• Bangla - প্রেমের গল্প

    চুপচাপ তোমার শহর

    অনন্যা চক্রবর্তী পর্ব ১ : স্টেশন নম্বর সাত শীতের বিকেল নামছিল একরকম ধীর অনুতাপে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের চতুর্থ প্ল্যাটফর্মটা অকারণে নির্জন হয়ে উঠেছিল — যেন এই শহর, এই ট্র্যাক, এই হুইসেল, এই কুয়াশার ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়েছে কারও একান্ত চিঠির মতো কিছু, যা কেউ পড়ে না, তবুও লিখে যায়। ঈশিতা প্রথম দিন এই স্টেশনের এক কোণে দাঁড়িয়ে ভাবেনি, সে কবে নিজে এই শহরের নির্জনতায় মিশে যাবে। তার বুকে তখনও কলকাতার জ্যাম ছিল, ট্রামলাইনের শব্দ ছিল, আর ছিল ব্যস্ততা — যা ভেতরে ভেতরে তাকে ফাঁপা করে তুলছিল। দার্জিলিং কলেজ থেকে বদলি হয়ে এসেছেন একমাস হলো। কোয়ার্টারে বই খুলে বসতে গিয়ে যেসব…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    রেনকোটে কফি

    ঐশী সেনগুপ্ত পর্ব ১: বৃষ্টির ব্রেক কলকাতার জুলাই মাসের বৃষ্টি ঠিক যেন কাকেই বা কখন চমকে দেবে বোঝা যায় না। সকালে রোদ, দুপুরে গুমোট, আর বিকেল গড়াতেই যেন মেঘ ভিজিয়ে দিয়ে যায় ব্যস্ত মানুষগুলোর অবসরের ফাঁকফোকর। তিথি সিংহরায় ঠিক সাড়ে তিনটে নাগাদ নামল গেটস টেক পার্কের সামনে। তার ল্যাপটপ ব্যাগটা আজ অদ্ভুত ভারি লাগছে, হয়তো বা ভেতরের টেনশনটাই বেশি। আজ যে প্রেজেন্টেশনটা দিতে হবে, সেটা হেড অফিস থেকে সরাসরি এসেছে—এবং সঙ্গে এসেছে তিনটি কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। পা রেখেই সে বুঝল, মেঘ জমছে। “দুপুরের পরে এমন আবহাওয়ায় বরাবরই কিছু একটা হয়,” নিজের মনেই বলে উঠল তিথি। অফিস ক্যান্টিনটা প্রায় ফাঁকা। আরেকটা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    এক কাপ দুঃখ, চিনি ছাড়া

    অর্ণবী চক্রবর্তী পর্ব ১: কলকাতার স্যাঁতসেঁতে হাওয়া আর একলা বারান্দা কলকাতার এই বর্ষা আমি কত বছর দেখিনি? নাকি দেখেছি, শুধু মনে রাখিনি? হাত বাড়ালেই জল পড়ে—ছাদের কার্নিশ থেকে, ল্যাম্পপোস্টের মাথা থেকে, পুরনো কালের জানলা থেকে। আর বারান্দা? ওই একলা বারান্দা, যেটার পাশে একটা চেয়ার থাকে, ধূলো জমা, যে চেয়ারে বাবা বসতেন, কাঁধে গামছা, হাতে চায়ের কাপ, আর চোখে শূন্যতা। সেই শূন্যতা আমার চোখেও এসে পড়ে আজকাল, জানো? এখন আমি একা থাকি। বেলেঘাটার এই পুরনো বাড়িতে। নাম শুনেই বোঝা যায়, রাজবাড়ি নয়, তাও যেন একটা অলিখিত ইতিহাস টিকে আছে দেওয়ালে। মা মারা যাওয়ার পর এই বাড়িটা আমি বেচে দিলাম না কেন,…

