আকাশ ডেকা অধ্যায় ১: দেউলৰ সঁপোৰ গন্ধ অৰুণৰ যাত্ৰা আৰম্ভ হৈছিল এটা অতি সাধাৰণ ভ্ৰমণৰ ৰূপত, কিন্তু গাঁওখনৰ পথত ভৰালীয়া গছৰ শাখা-প্ৰশাখাৰ মাজেৰে যাবলৈ যাবলৈ তেওঁৰ মনত অনাহুত অনুভূতি এটা জাগি উঠিছিল। এয়ে সেই ধৰণৰ গাঁও, য’ত সময় যেন থমকি ৰৈছে—নদীৰ তীৰত পুৰণি মাটিৰ ঘৰ, কুঁৱলিৰ মাজত গাভৰুজনীৰ হাঁহি, আৰু গছৰ শিৰত কাকৰ কণ্ঠেৰে গাঁওখনক উদং কৰি তোলা। গাঁওখনৰ প্ৰৱেশদ্বাৰত থিয় আছিল এখন দেউল, যি বাহিৰে দেখিবলৈ একেবাৰে অনুজ্জ্বল, জাৰজীৰ্ণ, আৰু যেন দীৰ্ঘদিনৰ নীৰৱতাৰ সাক্ষী। দেউলৰ মাটিত শুকান পাতৰ গন্ধেৰে মিশ্ৰিত আছিল সঁপোৰ সোঁদ, যি অৰুণৰ মনক একেলগে কৌতূহলী আৰু ভাবুক কৰি তুলিছিল। ইতিহাসৰ ছাত্ৰ হিচাপে তেওঁ জানিছিল যে গাঁওবোৰত…
- 
				
 - 
				
অরিত্র সেনগুপ্ত প্রথম পর্ব: ভাঙা মন্দিরের ছায়া কলকাতার গরম দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো গ্রন্থাগারে বসে ঋদ্ধি মুখোপাধ্যায় ধুলোমাখা এক দলিল উল্টেপাল্টে দেখছিল। দলিলটা এসেছে এক ব্রিটিশ কালেক্টরের আর্কাইভ থেকে—মলিন, ফ্যাকাশে কাগজে অদ্ভুত সব আঁকিবুঁকি। প্রথমে ওগুলো অর্থহীন দাগ মনে হলেও, চোখ অভ্যস্ত হতে না হতেই ঋদ্ধি দেখল ম্লান লাল কালি দিয়ে আঁকা একটা মানচিত্র। নদী, গাছপালা, আর মাঝখানে লেখা কয়েকটি সংস্কৃত শব্দ—“যত সূর্যের ছায়া, তত রাজাধন।” ঋদ্ধির বুকের ভেতর ঝড় উঠল। এ শুধু কোনো দলিল নয়—এ যেন ইতিহাসের অমূল্য দরজা খুলে দেওয়ার চাবি। কর্ণসুবর্ণ—গৌড়ের সেই প্রাচীন রাজধানী যেখানে শশাঙ্কদেব একসময় রাজত্ব করেছিলেন, সেখানকার ধনের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে মানচিত্রে। ঠিক তখনই গ্রন্থাগারের…
 - 
				
নীলাঞ্জনা সেন সকালটা যেন এক অচেনা হাওয়ার মতো এসে ঢুকে পড়েছিল ঘরে, জানালার ফাঁক দিয়ে রোদ ঢুকছিল ধীরে ধীরে, সেই আলো এতটা নরম যে মনে হচ্ছিল একে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলেই মিলিয়ে যাবে, বোনটা তখনো আধো ঘুমের ভেতর চায়ের কাপ হাতে বসে ছিল, তার চোখের তলায় হালকা লাল রেখা, হয়তো রাত জেগে ছিল অনেকক্ষণ, অথবা হয়তো নিঃশব্দে কারও সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথন করেছে ফোনে, আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি, কারণ ভোরের নীরবতা ভাঙতে ইচ্ছে করছিল না, শুধু দেখছিলাম সে নিঃশব্দে স্ট্যাটাস আপডেট করছে—“বিষ্ণুপুর যাচ্ছি, সকালটা তোর কপালে”—আমার অদ্ভুত লাগছিল এই লাইনগুলো, কাকে পাঠালো, কেন পাঠালো, তার ভেতরে কী চলছে আমি জানি না,…
 - 
				
অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় পুরুলিয়ার লাল মাটির রাস্তা যেন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় ভিজে ছিল। ঋত্বিক সেনগুপ্তের বাস থেকে নামতেই ধুলো মেখে গেল জুতো। কলকাতা থেকে এখানে পৌঁছতে প্রায় নয় ঘণ্টা লেগেছে—স্টেশন থেকে বাস, বাস থেকে আবার চোট্টোখাটো জিপ। চারপাশে শুধু শাল, পিয়াল, মহুয়ার গন্ধ, দূরে টিলা আর ঝকঝকে নীল আকাশ। তার ক্যামেরার ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়েই একবার চারদিক দেখে নিল সে। মনে হচ্ছিল, এ জায়গাটার বুকের ভেতরেই লুকিয়ে আছে কোনও গল্প, যে গল্প ফোটে না শহরের আলোয়, কেবল গ্রামবাংলার অচেনা অন্ধকারেই তার রূপ খুঁজে পাওয়া যায়। ঋত্বিকের সঙ্গে এসেছিল তৃষা—বন্ধু, সহযাত্রী আর কৌতূহলী সঙ্গী। ওর চোখে এ ভ্রমণটা শুধু ফটোগ্রাফির জন্য নয়,…
 - 
				
দীপাংশু বোৰঠাকুৰ পৰ্ব ১: বৰষুণৰ ৰাতি আৰু অদ্ভুত কল শহৰখনৰ ওপৰত সেই ৰাতি আকাশখনৰ মেঘ গাঢ় হৈ নামি আহিছিল। পূৰ্ণ বতাহেৰে পৰা বৰষুণৰ শব্দে মানুহৰ মনত এক ধৰণৰ বিৰক্তি আৰু ভয় দুয়ো মিশ্ৰিত অনুভূতি জাগ্ৰত কৰিছিল। গুৱাহাটী শহৰৰ ভাৰেলি পাথাৰৰ এডাল বাটৰ কাষত থকা এটা পুৰণি দুমজিলা ঘৰখনত অৰুণ জোনাকত একো নাথাকিলেও আলোছায়াৰ খেলা চলিছিল। ঘৰখনত বাস কৰিছিল মণিশংকৰ বৰুৱা। গুৱাহাটীৰ এটা কলেজত ইতিহাসৰ অধ্যাপক। বয়সত পঞ্চাশ পাৰ হ’লেও তেওঁৰ কণ্ঠস্বৰ, দৃঢ় চাহনি আৰু কথা কোৱাৰ ভঙ্গীমাই মানুহৰ মনত এক ধৰণৰ ভৰসা জাগ্ৰত কৰিছিল। কিন্তু এই মানুহটোৰ জীৱনত বহুবছৰ ধৰি এটা অদ্ভুত শূন্যতা আছিল। পত্নী দীৰ্ঘদিন আগতেই মৃত্যুবৰণ কৰিছিল, পুতেক…
 - 
				
সৌরদীপ মুখোপাধ্যায় পর্ব ১ : যাত্রার প্রথম সকাল ভোর পাঁচটা নাগাদ কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর–এর চতুর্থ নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হাতে শক্ত করে ধরা ছিল এক পুরনো খাতা—যে খাতায় আমি এতদিন যাবৎ সব ভ্রমণকাহিনি লিখে রেখেছি। শৈশব থেকেই সমুদ্রের প্রতি আমার অদ্ভুত টান, অথচ যতবার সমুদ্র দেখেছি, তা সবই দীঘা কিংবা পুরীর মতো চেনা জায়গায়। এবার প্রথমবার আন্দামান। নামটা শুনলেই আমার কানে বাজে নীল জলের ফিসফিস, ঝড়ের রাতে ইংরেজ জাহাজের ঘণ্টাধ্বনি আর অন্ধকার সেলের ভেতরে হারিয়ে যাওয়া বন্দিদের আর্তনাদ। চেক-ইন শেষে বিমানে উঠে বুকের ভেতর কেমন ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছিল। আমার পাশের সিটে ছিলেন এক বৃদ্ধ দম্পতি—দু’জনেই পোর্ট…
 - 
				
