সুবীর পাল কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো এক পরিত্যক্ত সংগ্রহশালার দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই ধুলোর এক নিঃশব্দ ঝড় যেন আছড়ে পড়ল অরিত্র মুখার্জীর চোখে-মুখে। দিনের আলো সেখানে পৌঁছায় না, আর বিদ্যুৎ সংযোগও প্রায় নিস্ক্রিয়— কেবল মাঝেমধ্যে পুরোনো টিউবলাইটগুলো একটানা ঝিম মেরে জ্বলে ওঠে আবার নিভে যায়, যেন জীর্ণ শরীরের মাঝে অসহায় প্রাণের শেষ ছটফটানি। অরিত্রর বয়স বয়াল্লিশের কোঠায়, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা আর কপালের মাঝে গাঁথা একটা হালকা কাটা দাগ, যেটা অতীতের কোনো দুর্ঘটনার স্মারক। তিনি কলকাতা হেরিটেজ মিউজিয়ামের প্রধান কিউরেটর, তবে তার আসল পরিচয় একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ হিসেবে— যিনি ইতিহাসের গায়ে জমে থাকা ধুলো সরিয়ে মৃত কালচক্রের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পান না।…
-
-
সর্বাণী দত্ত ১ আষাঢ়ের সন্ধ্যে তখন নামছে, আকাশে স্নানধোয়া মেঘের আনাগোনা। অন্ধকার গ্রাস করছে পশ্চিমের পাটে ধানক্ষেতের প্রান্তর। মেঘে ঢাকা আলোয় সিঁথি গ্রামের পুরনো এক ঘর— খড়ের চাল, কাদার দেওয়াল আর পেছনে বিশাল এক অশ্বত্থগাছ— সেখানে বসে আছে তরসা মণ্ডল। একা। ঝুপ করে সন্ধে নামার আগে সে হাত পা মুছছে কাপড় দিয়ে, রান্নাঘরের মাটি ঘেঁষে বসে। তার ডান হাতে জড়ানো লাল সুতোটা অন্ধকারে যেন একটু বেশি লাল মনে হয় আজ। এই সুতো তার জীবনের অংশ— জন্ম থেকেই ছিল, মা বলত, “সুতোর মানুষ বাঁচে না মরেও না।” সে কথা অনেক আগেই মাটি চাপা দিয়েছে তরসা। তবু যখন খেয়াল করে, এই সুতোটা…