  • Bangla - प्रेम कहानियाँ

    ক্যালেন্ডারের বাইরের দিনগুলো

    তিস্তা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্ব ১: প্রথম ইমেল সকালটা শুরু হয়েছিল একেবারে নির্লিপ্তভাবে। স্নান, ব্রেকফাস্ট, মেট্রো, আর তারপর অফিস। কিন্তু সেই নির্লিপ্ততাকে ভেঙে দিল একটা ইমেল—অপরিচিত প্রেরকের, বিষয়বস্তু: “Couldn’t help noticing your post-it habit.” অপরাধ যেন হাতে নাতে ধরা পড়েছে। অনন্যা বসু, এইচআর ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, যাঁর ডেস্ক সবসময় একটা রঙিন ঝকঝকে পোস্ট-ইটের সাম্রাজ্য, প্রথমে একটু চমকে উঠলেন। তারপর হাসলেন। কে এই মানুষটা? অফিসের কেউই হবে। না হলে তো তাঁর ডেস্ক পর্যন্ত নজর পড়ে না। ইমেলের শেষে সিগনেচার ছিল—“Regards, S. Dey, Product Strategy.” অ্যাপ্লিকেশন ওপেন করে লগ-ইন করলেন অনন্যা। “S. Dey”—মানে কি সেটা সুদীপ? না শুভম? স্ট্র্যাটেজিতে তো কয়েকজন নতুন এসেছে। আবার…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চায়ের কাপের নীচে লেখা কবিতা

    ঋদ্ধিমান দাশ  পর্ব ১: কাগজের পাতা, ধোঁয়ার রেখা ক্যাফে কুয়াশার দরজায় টাঙ্গানো পুরনো ঝোলানো ঘণ্টাটা বাজল, আরোহী ঢুকল ধীরে, একহাতে ব্যাগ, অন্য হাতে ফোন। অফিস থেকে সরাসরি আসছে, মাথাটা কেমন যেন ভারী, দিনের ঝাপসা ক্লান্তি তাকে গিলে খেতে চাইছে। কিন্তু এই ক্যাফেটার ভেতরটা যেন অন্যরকম—জানলার কাচ দিয়ে বিকেলের আলো এসে পড়ছে সোনালি ছায়ায়, দেওয়ালে ঝোলানো বইয়ের কভার আর পুরনো বাংলা গানের পোস্টার। তার প্রিয় টেবিলটা—ডান দিকের কোণারটা—আজ খালি। সে বসে, ব্যাগটা পাশে রাখে। ওয়েটার রাজু এসে জানতে চায়, “দিদি, এক কাপ স্পেশাল দার্জিলিং আর কালচার্ড বিস্কুট দেব?” “হ্যাঁ, আর একটা গরম জল দিও, মাথা ধরেছে,” বলে সে, চোখ বন্ধ করে…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    রক্তমারকারির ছায়া

    প্রীতম দে পর্ব ১ দিল্লির এক গোপন ল্যাবরেটরির অন্ধকার ঘরে বসে ছিল একজন মধ্যবয়সী বিজ্ঞানী। নাম তার ডঃ সমরনাথ দে। কাঁধে হালকা ঝুঁকে থাকা শরীর, চোখে পুরু পাওয়ার চশমা, আর মুখে চিরন্তন ক্লান্তির রেখা। কিন্তু এই রাতে তার চোখ জ্বলছে। কারণ, তার সামনে রাখা কাঁচের একটি ছোট্ট ফ্লাস্কের ভেতরে রয়েছে এমন কিছু, যার খোঁজে বহু দেশের গোয়েন্দা সংস্থারা রাতের ঘুম হারাম করেছে। একটি লালচে তরল—একে বলা হয় রেড মারকারি। এই বস্তু নিয়ে বহু গুজব ছড়িয়েছে। কেউ বলে এটি নিউক্লিয়ার বোমা তৈরির গোপন উপাদান। কেউ আবার দাবি করে, এর এক ফোঁটায় সম্পূর্ণ শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ডঃ দে জানেন,…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    পোড়া চিঠির গন্ধ

    সুস্মিতা লাহা পর্ব ১: জানালার ধারে বৃষ্টিটা সন্ধ্যা ছ’টার পর থেকেই নেমেছে, একটানা। জানালার কাঁচে ছোট ছোট ফোঁটা গলে পড়ছে, আর তৃষা একমনে তাকিয়ে আছে বাইরে। ফ্ল্যাটটা নিস্তব্ধ, অন্ধকারে ঢেকে গেছে। ঘরের ভেতরে হালকা হলুদ আলো জ্বলছে, কিন্তু তাতে মন ভরে না আজকাল। ঘড়িতে সাতটা পঁচিশ। অফিস থেকে ফেরার ট্রেনটা আজও মিস করেছে অমিত—এটা আর অবাক করে না তৃষাকে। বরং সে ধরে নিয়েছে, এসএমএসটা কখন আসবে, কখন শুনবে “আজ একটু দেরি হবে”—সে তো জানা কথাই। তৃষা জানে কাজ নয়, কাজের নামে অনন্যা। অমিতের সহকর্মী, ঝকঝকে স্মার্ট, নিখুঁত ঠোঁটের হাসি আর স্মোকি চোখের মেয়ে। সে মেয়েটাকে কখনো দেখেনি, শুধু অনুভব করেছে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ছায়াসঙ্গী

