দীপান্বিতা মাহাতো ১ পুরুলিয়ার বাঁশডাঙা গ্রামে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়তেই পাখির ডাকে জেগে ওঠে পাহাড়-জঙ্গলের বুক চেরা গ্রামটা। মাটির বাড়ির চালের নিচে কুয়াশার কুয়াশা, আর তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলে যায় একটা কিশোরী—ঝুমরি হাঁসদা। তার পরনে হালকা লাল পাড়ের ধবধবে সাদা শাড়ি, হাতে জলভরা কলসি, কিন্তু ঠোঁটে একটানা চলতে থাকা সুর—”গেলি চলে পাহাড়ি পথে, কাহার ডাকে রে মন।” সে একা, কিন্তু একলা নয়। ঝুমরির কণ্ঠে যেন গমগম করে ওঠে পুরো বাঁশডাঙার ঝরা পাতা, মাঠঘাট, আর সেই পাহাড়ের পেছনের রক্তিম সূর্য। ছোট থেকেই ঝুমরির গলার জোর ছিল গ্রামের অন্যসব মেয়েদের চেয়ে আলাদা। মা পূর্ণিমা হাঁসদা ছোটবেলায় নিজের ঠাকুমার কাছ থেকে যে…
-
-
প্রজ্ঞা সেনগুপ্ত এক সূর্য তখন পাহাড়ের আড়ালে গিয়ে অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতিতে, আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে কমলা রঙের ছায়া। গ্রামের শেষপ্রান্তের কাঁচা রাস্তাগুলো ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসছে। গরু-বাছুর ফিরেছে খুঁটির কাছে, ধোঁয়া উঠেছে রান্নার চুলায়। এমন সময় একটা ছায়ামূর্তি—কোনওমতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে, কাপড় ছেঁড়া, হাঁটা কাঁপা কাঁপা। তার মুখটা ঢাকা, কিন্তু চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ স্পষ্ট। কেউ জানে না কোথা থেকে এল, বা কী ঘটেছে। অনেকে জানতেও চায় না। গ্রামের মধ্যে কানাঘুষো শুরু হল, “ওই তো সরকারবাড়ির পেছনের পথ দিয়ে আসছে! ওই তো রাধার কনিকা… বাঁচাও বাবা, আবার নাম জড়াবে গ্রামের।” কেউ জল এগিয়ে দিল না, কেউ তাকে…
-
Aparna Basu অধ্যায় ১: স্বপ্নের বীজ শীতলডাঙ্গা গ্রামের সকালগুলো খুব বেশি বদলায় না, বছরের পর বছর ধরে একই ছন্দে বয়ে যায় এখানকার সময়। মাটির রাস্তা বেয়ে গরুর গাড়ির চাকা আঁকিবুঁকি কেটে চলে, ঝুপড়ি ঘরের চালার ফাঁক দিয়ে প্রথম রোদের আলো মাটির উঠোনে ছড়িয়ে পড়ে, আর বনে-পাহাড়ে শাল-পলাশের গন্ধ মিশে যায় হাওয়ার সাথে। সেই হাওয়াতে ভেসে আসে পাখিদের ডাক, যেটা প্রতিদিন ঘুম ভাঙায় গ্রামের মানুষদের। শীতলডাঙ্গার শেষপ্রান্তে, বাঁশঝাড়ের পাশে এক মাটির ঘর, খড়ের ছাউনি দেওয়া। সেই ঘরে থাকে মুক্তা, বারো বছরের কিশোরী মেয়ে, যার চোখে আছে বিশাল স্বপ্নের জগৎ, যদিও সেই স্বপ্ন এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মায়ের ডাকেই তার সকাল শুরু…
-
মৌসুমী ধর চক্রবর্তী ১ শিউলির বয়স এখন পঁয়তাল্লিশ। একটা সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ান তিনি। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার প্রত্যন্ত এক গ্রামে ওঁর বসবাস—চারপাশে ইটভাটার ধোঁয়া, জলাভূমির নিঃশব্দতা, আর শালবনের ঘন ছায়ায় ঘেরা জনপদ। এখানকার রাস্তাগুলো বর্ষায় কাদায় ভরে যায়, গ্রীষ্মে ধুলো উড়তে থাকে, আর শীতে শীতল হাওয়া হাড়ে হাড়ে কাঁপিয়ে দেয়। অথচ এই সব কিছুর মাঝেও শিউলি যেন এক টলমলে আলো, যিনি কখনও নিভে যান না। তাঁর সকাল শুরু হয় খুব ভোরে। মাটি ছোঁয়া ধোঁয়া আর পাখির ডাকের মধ্যেই শুরু হয় রান্না-বান্না, বাড়ির কাজ। তারপর শাড়ি পরে ঝোলা ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটা শুরু করেন প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের স্কুলের দিকে। অনেক…