ঋতুপর্ণা দাশগুপ্ত পর্ব ১: নদীর ডাক গাঁটা যেন অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় মোড়ানো ছিল। শীতল দমকা হাওয়া ভোরের আকাশে নীলচে ছাপ রেখে দিত আর দূরে শাল-সেগুনের বনের ফাঁক দিয়ে ভেসে আসত নদীর গুঞ্জন। এই নদীর নাম ছিল কুলেশ্বরী। তবে মাধুরী ছোটবেলা থেকেই জানত, নামটা পুরোটা নয়—এই নদীর আরেকটা নাম আছে, একেবারে গোপন নাম, যা শুধু রাতের আঁধারেই ফিসফিস করে শোনা যায়। মাধুরী তখন দশ বছরের মেয়ে। প্রতিদিন বিকেলে সে বাঁশের ডাল দিয়ে বানানো কঞ্চির দোলনা নিয়ে নদীর ধারে যেত। নদীর পাড়ে বসেই তার পড়াশোনা, খেলাধুলো সবকিছু। কিন্তু এক পূর্ণিমার রাতে, হঠাৎ করেই সে শোনে অদ্ভুত একটা আওয়াজ—যেন নদী গুনগুন করছে। প্রথমে ভেবেছিল…
 - 
				
ঋত্বিক দত্ত পার্ট ১: যাত্রার প্রথম সকাল শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে সমুদ্রের দিকে যাত্রা শুরু করার মুহূর্তটাই যেন এক অদ্ভুত মুক্তি। কলকাতা বিমানবন্দরের জানালার কাচের ওপার থেকে ভোরবেলা আকাশের নীলচে আলো যখন সোনালি হতে শুরু করছিল, তখন আমার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক উৎকণ্ঠা কাজ করছিল। দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন দেখেছিলাম আন্দামান যাওয়া হবে—কেবল হাভলক বা নীল দ্বীপের সমুদ্রস্নান নয়, আমি চেয়েছিলাম খুঁজে বের করতে অজানা এক কোণ, যেখানে পর্যটকদের কোলাহল নেই, নেই রঙিন বিজ্ঞাপনমাখা হোটেলের ছায়া, আছে কেবল নির্জনতার ঘন অরণ্য আর সমুদ্রের শ্বাস। বিমান মেঘ কাটিয়ে নামতে শুরু করতেই জানালার বাইরে নীলের উপর সবুজের ছোপ দেখা গেল। দূর থেকে যেন অসংখ্য…
 - 
				
সুকান্ত আইচ পর্ব ১ পাড়ার নাম মধুবন কলোনি। কলকাতার এদিকেই, গঙ্গার ধার ঘেঁষা এক অদ্ভুত গলি। এই গলির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ—একজন টিউশন মাস্টার। নাম—বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী। বয়স পঞ্চান্ন, কিন্তু চেহারায় বোধহয় এখনও তিরিশের মতো এনার্জি। পরনে খাটো পাঞ্জাবি, চোখে মোটা পাওয়ারের চশমা, আর মাথার উপরে তেল দেওয়া টাকের চারপাশে জেগে থাকা ঝাঁকড়া চুল। বিষ্ণুপদবাবু একসময় কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন, পরে কাজ ছেড়ে দিয়ে “প্রাইভেট টিউশনের দুনিয়া”য় নামেন। আর তারপর থেকেই তার জীবন অন্যদিকে ঘুরে গেল। আশপাশের পাড়ায় নাকি তিনি এমন সব বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন যে পড়ুয়ারা ভিড় জমিয়ে ফেলল। বিজ্ঞাপনে লেখা— “যে যা পড়তে চাও, এসো আমার কাছে। আমি সব শেখাই। অংক,…
 - 
				
সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় পর্ব ১: আগমন কলকাতার শহরে কত রকমের গলি আছে—কোথাও শুধু হালচালহীন ইটের দেওয়াল, কোথাও পুরোনো বারান্দার ফাঁক দিয়ে নীচে ঝুলে থাকা ধুলো-কণার ঝালর, কোথাও অন্ধকার ড্রেনের কানা ধরে বাচ্চাদের খেলা। অথচ শহরের একই শরীরের ভেতরে কতগুলো ভিন্ন আত্মা বাস করে। অর্ণবের জন্য এই শহর ছিল চেনা—ক্লাসে যাতায়াত, কফিহাউসের টেবিলে আড্ডা, কলেজস্ট্রিটের বইয়ের দোকান। কিন্তু যেদিন সে উত্তর কলকাতার সেই গলিতে প্রথমবার ঢুকল, মনে হল অজানা এক শহর খুলে গেছে তার সামনে। মোড়ে একটা ছোট্ট চা-দোকান। দোকানি মিঠুন দা চেনা মানুষ, তবে এখানে দাঁড়িয়ে অর্ণবকে দেখে খানিকটা অবাক। বলল, —“কোথায় যাচ্ছিস? এই রাস্তাটা তোর পথ নয়।” অর্ণব ব্যাগ কাঁধে…