    মৃনাল সরকার পর্ব ১ ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল পাঁচটা ছুঁই ছুঁই। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বানানো সেই পুরনো বাংলোটা একা দাঁড়িয়ে ছিল পাইন আর ওক গাছের ছায়ার নিচে। অরুণাভ যখন গেট খুলে ঢুকলো, সামনের রাস্তায় আর কোনো গাড়ি ছিল না, কোনো মানুষও না। সবকিছু যেন নিঃশব্দে অপেক্ষা করছিল তার আগমনের জন্য। বাংলোর নাম ‘শান্তিনিকেতন’, যদিও এই নামটা শুনে যে শান্তি পাওয়ার আশা করা যায়, তা ভবিষ্যৎ বলবে। সে একটি পুরনো, কাঠের দরজা ধাক্কা দিয়ে খুললো। হালকা কড়চড় শব্দে দরজাটা উন্মুক্ত হল, যেন দীর্ঘ ঘুমের পর কেউ চোখ মেলল। ঘরের ভেতরে ধুলোময় আসবাব, কাঠের মেঝে, আর সিলিং থেকে ঝুলে থাকা একটা মৃত…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    তবু আমি থাকি

    শুভাশিস রায় পর্ব ১: ঘর, সমাজ আর আমি স্নিগ্ধা যখন জানলার ধারে দাঁড়িয়ে থাকত, শহরের কোলাহল তার গায়ে কখনও লাগত না। একসময় যে শহরে সে স্বপ্ন দেখতে শিখেছিল, সেই শহরই এখন যেন প্রতিদিন তাকে প্রশ্ন করে—”তুমি এখনো আছো কেন?” তিন বছর আগে দুর্ঘটনায় মারা যায় তার স্বামী অভিরূপ। দাম্পত্য ছিল শান্ত, যদিও প্রেমে রঙের চেয়ে দায়িত্বের ছায়া ছিল বেশি। একমাত্র ছেলে রুদ্র তখন মাত্র আট বছরে পা রেখেছে। অভিরূপের মৃত্যু সংবাদ শুনে ছেলেটার চোখে কোনো প্রশ্ন ছিল না, শুধু একটা স্থির তাকিয়ে থাকা। সেই চাহনি আজও স্নিগ্ধার স্মৃতিতে খোদাই হয়ে আছে। দেখতে গেলে সমাজ তাকে দয়া করে রেখেছে। “বিধবা মেয়েদের…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চুপকথার চিঠি

    ঈশিতা সেনগুপ্ত জানলার ওপারে কলকাতার উত্তরের এক পুরনো পাড়ায়, লাল ইটের তিনতলা বাড়িটা বহু দিনের সাক্ষী। উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুরনো ফুলদানি, জং ধরা বাইসাইকেল, আর সবথেকে দৃষ্টিনন্দন—একটা ঘন পাতা কদমগাছ। সেই গাছের নিচে প্রতিদিন সকালে বসে এক ছেলেটা, তার কোলে একটা স্কেচবুক, হাতে পেন্সিল—নিস্তব্ধ ঘোরে ডুবে যায় নিজের আঁকায়। ছেলেটির নাম অয়ন। অয়নের জীবনের ছন্দ বড়ো একঘেয়ে ছিল। আঁকাআঁকি আর কদমগাছের নিচে বসে থাকা ছাড়া সে খুব একটা কারো সঙ্গে মেশে না। পড়াশোনার দিন পেরিয়ে, সে এখন ঘরে বসেই গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে। পাড়ায় বহুদিনের বাসিন্দা, তাই কারও চোখে নতুন নয়। তবে হঠাৎ করেই সব বদলে গেল, যেদিন জানালায় সে…