সৃজন ঘোষ পর্ব ১ — শিবু কাকার দোকান ওরা দুজন দুটো আলাদা অফিসে কাজ করে। আলাদা ভবন, আলাদা ফ্লোর, আলাদা ম্যানেজার, আলাদা টাইমশিট—কিন্তু বিকেল তিনটা পঁচিশে দুজন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ে একটাই জায়গায়—শিবু কাকার চায়ের দোকানে। হ্যারিসন রোড আর ব্যাঙ্কশাল স্ট্রিটের সংযোগস্থলে ছোট্ট এক টিনের ছাউনি, তিনটে লাল চেয়ার, একটা কেরোসিন স্টোভ, আর একটা চুন-ছোপ খাওয়া কাঠের বেঞ্চ। এখানেই তুলি রোজ বিকেলে আসে মাথার ব্যথা সারাতে, আর রুদ্র আসে… আগে হয়তো কেবল চায়ের জন্যই আসত, এখন সে নিজেও জানে না ঠিক কেন আসে। তুলির অফিস ‘ইমার্জ ইভেন্টস’-এর তিনতলায়। একঘেয়ে মিটিং, থিম-পিচ, ক্লায়েন্ট ব্রিফ আর ইনস্টাগ্রামের ক্যাপশন নিয়ে সকাল থেকে বেলা পার…
-
-
বৈশাখ দত্ত বারাভটেসগাডেনের ডাক অনিরুদ্ধ দাশগুপ্তের পায়ের নিচে ক্রঞ্চ করল ঝরাপাতায় ঢাকা পাথুরে রাস্তা। মে মাসের ঠান্ডা বাতাসটা কানের পাশ দিয়ে শিস বাজিয়ে চলে গেল। সে একবার পেছনে তাকাল—রেলস্টেশন থেকে বাসে করে উঠে এসেছে এই পাহাড়ি পথে, এখন দাঁড়িয়ে আছে বারাভটেসগাডেনের ঠিক গা ঘেঁষে। দূরে দেখা যাচ্ছে সেই বিখ্যাত পাহাড়, যার চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে হিটলারের berüchtigte Kehlsteinhaus—ঈগল নেস্ট। “Sir, are you going up alone?” পাশের একজন ট্যুরিস্ট গাইড জিজ্ঞাসা করল। “Just exploring the base first,” অনিরুদ্ধ ইংরেজিতে হেসে বলল। তার ব্যাগের ভেতরে একটা কালো মলাটের ফাইল, যার উপর লেখা: “Third Reich and the Eastern Front: A Subaltern Perspective”. এই গবেষণাপত্রটাই…
-
সুদীপ্ত চৌধুরী পর্ব ১ আমার জন্ম হয়েছিল এক গরম দুপুরে, হাওড়ার একটি ছোট গ্যারেজের ভেতর। চারপাশে ধুলো, কাঠের গন্ধ, আর যন্ত্রপাতির আওয়াজ। তখন আমি কিছুই বুঝতাম না—শুধু টের পাচ্ছিলাম, কিছু একটা নতুন হচ্ছে। লোহা, রাবার আর রঙের গন্ধে ভরা সেই অদ্ভুত পরিবেশে কেউ আমাকে তৈরি করছিল, নিঃশব্দে, নিখুঁতভাবে। আমার কঙ্কাল জুড়ে নিচ্ছিল একে একে চাকা, হ্যান্ডেল, প্যাডেল। আমার গায়ে পড়ছিল চকচকে লাল রঙ, ঠিক যেন একটা নতুন জামা। সেই রঙে আমার আত্মা খুঁজে পেল নিজেকে। আমার গায়ে প্রথম স্পর্শ দিয়েছিল একটি খুদে হাত—সে ছিল শিবু, বছর আটেকের এক ছেলেমানুষ। ওর বাবা সেই গ্যারেজে কাজ করত, আর আমাকে তৈরি করেছিল তাঁরই…