ঐশী মুখার্জি ট্রেনটা আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ছিল পুরুলিয়ার ছোট্ট স্টেশনে। জানালার ফাঁক দিয়ে লালচে ধুলো হাওয়ায় উড়ছিল, যেন মাটির গন্ধে মাখানো কোনো অদৃশ্য ধোঁয়া। রিনি ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে বসেছিল জানালার ধারে। কলকাতার চাকরিজীবনের ব্যস্ত, ধাতব আওয়াজে ভরা দিনগুলো থেকে বেরিয়ে সে এসেছিল, ঠিক এক মাসের জন্য। নিজের ইচ্ছেতেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে, বন্ধুদের কাছে এখনো সে সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক, অনেকটা পাগলামির মতো শোনায়। কিন্তু রিনির মনে হচ্ছিল, এই লালমাটি-ঢাকা পথই তাকে নতুন কিছু শিখিয়ে দেবে। স্টেশনটা ছোট, নিস্তব্ধ, বাইরে নামতেই সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি আর হকারের ডাক একসাথে কানে বাজলো। রোদটা ঝলমল করছিল, তবুও হাওয়ায় একটা শুষ্ক ঠান্ডা মিশে ছিল। রিনি বুকের ভেতর হঠাৎ…
- 
				
 - 
				
সায়ন চক্রবর্তী রবিবারের বিকেলটা এই গ্রামে যেন আলাদা আলোয় ঝলমল করে, সূর্যটা নদীর পাড়ে গড়িয়ে যেতে যেতে এমন এক নরম রঙ ছড়িয়ে দেয় যে হাঁসফাঁস করা সপ্তাহের ধুলোও মুহূর্তে থিতিয়ে আসে, আর সেই সময়েই শুরু হয় স্কুলবাড়ির বারান্দায় গানের আসর; হেডস্যার নিজের হাতে টাঙানো লণ্ঠনের নিচে মাদুর পাতা, ধুলো ধূসর কলাপাতায় রাখা গরম চা, কাঁচের গেলাসে তুলে দেওয়া মুড়ি-চানা, সরল অথচ শৌখিন এই আড্ডাটাই সৌম্যের সপ্তাহজুড়ে বেঁচে থাকার প্রাণবায়ু, যেহেতু সে জানে সোমবার থেকে আবার অঙ্কের ক-খ, ইংরেজির সরল বাক্য, ছাত্রদের টিফিনের গন্ধ আর খাতা পরীক্ষা—এই সব মিলিয়ে চার দেওয়ালের নীরসতা তাকে চেপে ধরবে; অথচ আজকের রবিবারটা অন্য রকম, কারণ…
 - 
				
অন্বেষা চক্রবর্তী ১ শীতের ভোরের কুয়াশা তখনও পুরোপুরি কাটেনি, তবুও গ্রামমাঠে মানুষের ঢল নেমেছে। চারদিক যেন উৎসবের রঙে ভরে আছে—কেউ খেজুর গাছ থেকে রস নামাচ্ছে, কেউ মাটির হাড়িতে গরম পিঠে সাজাচ্ছে, আর দূরে বাঁশের মাচায় বসে বাউলরা প্রস্তুত হচ্ছে দিনের প্রথম গানের জন্য। রুদ্র পাল, পাতলা গড়নের, গভীর কালো চোখের এক তরুণ, সেই মাচার এক কোণে বসে ধীর হাতে একতারার তার টানটান করছে। লাল মাটির ধুলোয় ভিজে থাকা তার পায়ে কোনো জুতো নেই, কিন্তু চোখে এমন এক দীপ্তি, যেন ভিড়ের প্রতিটি মানুষকে সে গানের মধ্য দিয়ে স্পর্শ করবে। রুদ্রর জন্ম এই গ্রামেই—শৈশবে বাবার কণ্ঠে বাউল গান শুনে বড় হয়েছে, আর…