• Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    ছিন্ন মুকুট

    এক রিবা, এক স্বপ্নের মতো জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তার নবগৃহে পা রাখল। অভিজাত পরিবারের নববধূ হিসেবে তার আগমন ছিল যেন এক চলচ্চিত্রের দৃশ্য—দীর্ঘ কার্পেট, সোনালি আলোয় ঝলমলানো হালকা পর্দা, দারুণ সজ্জিত হল এবং চারপাশে ঝলমলে ক্রিস্টাল লাস্টার। তার স্বপ্নের সঙ্গে মিলে গেছে বিশাল বাগান, ফোয়ারার ছোঁয়া, আর রঙিন ফুলের ছটা যা বাড়ির প্রতিটি কর্নারে ছড়িয়ে রয়েছে। সামাজিক দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তার নতুন পোশাক, হীরার গহনা এবং নিখুঁত চেহারা যেন প্রতিদিনের নাট্যশালা। রিবা নিজেকে দেখছিল এক নিখুঁত ছবির অংশ হিসেবে—যেখানে তার জীবন হবে প্রশান্ত, অভিজাত, এবং প্রতিটি মুহূর্ত হবে সুশৃঙ্খল। তবে এই বাহ্যিক গ্ল্যামারের পেছনে লুকানো বাস্তবতা ধীরে ধীরে…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    মেঘের ভেতর রোদ্দুর

    মৌসুমী সেনগুপ্ত এক অর্পিতা সেনগুপ্তের জীবনে যেন এক অচেনা ঝড় নেমে এসেছে হঠাৎই। বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় সম্পর্ক ভাঙনের সিলমোহর এসে পড়ল তার কপালে। চারপাশের মানুষজনের মুখে একরাশ ফিসফিসানি, একরাশ হাহাকার, আর হাজারো প্রশ্ন—সবকিছুই যেন তাকে এক নিমেষে নীচে ফেলে দিল। দিন কয়েক আগেও যে সংসারের স্বপ্ন চোখে ভাসতো, ঘর সাজানোর পরিকল্পনা করতো, মনের গোপনে ভবিষ্যতের ছবি আঁকতো—আজ সেসব কিছুই যেন ধুলোয় মিশে গেছে। রোহিতের সঙ্গে তার সম্পর্কটা শুরু থেকেই খুব মসৃণ ছিল না। রোহিত চেয়েছিল অর্পিতা সংসারে ডুবে যাক, তার নিজের ক্যারিয়ার, নিজের স্বপ্ন যেন গুটিয়ে রেখে দেয়। অথচ অর্পিতা চেয়েছিল নিজের পড়াশোনা, নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে…

  • Bangla - তন্ত্র

    তন্ত্রপীঠের অগ্নিপরীক্ষা

    ১ প্রাচীন কাল থেকে গ্রামটির নাম শিউলিবাড়ি, তবে এই নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে বহু গোপন কাহিনি। গ্রামের উত্তর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষ প্রাচীন তন্ত্রপীঠ মন্দির, যার কাহিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কানে কানে পৌঁছেছে। লাল ইটের গায়ে শ্যাওলা জমে গেছে, ফাটল ধরা প্রাচীর থেকে গাছের শিকড় নেমে এসেছে যেন সময়ের আঁচড়। জনশ্রুতি আছে, এই মন্দির একসময় এক তান্ত্রিক রাজা নির্মাণ করেছিলেন, যিনি দেবীর কৃপা পাওয়ার জন্য নরবলি পর্যন্ত দিতেন। গ্রামের বয়স্করা বলেন, মন্দিরের অন্তঃকক্ষে এক গোপন দরজা আছে, যার ওপারে বন্দি রয়েছে এক অদ্ভুত অলৌকিক শক্তি—শক্তি, যা একবার মুক্তি পেলে সমগ্র অঞ্চলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। দিনের বেলাতেও মন্দিরের ভেতরে…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    টিফিনবক্স

