চন্দননগর ছিল ফরাসি উপনিবেশের এক প্রধান কেন্দ্র, তখন ফরাসি কনসাল জ্যঁ-ব্যাপটিস্ট দ্য ল্যাঁক তাঁর পরিবারের জন্য এই ভিলাটি নির্মাণ করেছিলেন। গঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চল তখন ছিল বাণিজ্যের জন্য অমূল্য সম্পদ—রেশম, নীল, আফিম, মসলিনের ব্যবসায় মত্ত হয়ে উঠেছিল ফরাসি বণিকেরা। ইউরোপীয় জাহাজ এসে ভিড়ত বন্দরঘাটে, আর গঙ্গার জলে প্রতিদিন প্রতিফলিত হতো সাদা পালের ছায়া। ভিলাটি ছিল তাঁদের ঐশ্বর্যের প্রতীক—সাদা চুনে মোড়া দেওয়াল, নীল রঙে রাঙানো কাঠের জানালা, আর রোমান খিলানের মতো খোলা বারান্দা। চারদিকে ছায়াঘেরা বাগান, যেখানে ইউরোপ থেকে আনা গাছপালা যেমন ছিল,…
-
-
সৌমিলি দত্ত চন্দননগরের আলো উৎসবের রাতটি এক অন্যরকম জাদু উপহার দিচ্ছিল। নদীর ধারে ছড়িয়ে থাকা রঙিন আলো যেন জলরাশিকে আলোকিত স্বপ্নের মতো পরিণত করেছে। প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি রাস্তা, এমনকি ছোট্ট সরু গলিগুলোও আলোতে ভেসে ওঠে—লাল, নীল, হলুদ আর সবুজ রঙের ঝলমলে বাতিগুলো এক ধরনের মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ফরাসি স্থাপত্যে ভরা পুরনো ভবনগুলো তাদের ঐতিহাসিক সৌন্দর্য ধরে রেখেছিল, কিন্তু রাতের আলো তাদের আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। সেতার আর ঢোলের সুর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল, যেন প্রতিটি সুর বাতাসে মিলেমিশে নাচছে। লোকেরা উৎসবমুখর, হাসি-আনন্দে ভরা, আর প্রতিটি মানুষের মুখে এক অদ্ভুত উত্তেজনা আর আনন্দের ছাপ। শহরটি যেন এক জীবন্ত চিত্রকর্ম হয়ে উঠেছে,…
-
তিথি বসু পর্ব ১ – আগমন ভাগীরথীর জলরাশি তখন সোনালি রোদে ঝিকমিক করছে। দূরে গঙ্গার বুকে ভেসে ওঠা এক বিশাল জাহাজ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে চন্দননগরের ঘাটের দিকে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি, ফরাসিদের বাণিজ্য উপনিবেশ তখন নবীন কিন্তু প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে—তাদের কাছে বিদেশী জাহাজ মানেই নতুন গল্প, নতুন পণ্যের আগমন, আবার ভয়ও—যদি নতুন করে দখলদারি শুরু হয়! আঁতোয়ান, জাহাজের এক তরুণ ফরাসি সৈনিক, জাহাজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো বাংলার মাটিকে দেখছিল। তার চোখে তখন অদ্ভুত এক মিশ্র অনুভূতি—অপরিচিত ভূমির বিস্ময়, অচেনা মানুষের ভিড়, আর ভেতরে ভেতরে জন্ম নিতে থাকা এক…