এক গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে, বাঁশঝাড়ের আড়ালে এক বিস্মৃত কূপ বহুদিন ধরে অচল পড়ে আছে। সময়ের ভারে তার ইটগুলো ভেঙেচুরে এক অদ্ভুত শৈবাল-ঢাকা রূপ নিয়েছে, যেন প্রকৃতি নিজেই কূপটিকে ঢেকে রাখতে চায়। চারপাশে গজিয়ে ওঠা কাঁটাঝোপ, শুকনো ডালপালা আর বনলতা মিলেমিশে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে দিনের আলোও প্রবেশ করতে চায় না। গ্রামের শিশুরা দূর থেকে কূপটিকে দেখে আঁতকে ওঠে, আর বয়স্করা ভয়ে নামও মুখে আনে না। শোনা যায়, একসময় এ কূপই ছিল গ্রামের প্রধান পানির উৎস। মানুষজন প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা জল তুলতে আসত, কূপপাড়ে হাসি-ঠাট্টার আসর বসত। কিন্তু প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে এক ভয়াবহ ঘটনার পর হঠাৎ করেই কূপটি অশুভের প্রতীক…
- 
				
 - 
				
অমিত পাল রাতের অন্ধকার গ্রামটিকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করেছিল। চারপাশে নীরবতা, যেন পৃথিবীর সব শব্দ মুছে গেছে। পাতাগুলোর উপর হালকা শিশির জমে আছে, আর বাতাস নীরবভাবে গাছের পাতা দুলাচ্ছে। ছোট্ট গ্রামটির মাটির রাস্তাগুলো এখনো দিনের আলো থেকে দূর্যোগের মতো ফাঁকা। ঘরগুলো নিস্তেজ, জানালার পাশে কোনো আলো জ্বলছে না। তবে গ্রামের এক কোণে, নদীর ধারে, রূপসা একা বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে অদ্ভুত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে এক অচেনা ভয়ও জমেছে। সে জানে, এই রাত অন্য রকম। প্রতিবার এই সময় যখন আকাশে চাঁদের আলো নরম হয়ে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সে অনুভব করে গ্রামের সাধারণ নীরবতার মধ্যে লুকানো একটি অদ্ভুত শক্তি। সে…
 - 
				
সুমনা মাইতি অধ্যায় ১ – গ্রামের চৌহদ্দি পেরিয়ে কিছুদূর এগোলেই যে জঙ্গলঘেরা পথটা মাঠের দিকে চলে গেছে, তার মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে এক বিরাট পুরোনো বটগাছ। চারদিকে ঝুলে থাকা অজস্র দড়ির মতো শেকড় আর অন্ধকারে ঢেকে রাখা পাতার ছাউনি যেন দূর থেকে দেখলে আকাশের সঙ্গে মিশে থাকা কোনো দানবের রূপ মনে হয়। দিনের বেলা মানুষ সেখানে গরু চরাতে যায়, শুকনো কাঠ কুড়িয়ে আনে, কিংবা ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেয়। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা নেমে আসে, পাখিরা ডাকতে ডাকতে থেমে যায়, আর বটগাছের শেকড়ের ফাঁক দিয়ে ওঠে অচেনা ফিসফিস শব্দ। গ্রামের ছেলেমেয়েরা একে অপরকে ভয় দেখাতে প্রায়ই বলে—“ওই গাছটার নিচে ভূত…
 - 
				
প্রেরণা দত্ত এক সকালবেলা স্কুলের ঘণ্টা বাজতেই মফস্বল শহরের মেয়েদের স্কুলের ক্লাসরুম ভরে ওঠে কোলাহলে। দেয়ালের রং অনেক জায়গায় খসে পড়েছে, বেঞ্চিগুলো পুরনো আর খটখটে, জানালার কাচ ভাঙা বলে আলো ঢোকে টুকরো টুকরো হয়ে। এই ক্লাসেই দাঁড়িয়ে থাকেন ইতিহাসের শিক্ষিকা সুবর্ণা দত্ত। বয়স ত্রিশের কোঠা পেরোলেও চোখে যেন এক আশ্চর্য দীপ্তি লেগে আছে। তিনি যখন বোর্ডে ইতিহাসের কথা লিখে বোঝাচ্ছিলেন, তখন তার চোখ হঠাৎ আটকে গেল ছাত্রীদের মুখে। অঞ্জলি, মীরা, গৌরী, ফারজানা—তাদের চোখে অদম্য কৌতূহল, কিন্তু সেই কৌতূহলের পাশে যেন অসহায়ত্বও ভেসে উঠছিল। ক্লাসের শেষে তিনি খেয়াল করলেন, বই পড়তে গিয়ে মেয়েরা বারবার একে অপরের কাছে বই চেয়ে নিচ্ছে। অনেকেরই…