    চৈতালি মুখার্জী ১ ভোর সাড়ে চারটে। দমদমের একটি পুরোনো একতলা বাড়ির উঁচু-নীচু ইটের মেঝেতে পা রাখতেই ঠান্ডা সরে আসে পায়ের পাতায়। মীরা কাঁধে গামছা ঝুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোয়। উনুনে কেরোসিন ঢালার শব্দ, দেশলাইয়ের কাঠি ঘষে আগুন জ্বালায় সে—শব্দ হয় ফিসফিসে, অথচ বুকের ভিতর এই মুহূর্তেই যেন এক ধরণের আগুন জ্বলে ওঠে। চাল ধোয়া জল হাতে করে হাঁড়িতে ফেলে সে, পেঁয়াজ কুচো করে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে—তাড়াহুড়োতে আঙুল কেটে গেলে পাত্তা দেয় না। চাপা নিঃশ্বাস ফেলে সে মাঝে মাঝে—আজ তিনটি নতুন অর্ডার এসেছে, তার মানে ১৩টা টিফিন বানাতে হবে, একটাও যেন কম তেল না হয়, বেশ ঝাল না হয়, আরেকটায় যেন কড়ি…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প - সামাজিক গল্প

    পুজোর পাঁচ দিন

    কুহেলী ধর ১ বাড়ির বারান্দায় রোদ এসে পড়েছে। মেঘলা গামছা দিয়ে হাত মুছতে মুছতে দাঁড়িয়ে রইল জানলার ধারে। নীচে প্যান্ডেলের বাঁশ বেঁধে গাঁদার মালা ঝোলানো হচ্ছে, ঢাকিরা এসেছে, ঢাকের প্রতিটা আওয়াজে যেন বুকের ভিতর কেঁপে ওঠে। ঘরের ভেতরে চায়ের কাপ রাখা, তাতে ধোঁয়া উঠছে না — কারণ মেঘলা আর চা খায় না, কবে যে নিজের পছন্দের তালিকা থেকে চা নিজেই বাদ দিয়েছে, তার ঠিক নেই। বরং, স্বামী রণদীপ আর মেয়ের জন্য রোজ সময়মতো ব্রেকফাস্ট বানানোই এখন তার কাছে ‘প্রিয় কাজ’। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে আটটায় দাঁড়িয়ে, স্বামী অফিসের কথা বলে আজ একটু দেরিতে উঠেছে। মেয়েটা পাশের ঘরে অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত, অথচ…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    অন্তর্গত প্রেম

    ব্রততি সুর অংশ ১: ব্রাশ আর ক্যানভাসের মিলন ধোঁয়া ধোঁয়া আলোর মাঝে, তেলরঙ আর টারপেনটাইনের মিশ্রিত গন্ধ বাতাসে ভাসছিল। পুরোনো কাঠের ঘ্রাণও মিশে গিয়েছিল তাতে, যেন স্টুডিওটা সময়ের সাথে নিজেকেই মুছে ফেলেছে। দেয়ালে রাখা বড় বড় ক্যানভাস, অপরিস্কৃত চিত্রকর্ম আর অসমাপ্ত প্রতিকৃতি গুলি নীরবতার সঙ্গেই আলাপ করছিল। এটি ছিল একান্ত এক জায়গা, যেখানে শিল্পী তার আত্মাকে প্রতিটি ব্রাশের টানে খুলে রাখে। অনির্বাণ রায়, আশি বছর বয়সী এই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, তাদের অন্যতম। তিনি এবারও তার এক অসাধারণ চিত্রকর্মের শেষের দিকের বিস্তারিত কাজ করছিলেন। তার হাত একটু কাঁপছিল, কিন্তু তাতে কোনো হুঁশ ছিল না। চোখের উপর মোটা চশমা হেলে পড়েছিল, কিন্তু তাকে…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    তুলনা

