• Bangla - ভ্রমণ

    পাহাড়পুরের ধ্বংসাবশেষ: ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব ঘেরা ভ্রমণ–ডায়েরি

    অরুণোদয় দত্ত ১ ঢাকার ব্যস্ত রেলস্টেশনে তখন সকাল গড়িয়ে আসছে। কোলাহলের ভেতরেও চারজন মানুষ যেন নিজেদের ছোট্ট এক পৃথিবীতে ডুবে আছে। অরিন্দম—ইতিহাসের অধ্যাপক—চোখে চশমা, হাতে একটি পুরনো নোটবুক, যেখানে সে বছরের পর বছর ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর সম্পর্কে নোট লিখে রেখেছে। তার মধ্যে এক ধরনের দৃঢ়তা, যা ছাত্রদের সামনে লেকচার দেওয়ার সময়ের মতোই নির্ভীক। পাশে বসে আছে অনন্যা, পিঠে ঝোলানো কালো ব্যাগে রাখা ক্যামেরার লেন্স উঁকি দিচ্ছে। সে বারবার আশেপাশের দৃশ্যগুলো দেখছে, যেন প্রতিটি মুহূর্তকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চায়। সায়ন একটু গম্ভীর চেহারায় টিকিট পরীক্ষা করে, আরেকবার ব্যাগের ভেতরের গবেষণার নথি গুছিয়ে রাখে। তার কাছে এই ভ্রমণ নিছক আনন্দ নয়, বরং…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চৌধুরীবাড়ির শেষ অতিথি

    তিথি বসু পর্ব ১: সেই ভগ্নপ্রায় দরজার শব্দ নদীয়ার কুয়াশা ঢাকা বিকেলে ট্রেন থেকে নামতেই শুভমর মনে হলো সময়টা যেন হঠাৎ করে থমকে গেছে। বাইরের হাওয়া ঠান্ডা, কিন্তু বাতাসের মধ্যে কিছু একটা গুমোট। সে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রিকশাওয়ালার দিকে এগোল। “চৌধুরীবাড়ি যাবেন?” জিজ্ঞেস করতেই রিকশাওয়ালার মুখটা কেমন থমথমে হয়ে গেল। “চৌধুরীবাড়ি? ওই যে শ্মশানের পাশে যেটা?” শুভম মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, ওটাই। আমি গবেষণার জন্য এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি আছে।” রিকশাওয়ালা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “আমি ওইদিক যাই না বাবু। ওখানে এখন কেউ থাকেও না।” শেষমেশ অনেক বোঝানোর পরে একজন রাজি হলো। অন্ধকার নেমে আসছিল, আর চৌধুরীবাড়ির পথটা খড়ি গাছ…

  • Bangla - প্রেমের গল্প - রহস্য গল্প

    কুশলনগরের কাঠের ব্রিজ

    সমাপ্তি বর্মন সকালটা ছিল মেঘলা, অথচ বৃষ্টির কোনো আভাস নেই। রুক্মিণীর মাথার ওপর দিয়ে পাখির ছায়া উড়ে গেল—একটা নীল কুড়ুলি, সেইরকম রঙিন পালকের পাখি যেটা কেবল কুশলনগরের আকাশেই দেখা যেত তাদের ছোটবেলায়। বিশ বছর পর এই জায়গাটায় ফিরে আসার সাহস সে নিজের কাছেই একটা বিস্ময় মনে হচ্ছিল। পাশে বসে থাকা ভাই অর্ণব হঠাৎ বলে উঠল, “এই রাস্তার বাঁকে একটা নারকেল গাছ ছিল, মনে আছে?” রুক্মিণী হেসে মাথা নাড়ল। “আর মনে নেই? ওই গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আমি তোকে গুমরার জুস খাওয়াই বলেছিলাম, আর তো তোর গায়ে গড়িয়ে পড়েছিল!” দুজনেই হেসে উঠল। সেই হাসির মধ্যে ছিল পুরনো দিনের গন্ধ, ছিল শৈশবের ডাকে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অন্তহীন অন্ধকারে

