সুশান্ত নস্কর গ্রামটা ছোট হলেও রহস্যে ভরা। চারদিকে সবুজ ধানখেত, মাঝে কাঁচা রাস্তা আর পাড়াগাঁয়ের সেই স্নিগ্ধ নীরবতা—দিনে যত শান্ত, রাতে ঠিক ততটাই অদ্ভুত। শীতের শেষ আর গরমের শুরু, মাঝের সময়ে হঠাৎই গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে লাগল এক ভয়ানক গুজব। মানুষ বলে, মাটির ভেতর থেকে ভেসে আসে কণ্ঠস্বর—কখনো বিলাপের মতো, কখনো প্রার্থনার মতো, আবার কখনো এমন এক অস্পষ্ট আহ্বান, যা শুনে শরীরে কাঁটা দেয়। প্রথম প্রথম দু-একজন গ্রামবাসী শুনলেও পরে অনেকে একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে লাগল। কৃষক নিত্যানন্দ একরাতে গরু ঘরে বাঁধতে গিয়ে শুনেছিল অচেনা কারও কান্না। ভাবল হয়তো পাশের জমির খাঁজে কোনো মানুষ আটকে আছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখে কিছুই…
-
-
দিব্যজ্যোতি নন্দী এক বর্ধমান শহরের শেষপ্রান্তে যে পুরনো রেলগেটটা পড়ে আছে, তার ঠিক পরেই একটা আঁকাবাঁকা রাস্তা সোজা চলে গেছে চৌরাস্তার দিকে। দিনের বেলায় জায়গাটা নেহাতই সাধারণ—দুটো চায়ের দোকান, একটা পানের খুচরো স্টল, আর রাস্তার ধারে পুরনো বিদ্যুতের খুঁটি। কিন্তু রাত নামলেই জায়গাটার চেহারা পাল্টে যায়। এই শহরের বাসিন্দারা জানে, চৌরাস্তার সেই ধূসর শ্মশানঘরটার পাশ দিয়ে কেউ বারোটার পরে হেঁটে যায় না। নতুন থানায় বদলি হয়ে আসা ঋষভ চট্টোপাধ্যায় এসব কাহিনি প্রথম শুনেছিল থানার কনস্টেবল অসীমের মুখে। “স্যার, ওদিকে একবার গেলে পেছনে তাকাবেন না। লোকজন বলে, পেছনে তাকালে নিজের ছায়াও হারিয়ে যায়।” ঋষভ এসব কথা শুনে হেসেছিল। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা…
-
অধ্যায় ১ পুরুলিয়ার ঘন অরণ্য পেরিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে নির্জর বসু যখন সেই পুরনো কটেজটির সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন সূর্য সবে পশ্চিমে হেলে পড়েছে। রোদ আর পাতার ফাঁক দিয়ে আলো-ছায়ার খেলা কেমন একটা বিমুগ্ধ নীরবতা তৈরি করেছিল। শহরের শব্দদূষণ, অফিসের ইমেল, অপ্রয়োজনীয় কথোপকথন—সব ছাড়িয়ে, এই নির্জনতার মাঝে এসে যেন কিছুটা হালকা অনুভব করছিল সে। কটেজটা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভিতরে কী অপেক্ষা করে আছে—চুন-ঝরানো দেওয়াল, কাঁচভাঙা জানালার পাশে গাছের লতানো ডাল, আর এক পাশে একটা পোড়া পোড়া গন্ধ লেগে থাকা আগুন নিভে যাওয়া উনুন। দুলাল কাকা, কটেজের কেয়ারটেকার, চুপচাপ একটা চাবি এগিয়ে দিলেন—চোখেমুখে কোনো উৎসাহ নেই, যেন এক…