    মোহনা বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যায় ১: জীবনের যাত্রা শুভ্রা ছোটবেলায় অনেক স্বপ্ন দেখত, একটি সুন্দর এবং মুক্ত জীবন কাটানোর। তার ছোট্ট গ্রামটি ছিল একদম সাধারণ, যেখানে দিনের পর দিন একই রকম একঘেয়ে জীবন কাটত। প্রতিটি সকালের শুরু হত পাখির চিরচিৎকারে, এবং সন্ধ্যে আসত নিস্তব্ধতার মাঝে, শুধুমাত্র বাতাসের শব্দ আর দূরের মন্দিরের ঘণ্টার আওয়াজ শোনা যেত। গ্রামে সবাই জানত একে অপরকে, কেউ কাউকে ভুলে যেত না। তবে, শুভ্রার মনে কখনও এমন অনুভূতি জন্মেছিল যে সে যেন এই পরিবেশের বাইরে কোথাও চলে যেতে চায়। সে জানত, জীবন এখানে থেমে থাকবে না, কিন্তু কিভাবে সে তার জীবনের পথ খুঁজে বের করবে, সেটা বুঝে উঠতে পারত…

  • Bangla - তন্ত্র

    তান্ত্রিকের অভিশাপ

    শুভেন্দু বসাক তান্ত্রিকের অভিশাপ শুভেন্দু বসাক নিষিদ্ধ শক্তি শুভ, এক তরুণ তান্ত্রিক ছাত্র, জীবন থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করছিল। তার সাধনাতে গভীরতার জন্য সে ছটফট করছিল, দিনের পর দিন চূড়ান্ত নিষ্ঠার সাথে তন্ত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন করছিল। সে জানত যে তার ভিতরের শক্তি শুধু তাকে নয়, পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে, যদি সে সেই শক্তির সঠিক ব্যবহার জানত। কিন্তু কেউ জানত না, যে তার তন্ত্র সাধনা শুধু এক ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এর পরিণতি তাকে এক অন্ধকারে নিয়ে যাবে, যা সে কখনো কল্পনা করতে পারেনি। তন্ত্র সাধনায় দীক্ষিত হওয়ার পর, শুভ একদিন শিখে গেল একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মন্ত্র—এটি তার সাধনা…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    অপরাধীর মুখ

    মৌমিতা ঘোষ অধ্যায় ১: প্রথম সংকট অঞ্জলী রায় সকালে অফিসে পৌঁছাতেই এক তরুণ পুলিশ অফিসার তার সামনে এসে দাঁড়াল। তার হাতে একটি ফাইল, আর চোখে তীব্র উদ্বেগ। “স্যার, ডিএসপি ম্যাম, আপনার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কেস এসেছে।” অঞ্জলী দ্রুত ফাইলটি খুললেন। ফাইলের মধ্যে ছিল এক নারীর মৃতদেহের ছবি, এবং সাথে কয়েকটি প্রতিবেদন। ছবিতে ওই নারীর চোখ বন্ধ, মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই, এবং শরীরের চারপাশে অসংখ্য রক্তের দাগ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নারীর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবে তার মৃত্যু সন্দেহজনক। এই কেসের পেছনে কোনো অপরাধী রয়েছে কিনা, তা জানার জন্য তদন্ত শুরু করতে হবে। অঞ্জলী একটি গভীর শ্বাস নেন।…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    সহেলীর আত্মকথা

    জয় সাহা গলির মেয়ে সহেলীর জন্ম এক ছোট্ট শহরের এক অজপাড়া গলিতে। সে ছিল এক সাধারণ মেয়ে, যেখানে সমাজের চোখে তার কোন বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। তার জীবন ছিল একেবারে নিরস, রুটিনমাফিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কাজ ছিল ঘরের কাজ, মা-বাবার সহায়তা, ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা, আর মাঝে মধ্যে স্কুলে যাওয়া। তবে, সহেলী কখনোই এই নির্ধারিত জীবনটিকে সঙ্গী করতে পারেনি। তার মন ছুটতে চেয়েছিল দূরে, তার চোখ ছিল নতুন দিগন্তে, যেখানে জীবনের অনেক সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সে জানত, সে তার ছোট্ট গলির মধ্যেই বন্দী। সেই গলির প্রাচীরের বাইরের পৃথিবী তার জন্য এক কল্পনা মাত্র। সহেলী ছিল খুব চুপচাপ। একা থাকলেই…