    অনির্বাণ ঘোষ অদ্ভুত ধ্বনি গাঁয়ের শেষ সীমানায়, ঘন জঙ্গল আর বুনো পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল বহুতলা ভুতের বাড়ি, যেখানে কোনোদিন মানুষের পা পড়েনি। গাঁয়ের বয়স্করা বলতেন, “এ বাড়ি শাপিত, এখানে বাস করা লোকের ভাগ্য বিপর্যস্ত।” কিন্তু আধুনিক যুবকরা এসব অন্ধবিশ্বাসকে গা ছেড়ে দিয়েছিল, আর তার মধ্যে এক জন ছিল আরিফ। এক রহস্যপ্রেমী সাংবাদিক, যিনি শহর থেকে এই গ্রামে এসেছিলেন কিছু অদ্ভুত ঘটনা অনুসন্ধান করতে। আরিফের প্রথম দিনের সন্ধ্যায় যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্ত যাচ্ছিল, তখন গাঁয়ের বাজারের এক কনফেকশনারি দোকানে বসে শুপ্রা নামক এক স্থানীয় মেয়ের সাথে পরিচয় হলো। শুপ্রা কথায় কথায় বলল, “আপনি কি বহুতলা ভুতের বাড়ি সম্পর্কে জানেন?”…

  • Bangla - ভ্রমণ

    বর্ষায় বাংলাদেশের ভ্রমণ

    অনিরুদ্ধ বসাক পর্ব ১: পদ্মার পাড়ে, মেঘে ভেজা সকাল পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানেই একটা নিঃশব্দ যাদুর মধ্যে ঢুকে পড়া। আমি তখন রাজশাহীতে, বর্ষার শুরুতেই এসে পড়েছি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামছিল, যেন মাটিকে এক নতুন জেগে ওঠার ডাক দিচ্ছে। বাংলাদেশে বর্ষার সৌন্দর্য আলাদা। এখানে মেঘ শুধু আকাশে থাকে না, জমে থাকে মানুষের চোখে, গন্ধ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে কাদামাখা পথঘাটে, ধানখেতের ফাঁকে, কাঁঠালের গন্ধে। সকালটা শুরু হয়েছিল এক কাপ ধোঁয়া ওঠা লেবু-চা দিয়ে, ছোট্ট এক চায়ের দোকানে। দোকানদার বললেন, “ভাই, বর্ষা কিন্তু আমাদের দেশের একেকটা প্রেমের গল্পের মত। শুরুতে আনন্দ, মাঝখানে অভিমান, শেষে শান্তি।” আমি চায়ের কাপ হাতে বসে ভাবছিলাম, ঠিকই তো—এই…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    খুনী, দেবতা ও দর্পণ

    অমর্ত্য ভট্টাচার্য রথের দিন, রক্তের রেখা পুরীর বাতাসে আজও শঙ্খ আর কাঁসরের ধ্বনি মিশে আছে, যেমন মিশে থাকে বালি আর ঘাম। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে শহরের প্রতিটি অলিগলি ঠাসা মানুষে—ভক্ত, পর্যটক, পুলিশ, পুরোহিত, বিদেশি সাংবাদিক, দালাল, দলাল—সবাই যেন এক অদৃশ্য শক্তির টানে গড়িয়ে যাচ্ছে গ্র্যান্ড রোডের দিকে। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার তিনটি বিশাল রথ অলরেডি দাঁড়িয়ে আছে, কাঠের চাকায় লাল-হলুদ-সবুজের প্যাঁচানো চাদরে ঢাকা। হাজারো লোক টানবে সেই রথ, আর ঠিক সেই উৎসবের মধ্যেই—মন্দির চত্বরের দক্ষিণ কোণায়, একটি কাঠের কুঠুরির সামনে, আবিষ্কৃত হল এক নিথর দেহ। মৃত, চোখ দুটো ফ্যাঁকাসে খোলা, এক হাত তুলে থাকা যেন কাউকে শেষ মুহূর্তে কিছু দেখাতে…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গুপ্তধনের ছায়ায়

    অর্ণব গুহ পর্ব ১: পুরনো পাতার গন্ধে বৃষ্টির পর বিকেলের আলোটা যেন গড়বেতার আকাশে রূপকথার পর্দা টেনে দিয়েছে। মাটি থেকে ধোঁয়ার মতো জলীয়বাষ্প উঠছে, যেন মাটিও নিঃশ্বাস নিচ্ছে। রিমি জানালার পাশে বসে ছুঁয়ে দেখছিল তার ঠাকুরদার পুরনো নোটবুকটা। হলুদ হয়ে যাওয়া পাতাগুলোর গায়ে ঘামের মতো ছাপ, পুরনো কালি ঝাপসা, কিন্তু কিছু লেখা এখনও পরিষ্কার— “যদি খুঁজে পাও সেই লাল পাথর, তার নিচে শুয়ে আছে কুড়ি কুড়ি স্বর্ণমুদ্রা—বজ্রসেনের রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার। কিন্তু তার আগে পেরোতে হবে বাঘের গুহা, মৃত জলের কুয়া, আর রক্তলাল মহুল গাছ।” রিমি একগাল হেসে উঠে চিৎকার করে ডাকল, “আকাশ! ঈশান! তুহিন! তোরা একবার দেখ তো!” আকাশ, যে…